প্রকাশিত: ০৭/০৭/২০১৯ ৭:৫৯ এএম

মুহিববুল্লাহ মুহিব
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বহুল আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির ঘনিষ্টজনদের দেখা মিলছে না। বর্তমানে বদিকে বিভিন্ন সভা, সমাবেশে একা দেখা যাচ্ছে। তার পুরনো ঘনিষ্টজনরা এখন কোথায়? এমন প্রশ্ন সচেতন মহল ও সাধারণ মানুষের মাঝে।

আব্দুর রহমান বদি ২০০৮ সালে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালে একই আসনে আবারো আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন। এই ১০ বছরে এমপি হিসেবে এলাকায় ব্যাপক অধিপত্য বিস্তার করেন। ক্ষমতায় থাকতে এমপি বদির পাশে অনেক বাঘা বাঘা নেতার দেখা মিলত। তাদের অনেকেই আজ বদির পাশে নেই। বিশেষ করে তার ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহম্মদ, শফিক মিয়া।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার আশঙ্কায় বদি তার পরিবারে মনোনয়ন রাখতে জোর লবিংয়ে নামেন। সর্বশেষ তিনি সফলও হন। এখন তার স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরী নামেমাত্র সংসদ সদস্য। সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন বদি। তবে নিজে এমপি থাকাকালীন যে দাপট দেখিয়েছেন, তা এখন নেই বলে জানান স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

এখন নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে বদি উপজেলা আওয়ামী লীগের পদ দখলে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরেক সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর পাশে থেকে দলীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আগের ঘনিষ্টজনদের মধ্যে কেউ কেউ গা ঢাকা দিয়েছেন, আবার কেউ অভিমান করে পাশে নেই। তবে কয়েকজন অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।

শীর্ষ ৭৩ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায়ও নাম রয়েছে বদির। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের করা টেকনাফের শীর্ষ ৭৯ মানব পাচারকারীর তালিকায়ও তার নাম ছিল। এমনকি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি ও জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে সহায়তাকারীদের তালিকায়ও তার নাম।

জানা যায়, ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়নের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন বদি। পরে রাতারাতি নিজেকে পাল্টে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। জাতীয় পাটির সময় তার পিতা এজাহার মিয়া কোং ছিলেন টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান। বাবার কাছেই রাজনীতির হাতেখড়ি লাভ করেন। এরশাদ সরকারের পর বদির বাবা যোগ দেন বিএনপিতে। পরে বদি আওয়ামী লীগে যোগ দিলে তার পিতাও আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

২০০৮ সালে উখিয়া-টেকনাফে শুরু হয় বদির শাসন। বদির আমলে ইয়াবার জোয়ারে ভাসে টেকনাফ। ঐ সময় ইয়াবাকে কেন্দ্র করে সেখানকার রাজনীতি আর অর্থনীতি নির্ভর করছিল। টেকনাফে লবণ, মাছ চাষ, কাঠ ব্যবসাসহ বিভিন্ন বৈধ ব্যবসা ছেড়ে বিত্তশালীরা ইয়াবায় অর্থলগ্নিতে ডুবে পড়েন। এক পর্যায়ে টেকনাফ হয়ে উঠে মাদকের স্বর্গরাজ্য।

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘বদি এমপি থাকাকালীন চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তার পাশে থেকে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়েছেন। তখন থেকে বদির ইয়াবার সংশ্লিষ্টতা জানত উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত। তার কাছে অসহায় ছিল মানুষ। তবে ক্ষমতার কারনে ইয়াবা ব্যবসায় তার লোকজন প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেছে।’

বদি ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইয়াবা পাচারকারীর তালিকার শীর্ষে রয়েছেন তার ভাই মো. আবদুস শুক্কুর ও মৌলভী মুজিবুর রহমান, আবদুল আমিন, ফয়সাল রহমান ও শফিকুর রহমানের নাম। এছাড়াও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বদির বেয়াই আখতার কামাল, শাহেদ কামাল, ফুফাত ভাই রাসেল, ভাগনে নিপু।

এদের মধ্যে তার চার ভাই, ফুফাত ভাই, ভাগনে নিপু ও বেয়াই শাহেদ কামাল ১০২ জন ইয়াবা কারবারির সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করেছেন। আরেক বেয়াই আখতার কামাল বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।

সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে কারাগারেও যেতে হয়েছে বদিকে। তাকে এই মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের রায়ে আবদুর রহমান বদিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। আদালত তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন এবং কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ২০১৪ সালে এ মামলায় বদি ১৮ দিন কারাগারে ছিলেন।

এসব বিষয়ে জানতে সাবেক এমপি বদির মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিব করেননি। তবে তার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচিত হেলাল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ওনি (বদি) তো আছেন, বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যস্ত।’ সুত্র : বার্তা ২৪

পাঠকের মতামত