প্রকাশিত: ১৪/০৯/২০১৮ ১০:৫২ এএম

উখিয়া নিউজ প্রতিবেদক::
লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করতে চায় সরকার। দ্রুত ওই দুর্গম চরে রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নৌবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থ বছরের বাজেটে ভাসানচর উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪১৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। তবে রোহিঙ্গাদের দাবি, তাদেরকে দুর্গম চরে না পাঠিয়ে জাতিসংঘের সহায়তায় সরকার যেন মিয়ানমারের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগ গ্রহণ করে।

কক্সবাজারের ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তারা বলছেন, বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে এক জায়গায় দীর্ঘস্থায়ী বসবাসের সুযোগ না দিয়ে প্রাথমিকভাবে লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পুনর্বাসন করার উদ্যোগ রয়েছে সরকারের।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মোট ১১ লাখ। এদের মধ্যে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য ভাসানচরে অস্থায়ী আবাসন গড়ে তুলতে ২০১৭ সালে একনেক বৈঠকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ভাসানচরে ভাঙন প্রতিরোধসহ বেড়িবাঁধ নির্মাণের কথা রয়েছে। সেখানে ১২০টি গুচ্ছগ্রামে ১৪৪০টি ব্যারাক হাউজ এবং ১২০টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।

ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের আয়ের উত্স সৃষ্টি করতে ছোট দোকান, বিক্রয় কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি গরু-মহিষ, হাঁস-মুরগি পালন, অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মাছ চাষ, কুটির শিল্পসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হবে। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, মত্স ও প্রাণি সম্পদ বিভাগ ও মিল্ক ভিটাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কাজে সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিওকে সম্পৃত্ত করা হবে। তথ্য মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবং কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে কার্যক্রম বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, প্রথম ধাপে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের এ পরিকল্পনা স্থগিত রাখা হলেও গত বছরের আগস্টে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে এদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর ওই প্রকল্পটি আবারো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্য সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী এদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়ার বাস্তবতায় বাংলাদেশ থেকে পাঠানো আট হাজার রোহিঙ্গার তালিকা নিয়ে শুরু হয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়লে সরকার প্রথম দফায় এক লাখ তিন হাজার দুইশ’ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে ২০১২ সালে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ নূরের সঙ্গে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয় নিয়ে আলাপ করা হয়। তারা জানান, সহায় সম্পত্তি ও স্বজনহারা রোহিঙ্গারা এখানে অনেকটা ভালো আছে। বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতায় জাতিসংঘ ও বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রপ্রধান রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য মিয়ানমারের উপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। যদি প্রত্যাবাসন শুরু হয় তাহলে তারা সহজে নিজ দেশে ফিরে যেতে সক্ষম হবে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির প্রভাবশালী সদস্য, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গাদের স্বদেশে নাগরিক অধিকার নিয়ে ফেরানোর জন্য সরকার আন্তরিক। ভাসানচরে স্থানান্তরের চেয়ে রোহিঙ্গাদের সার্বিক বিষয়ে নিয়ন্ত্রণের জন্য আইনশৃংখলা বাহিনী কর্তৃক তদারকি বৃদ্ধির পাশাপাশি রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্প ত্যাগ করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে না পড়তে পারে সে ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। এ ব্যাপারে কক্সবাজার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনার মোঃ আবুল কালামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের স্বাভাবিক জীপনযাপনের লক্ষ্যে লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ সরকারের রয়েছে। তবে এ উদ্যোগ কবে বাস্তবায়ন হয় তা এখনো বলা যাচ্ছে না।

পাঠকের মতামত