প্রকাশিত: ২৪/০২/২০১৯ ৭:১৬ এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া মাস্টারপাড়া গ্রামের ফজল কবির হত্যা মামলাকে পুঁজি করে বাদী তাহেরা বেগম ও তার ছেলে আনিছুল কবিরের বিরুদ্ধে নিরীহ লোকজনকে হয়রানী ও বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকার সর্বত্র গ্রেফতার আতঙ্কে সাধারণ মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। হয়রানি থেকে রেহাই পাচ্ছে না রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পাশাপাশি ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী, শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন নিরীহ মানুষকে গ্রেফতারের বিভিন্ন হুমকি দিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হত্যা মামলা হওয়ার পর থেকে এলাকার ব্যবসায়ী ও স্বচ্ছল ব্যক্তিদের বাছাই করে মামলার হুমকি দেয়া হচ্ছে। আনিছ মনগড়া নানা অভিযোগ এনে টাকা আদায় করে যাচ্ছে। কেউ দাবিকৃত টাকা দিতে না পারলে মামলা দিয়ে চালান দেয়ার হুমকি দিচ্ছে আনিছ।

হত্যা মামলায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি হোক এটা এলাকাবাসির কাম্য, তবে প্রশাসনকে মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে নিরীহ লোকজনকে আটক করিয়ে হয়রানীর ঘটনায় এলাকাবাসিকে ভাবিয়ে তুলেছেন। সর্বশেষ গত (২১শে ফেব্রুয়ারি) বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়ে মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে পুলিশ দিয়ে আটক করান। পরে পুলিশ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার কোন সম্পৃক্ততা পায়নি বলে জানান, ওই মিজানের পরিবার।

এলাকাবাসি ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, খরুলিয়ার মাস্টারপাড়া গ্রামের ফজল কবির ও নূর আহম্মদের সঙ্গে খরুলিয়া সুতার চর এলাকার একটি জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় সদর থানায় মামলাও হয়েছে।

শনিবার (২৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে ফজল কবির বিরোধপূর্ণ জায়গায় ঘর নির্মাণ করতে গেলে একই এলাকার নুর আহাম্মদের লোকজন বাধা দেয়। এর জের ধরে উভয় পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ঘটনাস্থলেই ফজল কবির গুরুতর আহত হন। পরে এলাবাসী তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করান।

পরে (২৭ জানুয়ারী) রবিবার ভোর রাত তিনটার দিকে সদর হাসপাতালে মারা যান ফজল কবির। তিনি খরুলিয়ার মাষ্টার পাড়া গ্রামের মৃত আসাদ আলীর ছেলে। এঘটনায় নিহতের স্ত্রী তাহেরা বেগম বাদী হয়ে একই এলাকার নুর আহম্মদ, রফিকসহ ৮ জনের নাম এজাহারে উল্লেখ পূর্বক আরো অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করছেন, পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) মোহাম্মদ আরিফ ইকবাল।

আরো জানা গেছে, এই হত্যা মামলায় এজাহার নামীয় একজন আসামী গ্রেফতার হন এবং ৬ জন এজাহার নামীয় আসামী মহামান্য হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন এবং একজন আসামী পলাতক রয়েছেন। এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানায়, ওই হত্যা মামলার বাদী তাহেরা বেগমের ছেলে আনিছুল কবিরের বিরুদ্ধে ডজনাধিক মামলা রয়েছে। ওইসব মামলার মধ্যে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে ২টি মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানাও রয়েছে। আনিসুল কবিরের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি নিহতের ছেলে আনিছুল কবির এই হত্যা মামলাকে পুঁজি করে অজ্ঞাতনামা আসামীর তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্তির হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকার বিভিন্ন নিরীহ লোকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করছে। তার দাবীকৃত টাকা না দিলে পুলিশকে দিয়ে আটক করিয়ে হয়রানীও করছে। গত পক্ষকাল ধরে আনিছ এধরনের কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ায় অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।

অভিযোগে আরো জানা গেছে, ফজল কবির হত্যা মামলায় জড়িত বলে পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে খরুলিয়া এলাকার শাহীন ও ফারুক নামের দুইজনকে আটক করান। কিন্তু এই ব্যক্তিদ্বয়ের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা সম্পর্কে কোন ক্লো ও হত্যা মামলায় সম্পৃক্ত না থাকার সত্যতা পেয়ে আটক ওই দুই নিরীহ ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এধরনের অসংখ্য নিরীহ মানুষের কাছ থেকে হুমকি দিয়ে অথনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে আনিছ। সর্বশেষ তার শিকার হয়েছেন মাষ্টারপাড়ার মৃত মৌলভী এরশাদের ছেলে মিজানুর রহমান।

আনিছের দাবীকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে একইভাবে প্রশাসনকে ভুলতথ্য দিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২১ই ফেব্রুয়ারী) রাতে কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ দ্বারা আটক করান বলে জানিয়েছেন মিজানের পরিবার। কিন্তু তার বিরুদ্ধেও হত্যা মামলা সম্পর্কে জড়িত না থাকার প্রমাণ পান পুলিশ। অবশ্য ওই মিজানুর রহমানকে অন্য একটি মামলার আসামী হওয়ায় তাকে আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে।

আটক মিজানের ভাই হাবীব উল্লাহ হাবীব বলেন, হত্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে সে (আনিছ) আমার ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা দাবী করে। দাবীকৃত টাকা না দেয়ায় আনিছ ক্ষুদ্ধ হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে মিজানকে আটক করান। এধরনের ঘটনা উক্ত আনিছ প্রতিদিনই এলাকায় ঘটাচ্ছে বলে জানান হাবীব। সে আরোও বলেন, শুধু তাই নয়, অন্যকে ফাঁসাতে নিজেরাই আত্মগোপনে থেকে তার মা’কে অপহরন করেছে বলে এলাকায় বোমা ফাটান আনিছ।

এলাকাবাসী জানান, হত্যা মামলাকে পুজিঁ করে পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে আর্থিক ফায়দা লুটা ও নিরীহ লোকজনকে হয়রানী কখনো কাম্য নয়। প্রকৃত দোষীরা গ্রেফতার ও তাদের শাস্তি হোক এটা সবার কাম্য, কিন্তু নিরীহ কোন মানুষ যাতে আনিছের ভুল তথ্যের ভিত্তিতে হয়রানীর শিকার না হয় সেদিকে নজর দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসি।

এবিষয়ে সদর থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। তিনি আরও বলেন, সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে হত্যা মামলায় জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আনিছের বিরুদ্ধে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ সত্য হলে অভিযুক্ত আনিছের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) মোহাম্মদ আরিফ ইকবাল এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে সংঘাত/টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকল আরও ৯ বিজিপি সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ...