প্রকাশিত: ১৭/০৯/২০১৭ ৬:৫২ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:২৬ পিএম

নিউজ ডেস্ক::
গত ১৫ দিনে বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ড এলাকায় ৪০০ জনেরও বেশি শিশু জন্ম নিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে। রোহিঙ্গাদের অবর্ণনীয় দুর্দশায় সঙ্গে নতুন করে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নবজাত এসব শিশুদের উপযুক্ত স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে।

মায়নমারের রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দেশটির সেনাবাহানী ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা চরম পাশবিকতা চালাচ্ছে। তারা রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা করছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, নারীদেরকে ধর্ষণ করছে। ভয়াবহ এই সহিংসতা থেকে বাঁচতে ৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

রোহিঙ্গাদের চলমান এই পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ ‘মানবিক বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেছে। সাহায্য সংস্থাগুলোও প্রকাশ করছে চরম হতাশা। পালিয়ে আসাদের মধ্য প্রায় ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু এবং রাস্তা, খোলা আকাশের নিচেই শিশুদের জন্ম হচ্ছে।

সদ্য জন্ম দেয়া মায়েদের একজন সুরিয়া সুলতান (২৫)। তিনি ৫০০ গজ দীর্ঘ একটি কর্দমাক্ত মাঠে অপেক্ষা করছিলেন। তার সংকোচন বেড়ে গেলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সদস্যরা তাকে একটি নৌকায় নিয়ে যায়। সেখানে একটি শাড়ি দিয়ে অস্থায়ী শামিয়ানা তৈরি করে দেয়া হয় এবং এর ভিতর তিনি তার মেয়ে আয়েশাকে জন্ম দেন। অসুস্থ এবং ক্লান্ত মা ও শিশুর চিকিৎসার জন্য নয়াপাড়া ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।

ক্যাম্প অফিসার মোহাম্মদ মমিনুল হক জানান, এই ধরনের আরো অনেক রোগী তারা পেয়েছেন এবং তাদের অবস্থা ‘গুরুতর’।

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের সাহায্য করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। কিন্তু পরিস্থিতি আমাদের ক্ষমতার বাইরে।’

সন্তান জন্মদানের সময় এসব মায়েদের অনেকে মারা যায়। অন্যরা শুধু অসহায় অবস্থায় সন্তান জন্ম দিচ্ছে এবং অসুস্থতা ও ক্যাম্পের খারাপ অবস্থার কারণে তাদের শিশুরা মারা যাচ্ছে।

মাসুমা বাহাদুর (২৮) তার দিন বয়সী ছেলেকে হারিয়েছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘তার ছেলের গায়ে খুব জ্বর ছিল এবং কম্পন কোন মতেই থামছিল না।’

তার স্বামী আবু বকর (৩৫) সাহায্যের খোঁজে গিয়েছিলেন। কিন্তু যখন তিনি ফিরে আসেন তখন শিশুটি আর নেই। সেখানকার আশেপাশের সব জায়গা অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে নির্মাণ করায় মৃতদেহ দাফন করারও কোনো জায়গা নেই। এ কারণে আবু বকর নিকটবর্তী একটি বনের ভিতর ছোট একটি গর্ত খুঁড়ে সেখানে ছেলেকে দাফন করেন।

অন্য আরেকজন নারী তার মৃত শিশুকে কিভাবে দাফন করবেন তা ভেবে পাচ্ছিল না। মৃত শিশুকে দুই দিন তার সঙ্গে বহন করার পর তিনি তাকে নাফ নদীতে ফেলে দিলেন। তিনি তার এই কষ্টের গল্প বলার সময় তার গাল বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরতে থাকে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুর কাদির আহমেদ বলেন, যথেষ্ট খাবার ও পানির অভাবের কারণে এসব মায়েরা তাদের শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াতে পারছেন না।

নয়াপারা ক্যাম্পে আসা দুর্দশাগ্রস্থ এক রোহিঙ্গা পুরুষের অসহায়ত্বের কথা বর্ণনা করছিলেন জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র কর্মকর্তা ভিভিয়ান টান।

তিনি বলেন, ‘একটি কম্বল দ্বারা আচ্ছাদিত এই ছোট ঝুড়ি নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। … তিনি এটি খোলেন এবং আমাদের দুটি ক্ষুদ্রাকায় শিশু দেখান। পলায়নরত অবস্থায় তার স্ত্রী জমজ এই শিশুদের জন্ম দিয়েছিলেন।’ শিশুদের একজন জন্মের পরপরই মারা যায় বলে তিনি জানান।

জাতিসংঘ শিশু সংস্থা ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক এন্থনি লেক বলেন, ‘সীমান্তের উভয় অংশে থাকা নারী ও শিশুদের জন্য জরুরি সহায়তা ও সুরক্ষা প্রয়োজন।’

যদিও ইউনিসেফ বাংলাদেশ অংশে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারছেন। কিন্তু মায়ানমার অংশে সাহায্য কর্মীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য তারা কিছুই করতে পারছেন না।

মায়ানমার বাহিনীর অবরোধের মুখে গত ২৪ আগস্ট মধ্যরাতের পর রোহিঙ্গা যোদ্ধারা অন্তত ২৫টি পুলিশ স্টেশনে হামলা ও একটি সেনাক্যাম্পে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এতে মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়।

এরপর রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অভিযান শুরু করে মায়ানমারের সেনাবাহিনী। তাদের সঙ্গ যোগ দেয় দেশটির বৌদ্ধ চরমপন্থীরাও। অভিযানে হেলিকপ্টার গানশিপেরও ব্যাপক ব্যবহার করে মায়ানমার সেনাবাহিনী। সীমান্তে পুঁতে রাখায় হয় স্থলমাইন।

মায়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা, কুপিয়ে হত্যা, নারীদের গণর্ষণের অভিযোগ উঠে। তারা রোহিঙ্গাদের হাজার হাজার ঘরবাড়ি এবং একের পর এক রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। তাদের হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পায়নি বয়োবৃদ্ধ নারী এবং শিশুরাও। গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা এই সহিংসতায় প্রায় ৩ হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে।

জেনেভায় সংবাদ সম্মেলন করে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) মুখপাত্র ভিভিয়ান জানান, মায়ানমারের রাখাইনে কমপক্ষে এক হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। জাতিগত নিধনযজ্ঞের মুখে প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

পাঠকের মতামত

দুই রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্র বানাতে ভৈরবে এসে আটক

জাতীয় পরিচয়পত্র বানাতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসেছিলেন দুজন রোহিঙ্গা। ...

মিয়ানমারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর বিদ্রোহীদের দখলে

মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা দেশটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়েছে। মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তা’আং ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতির দাবি

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতিসহ বিভিন্ন দাবিতে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ...