প্রকাশিত: ১৪/১০/২০১৭ ১১:৫২ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:১৮ পিএম

নূর মোহাম্মদ::

টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রোহিঙ্গা শিশুরা যাতে ভর্তি না হতে পারে সেজন্য শিক্ষা প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। যেসব এনজিও বার্মিজ ভাষার রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাদান করাচ্ছে তাদের প্রতি নজর রাখতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরজমিন পরিদর্শন করে এসব নির্দেশনা দেন। এছাড়াও রোঙ্গিরা ঢল কক্সবাজারে আসার পর জেলার সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে জেলা শিক্ষা ও আঞ্চলিক অফিস। সেই প্রতিবেদনে ওই জেলার শিক্ষা কার্যক্রমের বেহাল চিত্র উঠে এসেছে। জানা গেছে, কক্সবাজারের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম সরজমিন দেখতে গত ৮ই অক্টোবর মাউশি’র মহাপরিচালক প্রফেসর এসএম ওয়াহিদুজ্জামান টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আকস্মিক পরির্দশনে যান। পরিদর্শনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বেশকিছু নির্দেশনা দেন তিনি। এরমধ্যে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা নিজ উদ্যোগে রোহিঙ্গা শিশুদের বার্মিজ ভাষায় শিক্ষাদান করছে এসব এনজিওদের ব্যাপারে খোঁজ নিতে স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠান প্রধানকে বলেন মহাপরিচালক। উখিয়া ও টেকনাফের দু’টি প্রতিষ্ঠানে স্কুলের পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। ওই দুই স্কুলে চারজন শিক্ষক ছুটি ছাড়াই স্কুলে অনুপস্থিত থাকায় তাৎক্ষণিক এসব শিক্ষকদের ফোন করে স্কুলে না আসার কারণ জানতে চান। একজন শিক্ষক ক্লাস না আসার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এর মধ্যে দুইজন শিক্ষক ছুটি ছাড়াই অন্য জেলার অবস্থান করার তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এবং শোকজ করার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসকে নির্দেশ দেন। প্রয়োজনে তাদের এমপিও বন্ধ করার নির্দেশ দেন। কক্সবাজার জেলা অফিস জানায়, মহাপরিচালকের নির্দেশক্রমে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শ্যামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও উখিয়ার সোনারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশকিছু প্রধান শিক্ষকসহ চারজনকে শোকজ করা হয়েছে। পরিদর্শনকালে এসব স্কুলে বিশৃঙ্খল পরিবেশ এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব, শ্রেণিকক্ষের শিক্ষকের অনুপস্থিতি, বিদ্যালয়ের নানা তথ্য দিতে না পারা, এমএমসি না হওয়ার কারণ জানতে তিনদিন সময় চাওয়া হয়েছে। এসব অনিয়মের কারণে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না প্রয়োজনে তার এমপিও বন্ধ করা হবে এমন মর্মে শোকজ করা হয়। এছাড়া শ্যামলাপুর স্কুলে ইংরেজির সহকারী শিক্ষক মো. ইদ্রিস, কৃষি শিক্ষার সহকারী শিক্ষক শাহিনুর আক্তার, উখিয়ার সোনারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, স্কুলের ইংরেজি সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান, শরীর চর্চার শিক্ষক শামসুর আলমকে শোকজ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মাউশি’র মহাপরিচালক ওয়াহিদুজ্জামান তার অফিসে মানবজমিনকে বলেন, কক্সবাজারে লাখ লাখ রোহিঙ্গা আসার কারণে সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। স্কুলের ক্লাসরুমে ত্রাণসামগ্রী রাখা হচ্ছে। এছাড়াও রোহিঙ্গা শিশুরা কক্সবাজারের স্কুলে অনুপ্রবেশ করতে পারে এমন তথ্যের ভিত্তিতে আকস্মিক পরির্দশনে যাই। যাওয়ার পর রীতিমতো হতবাক হয়েছি। অনেক স্কুলে শিক্ষকরা অনুপস্থিত ছিল, স্কুলে পরিবেশ ছিল খুবই বিশৃঙ্খল। এসব কারণে তাদের শোকজ করা হয়েছে। আর প্রশাসনকে রোহিঙ্গারা শিশুদের শিক্ষা কাযক্রম নিয়ে সতর্ক থাকতে বলেছি।
কক্সবাজার জেলার শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ই সেপ্টেম্বর মাউশি’র মহাপরিচালক রোহিঙ্গা আসার প্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা কার্যত্রুমের সার্বিক চিত্র পাঠানোর জন্য টেলিফোনে নির্দেশ দেন। এরপর জেলা অফিস একটি প্রতিবেদন পাঠায়, সেখানে দেখা যায়, টেকনাফ ও উখিয়ায় ৭টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কাযত্রুম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, উখিয়া ডিগ্রি কলেজের সব শিক্ষা কার্যত্রুম বন্ধ রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষের রুম ব্যতীত সব রুমে সেনাবাহিনী ও বিজিবি ত্রাণসামগ্রী রেখেছে। দিনের বেলা কলেজের মাঠে ত্রাণ বিতরণ হয়। উখিয়ার কুতু পালং বিদ্যালয়ে ৩টি রুম, বালুখালী কাসেমীরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩টি রুম এবং স্কুলের মাঠ, টেংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুল প্রাঙ্গণের ত্রাণ বিতরণ, ফারীর বিল আলীম মাদ্‌রাসা রোহিঙ্গাদের অবস্থান, টেকনাফের আলহাজ আলী আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৪টি কক্ষে ত্রাণসামগ্রী এবং শাহ্‌পরীর দ্বীপ হাজী বশির আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ে রোহিঙ্গা আসার কারণে শিক্ষাকার্যত্রুম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাম মোহন সেন একটি প্রতিবেদনে বলেছেন, কক্সবাজার জেলায় উখিয়া এবং টেকনাফে বিভিন্ন এনজিও তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রাক প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের বাংলাদেশি কারিকুলামের ১/২টা বই এবং বার্মিজ ভাষায় কিছু বইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা শিক্ষকদের মাধ্যমে ভাষাজ্ঞান ও সচেতনতা অর্জনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিশুরা তার নিজে দেশের ফিরে গিয়ে ন্যূনতম জীবন মান বজার রাখতে পারে, সেজন্য শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এরমধ্যে কোডেক নামে একটি এনজিও কর্মকর্তা মনিউর রহমান জানান, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে শিক্ষা কার্যত্রুম পরিচালিত হচ্ছে। ইউনিসেফের অর্থায়নে কোডেক ও মুক্তি নামক এনজিও বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাম্পে ২০৬টি স্কুল পরিচালনা করছে। এসব স্কুলে শিক্ষার্থী ১৪ হাজার ১জন। শিক্ষক সংখ্যা ৩০৮জন। শিক্ষার্থীদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি একটি মানবিক প্রচেষ্টা বলে মনে করেন প্রধান শিক্ষক। তবে এসব এনজিও কার্যত্রুম মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান মহাপরিচালক। সুত্র: মানবজমিন

পাঠকের মতামত

নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, এখন বিসিএস ক্যাডার

গল্প-আড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়জীবনটা উপভোগের সুযোগ আবদুল মোত্তালিবের হয়নি। দুপুর গড়ালেই তাঁকে ছুটতে হতো কাজে। অসচ্ছলতার কারণে ...