প্রকাশিত: ২৬/০৮/২০১৭ ৭:২০ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:৩৪ পিএম

শেখ আবদুল্লাহ

‘তেল জ্বলে না, রক্ত জ্বলে চালকের ফুসফুসে।’ বলছি রিকশার কথা, যা চলে চালককে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে। আর সেই রিকশার চালক যদি হন ৬০ থেকে ৭০ বছরের কোনো প্রবীণ? যাদের পা চলে না, জীবনের তাগিদে অচল হয়ে আসা পায়ে প্যাডেল ঘুরিয়ে রিকশা চালাতে বাধ্য হচ্ছেন যারা, রাজধানী ঢাকায় তাদের সংখ্যা বাড়ছে। কেউ এসেছেন নদীভাঙনের ফলে, কারোর আসার পেছনে রয়েছে হাওরের ফসলডুবি। যে পিতা পরম যত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে সন্তানদের লালন-পালন করেছেন, বড় করেছেন তারাও দায় নেয় না।

সম্প্রতি সরেজমিনে ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার কমলাপুর রেলস্টেশনের বাইরে শ’খানেক রিকশা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। বিভিন্ন বয়সী রিকশাওয়ালার কেউ কেউ চায়ের দোকানে বা যাত্রী ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে চা-বিড়ি বা পান খাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আছেন যাত্রীর অপেক্ষায়। এর মধ্যে একজন রিকশাওয়ালা আমছর আলী। বয়স জানালেন ৭০ বছর। তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা এই রিকশাচালকের বাড়ি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার সরদারকান্দি গ্রামে। ছেলেরা ভরণপোষণ দেয় না_ এ কথা বলতে যেন তার একটু দ্বিধা হলো। বললেন, ‘ছেলেরা তাদের সংসার চালাতেই হিমশিম খায়। আমাকে আর কী দেখবে!’ এ জন্য পাঁচ বছর ধরে ঢাকা শহরে রিকশা চালাচ্ছেন। রিকশার ভাড়া,

নিজের খাওয়া-থাকা ইত্যাদি সব খরচ বাদে দিনে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা আয় হয় তার। এর থেকে কিছু টাকা জমান আর কিছু টাকা পাঠান গ্রামে স্ত্রীর খরচ বাবদ।

রিকশা চালানো যথেষ্ট কায়িক পরিশ্রমের কাজ। শারীরিক শক্তির ওপর নির্ভর করে এর গতি। কিন্তু রাজধানীতে এমন আমছর আলীর মতো অনেক রিকশাচালকই দেখা যাচ্ছে, যারা বয়সের ভারে ন্যুব্জ। বৃদ্ধ এসব রিকশাচালকের শারীরিক শক্তি যথেষ্ট নেই। অনেকেই ভুগছেন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায়। তারপরও জীবন চালাতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তিন চাকার এই যান চালাচ্ছেন তারা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কয়েকজন বৃদ্ধ রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেঁচে থাকার নূ্যনতম প্রয়োজন মেটানোর বিকল্প কোনো ব্যবস্থা তাদের নেই। জমি নেই, নেই সঞ্চয়। এমনকি অনেকের সন্তানের মতো আপনজন তাদের পাশে নেই। কারও কারও সন্তানরাও জীবন চালাচ্ছেন অনেক কষ্টে। এমনই একজন বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার মোহাম্মদ আলী। তার সঙ্গে আলাপ হলো গত রোববার দুপুরের দিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের সামনে। সকাল থেকে দারুণ রোদ ছিল সেদিন। তপ্ত দুপুরে রিকশার সিটে দুই পা তুলে একটু বিশ্রাম করছিলেন। কথা বলতে চাইলে নেমে দাঁড়ালেন পাশে। যমুনার ভাঙনে বাড়িঘরহারা এই মানুষটি আশ্রয় নিয়েছিলেন দুপচাঁচিয়ায়। সেখানেই তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। বড় ছেলেটি আজন্ম রোগা। ছেলেমেয়েদের সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। তারা সবাই চায়, তাদের ষাটোর্ধ্ব বাবা আর রিকশা চালানোর মতো কঠিন কাজে না থাকুক। মাঝে বছরখানেক রিকশা চালাননি মোহাম্মদ আলী। মাস ছয়েক হলো আবার রিকশা চালানো শুরু করেছেন। কারণ, ঘরে বসে থাকতে থাকতে বেশ কিছু টাকা ঋণ হয়ে গেছে তার। ঋণটা শোধ করতে পারলেই আবার ফিরে যাবেন গ্রামে।

বয়োবৃদ্ধদের এমন কঠিন কায়িক শ্রমে যুক্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক অনুপম সেন বলেন, ‘এটা আমি নিজেও লক্ষ্য করছি। শুধু ঢাকায় নয়, চট্টগ্রামেও বয়স্ক রিকশাচালকের সংখ্যা বাড়ছে।’ চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপকের মতে, বয়স্কদের রিকশা চালানোর মতো কঠিন কাজে যুক্ত হওয়ার কারণ গ্রামীণ সমাজে নৈতিক মূল্যবোধগুলো শিথিল হয়ে যাওয়া। আর্থিক অসঙ্গতি তো বাড়ছে এবং কমছে বয়স্কদের দায়িত্ব নেওয়ার মনোবৃত্তি। সামগ্রিকভাবে দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি হলেও সমাজে ব্যবধান বাড়ছে। একটি শ্রেণি ধনী হচ্ছে, আবার আরেক শ্রেণি ভিটেমাটি হারিয়ে লুম্পেন প্রলেতারিয়েতে রূপান্তরিত হচ্ছে। শিল্পায়ন এখনও প্রধানত পোশাকশিল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। কৃষিকাজেও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ছে এবং শ্রমিকের প্রয়োজন কমছে। ফলে অনানুষ্ঠানিক কাজ থেকে দরিদ্র মানুষ যা আয় করে, তা দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতেই খরচ হয়ে যায়। সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অনেক ব্যয় করছে ঠিকই, কিন্তু তার সুষ্ঠু বণ্টন না হওয়ায় অনেক প্রাধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তি সেসব সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোতে এসে রিকশা চালানোর মতো কাজ করছেন।

ঢাকায় কত রিকশা চলে, এসব রিকশার চালক কারা_ এ তথ্য নেই সরকারি কোনো দপ্তরে। দুই সিটি করপোরেশনের কাছেও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ২০১৫ সালের প্রকাশনায় বলা হয়েছে, ঢাকার রাস্তায় পাঁচ লাখের বেশি রিকশা চলাচল করে। প্রায় দেড় কোটি মানুষের এই শহরে চলাচলের ৪০ শতাংশই হয় রিকশায়। ফলে রিকশাচালকদের কত ভাগ ৬৫ বছরের বেশি বয়সের, তার হিসাব বের করা যায় না। তবে যেসব জায়গায় রিকশা স্ট্যান্ড রয়েছে, সেখানে তরুণ-যুবক-মাঝবয়সীদের পাশাপাশি অবশ্যই কয়েকজন বয়স্ক, অশীতিপর রিকশাচালক পাওয়া গেছে। কোথাও ১০ জনে একজন রিকশাচালকের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। আবার কোথাও ১০ জনে দুই বা তিনজন রিকশাওয়ালা দেখা গেছে, যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি। অর্থাৎ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ রিকশাচালকেরই বয়স ষাটের বেশি।

রাজধানীর মেরাদিয়া মধ্যপাড়ার রিকশা গ্যারেজ শিল্পী গ্যারেজের মালিক মো. সুমন জানান, তার গ্যারেজে ৩০টি রিকশা আছে। এসব রিকশা যেসব চালক চালান, তাদের মধ্যে ছয় থেকে সাতজনের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। সমকালের সঙ্গে আলাপে সুমন বলেন, অনেক বয়স্ক লোকই রিকশা চালাতে আসেন। অনেকে তো বছরের পর বছর চালাচ্ছেন। আবার অনেকে এসে ছয় মাস বা এক বছর চালিয়ে চলে যান। অর্থনৈতিক সমস্যার কারণেই মূলত এই বয়স্করা রিকশা চালাতে আসেন। একই ধরনের তথ্য দিলেন ধলপুরের আরেক রিকশা গ্যারেজের মালিক সহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার গ্যারেজে ছয়জন বুড়ালোক আছেন। তাদের মধ্যে দু’জন শক্তসমর্থ। তারা অনেক দিন রিকশা চালান। আর বাকিরা একবেলা-আধা বেলা চালাতে পারেন। তিনি বলেন, একজন তো এসে কান্নাকাটি করে রিকশা নিয়েছেন। লোকজন বিপদে না পড়লে রিকশা চালায় না। শতকরা ২০ জনও পাবেন না, যারা রিকশা চালানোকে পেশা মনে করেন। কম বা বেশি সব বয়সের লোকই বাধ্য হয়ে রিকশা চালাতে আসেন। একেকজনের বিপদ একেক রকম। তবে অধিকাংশের অর্থনৈতিক সমস্যা, মানে আয়ের অন্য কোনো উপায় না থাকায় রিকশা চালান।

দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীর গুলিস্তান, সদরঘাট, মতিঝিল, শাহবাগ, তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার, সাতমসজিদ রোডসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ রকম অনেক বয়স্ক লোককে রিকশা চালাতে দেখা গেছে। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা এলাকার আবদুল নূর মিয়া চার বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন। তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ী গ্যারেজ থেকে রিকশা নিয়ে আশপাশের এলাকাগুলোতেই চালান তিনি। নূর মিয়া ট্রেনে গফরগাঁও থেকে ঢাকায় এসে সারাদিন রিকশা চালিয়ে রাতে বাড়ি ফিরে যান। পরে একদিন বাড়িতে কাটিয়ে আবারও ঢাকায় আসেন। এভাবে মাসের ১৫ দিনে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার হয় তার। তবে স্ত্রী অসুস্থ হওয়ায় এবং নিজের জন্যও প্রচুর ওষুধ কিনতে হয় বলে হাতে কোনো টাকা-পয়সা থাকে না। তোপখানা রোডে প্রতিদিনই রিকশা চালাতে দেখা যায় সত্তরোর্ধ্ব আফজাল মিয়াকে।

আফজাল মিয়া, আমছর আলী, মোহাম্মদ আলী ও আবদুল নূর মিয়ার কেউই সরকারের বয়স্ক-ভাতা পান না। তাদের স্ত্রীরাও এ ধরনের সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কেচুয়াকুড়া গ্রামের আজহার আলীর সঙ্গে আলাপ হলো জাতীয় জাদুঘরের সামনে। ৬৬ বছর বয়সী আজহার আলী থাকেন কামরাঙ্গীরচরের রিকশা গ্যারেজে। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। ছেলেরা ছোট। ভিটা ছাড়া কোনো জমি নেই। তাই রিকশা চালিয়েই সংসার চালান। আজহার আলীর ঘরেও পেঁৗছায়নি সরকারি কোনো সহায়তা।

সরকার ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছর থেকে ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক পুরুষ ও ৬২ বছরের বেশি বয়স্ক নারী নাগরিককে বয়স্ক-ভাতা দিয়ে আসছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে এ ভাতা প্রদান পরিচালিত হয়ে আসছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সারাদেশে ৩১ লাখ ৫০ হাজার জনকে বয়স্ক-ভাতা দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বয়স্ক-ভাতার সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে ৩৫ লাখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে বয়স্ক-ভাতা দিয়ে থাকে সরকার। অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে চলতি অর্থবছরে এক হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মে মাসে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, গত জুন শেষে দেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬০২ ডলার। আর গড় আয়ু হয়েছে ৭১ বছর ছয় মাস।

অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হানের কাছে এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সমাজে এখনও একটি শ্রেণি রয়েছে, যাদের সুনির্দিষ্ট বা নিয়মিত আয়ের নিশ্চয়তা নেই। ফলে নিজের প্রয়োজনে অনেকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। আবার কর্মসংস্থান ও আয়ের অভাবে পরিবারে ভাঙন হচ্ছে। এ জন্য বয়স্কদের দেখাশোনা এখন একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে বয়স্কদেরও রিকশা চালানোর মতো কায়িক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজের সুযোগ থাকলেও মজুরি খুবই কম, যে কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ দিন আনে দিন খায় জীবনযাপন করে। অনেকে পুরো জীবন পরিশ্রম করেও কিছু সঞ্চয় করতে পারে না। আবার তাদের সন্তানরাও দারিদ্র্যের কবল থেকে বের হতে পারে না বলে বৃদ্ধ মা-বাবার সহায় হতে ব্যর্থ হয়।

পাঠকের মতামত

বাংলাদেশ ও ড. ইউনূসকে শুভেচ্ছা ট্রাম্পের, সম্পর্ক জোরদারের বার্তা

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণ ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন যুত্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ...

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কিত প্রস্তাব গৃহীত

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ মালয়েশিয়া ও ফিনল্যান্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে ...

৯০ দিনের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে স্টারলিংক চালুর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

৯০ দিনের মধ্যে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চালুর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ...

জুলাই আন্দোলনে আহতদের পাশে থাকবে সেনাবাহিনী : সেনাপ্রধান

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-ছাত্রীদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার ও নৈশভোজ অনুষ্ঠানে কথা বলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ...