
পুলিশি অভিযানে ধরা হয় ইয়াবা ব্যবসায়ী। জব্দ করা হয় ইয়াবা ও সেটি বিক্রির টাকা। তবে গোপনে রফাদফা করে ভাগিয়ে নেন বাড়তি আরও কিছু টাকা। নিজেদের কাছে জব্দ ইয়াবার পাশাপাশি প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা রেখে ২০ হাজার করে ৪০ হাজার টাকা সোর্সসহ তাদের সহযোগীদের ভাগও দেন তারা। এরপর সেই টাকা ও ইয়াবা এনে রাখা হয় সরকারি পুলিশ ব্যারাকে!
রক্ষক হয়েও ভক্ষকের এমন কাণ্ড করে মাত্র দু’দিন নির্ভার থাকতে পারলেও তৃতীয় দিনের মাথায় তাদের ঠিকই ধরা পড়তে হলো সহকর্মী আরেক পুলিশ সদস্যদের হাতে। জেরার মুখে স্বীকার করে নিয়েছেন ঘটনার আদ্যোপান্ত। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় আসামি থেকে উদ্ধার করা ইয়াবা ও ইয়াবা বিক্রির টাকা। এ ঘটনায় বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে প্রতারণামূলক কাজে জড়িত থাকায় ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয় তিন পুলিশ কনস্টেবলকে। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অভ্যন্তরে। যদিও তা নিয়ে মুখ খুলছেন না কেউ-ই।
এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের সাতাকানিয়া থানা পুলিশের ঢেমশা তদন্ত কেন্দ্রে। ৬ আগস্ট পুলিশি অভিযানে আটকের পর মাদক ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দিয়ে টাকা ও ইয়াবা আত্মসাতের ঘটনায় তিন পুলিশ কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করা হয় ৮ আগস্ট। তবে ঘটনাটি জানাজানি হয় ৯ আগস্ট রাতে।
গ্রেপ্তার তিন পুলিশ কনস্টেবল হলেন— সাতকানিয়া থানার ঢেমশা তদন্ত কেন্দ্রের কনস্টেবল শাহ মোহাম্মদ হাসান (২৭), আরাফাত নাজিম উদ্দীন (২৬) ও বিমল চাকমা (৪৬)।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঘটনা অস্বীকার না করলেও মন্তব্য করতে রাজি হননি সাতকানিয়া থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন। তবে জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত ৬ আগস্ট ঢেমশাস্থ নাপিতের চর এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে তদন্ত কেন্দ্রের তিন কনস্টেবল শাহ মোহাম্মদ হাসান, আরাফাত নাজিম উদ্দীন ও বিমল চাকমা (৪৬)।
এ সময় আসামিদের হেফাজত থেকে মাদক ও মাদক বিক্রির টাকা জব্দ করেন তারা। তবে তা ওসিসহ সিনিয়র কর্মকর্তাদের না জানিয়ে নিজেরাই আত্মসাৎ করে এবং ওই মাদক ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেন এ তিন কনস্টেবল।
বিষয়টি টের পেয়ে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নির্দেশে ঢেমশা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই জাহাঙ্গীর আলম তদন্তে নেমে এর সত্যতা পান। এমনকি অভিযুক্ত তিন কনস্টেবল মাদকের টাকা আত্মসাৎ ও মাদক ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নেন।
পরবর্তীতে কনস্টেবল শাহ মোহাম্মদ হাসানের দেখানো মতে ঢেমশা তদন্ত কেন্দ্রের ব্যারেক থেকে তার ট্র্যাংক থেকে নীল প্যাকেটে মোড়ানো ৩০০ পিস ও একটি সাদা পলিথিনে রাখা ১৬৫ পিসসহ মোট ৪৬৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে পুলিশের লোগোযুক্ত এক জোড়া হ্যান্ডকাফ, নগদ ৫০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল সেট জব্দ করা হয়। একই ভবনে কনস্টেবেল আরাফাত নাজিম উদ্দীন থেকে দুটি ব্ল্যাংক চেক, নগদ ৩১ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। একই সময়ে কনস্টেবল বিমল চাকমার পরিহিত প্যান্টের পকেট থেকে নগর ৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তিন পুলিশ কনস্টেবল জানিয়েছেন, তারা গত ৬ আগস্ট ঢেমশাস্থ নাপিতের চর এলাকার বেলাল হোসেনের ভাড়া বাসা থেকে সোর্স সোলায়মানকে সঙ্গে নিয়ে বেলালকে ৩০/৪০ পিস ইয়াবা ও নগদ এক লাখ টাকাসহ আটক করে তাদের হেফাজতে নেন। তারা সোর্স সোলায়মানের বুদ্ধিতে রমজান আলী নামের এক মাদক ব্যবসায়ী থেকে ২০০ পিস ইয়াবা কেনার কথা বলে তাকে ওই বাসাতে আসতে বলেন। যদিও সেখানে রমজানের ছেলে আরাফাত ২শ’ পিস ইয়াবা নিয়ে এলে তাকেও আটক করেন তিন কনস্টেবল।
তারপর আটক বেলাল ও আরাফাতকে নিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশা করে মৌলভীর দোকান এলাকায় চালক নেজামের মাধ্যমে ২০০ পিস ইয়াবাসহ আটক করে কিশোর আরাফাতকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন তিন পুলিশ কনস্টেবল।
এ সময় বেলালের বাসা থেকে উদ্ধার করা ১ লাখ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা এবং তার থেকে ২০ হাজার টাকা সোর্স সোলায়মানকে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের দুইজনকেও ছেড়ে দেন তারা। আদায় করা বাকি ১ লাখ ১০ হাজার টাকার মধ্যে কনস্টেবল হাসান ৫০ হাজার, নাজিম ৩০ হাজার ও বিমল চাকমা ৩০ হাজার টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়।
এসব ঘটনার পর সাতকানিয়া থানার ঢেমশা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এস আই জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে তিন পুলিশ কনস্টেবল ও ৫ মাদক ব্যবসায়ীসহ মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এদের মধ্যে পুলিশ সোর্স সোলায়মান, ছেড়ে দেওয়া বেলাল ও আরাফাতও রয়েছেন। মামলার পরপরই অভিযুক্ত তিন পুলিশ কনস্টেবল হাসান, নাজিম ও বিমলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পাঠকের মতামত