প্রকাশিত: ০২/০৩/২০১৮ ৮:৫১ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:৫৬ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::

ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে দেয়া শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফল বাতিল করা হবে। এ ঘটনায় আটককৃত ও বহিষ্কৃতদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা। এমন সুপারিশ করেছে এ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই কমিটি।

তবে অকাট্য প্রমাণের অভাবে কোনো বিষয়ে সবার পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ করা হয়নি। যদিও পরীক্ষার আগে ‘কিছু বিষয়’-এর (সাবজেক্ট) নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে বলে মনে করছে কমিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

কমিটির তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সংস্থার এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ফাঁস প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়া শিক্ষার্থীদের দুটি পদ্ধতিতে চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এর একটি হচ্ছে, প্রযুক্তিগত অনুসন্ধান ও অপরটি গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তি। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, কোনো প্রশ্নই পুরোপুরি ফাঁস হয়নি।

শুধু ‘কিছু’ বিষয়ের (সাবজেক্ট) এমসিকিউ ফাঁস হয়েছে। তদন্তে প্রশ্নফাঁসের যে চিত্র পাওয়া গেছে, তাতে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এ সুবিধা পেতে পারে। সেই হিসাবে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী প্রশ্নফাঁসের সুবিধা পেয়ে থাকতে পারে।

ফলে শুধু এদের পরীক্ষার ফল বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। প্রসঙ্গত, এবার প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়।

বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত হয়। দু-এক দিনের মধ্যেই এটি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তিন পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে চারটি সুপারিশসহ পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া এতে কমিটির মতামত এবং প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ও এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়। প্রতিবেদনের সঙ্গে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কমিটির প্রধান এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর বৃহস্পতিবার দুপুরে যুগান্তরকে বলেন, আমাদের কাজ প্রতিবেদন তৈরি করা। সেই কাজ শেষ হয়েছে। এখন প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। প্রতিবেদনের কোনো তথ্য প্রয়োজন মনে করলে সরকার প্রকাশ করবে। সরকারের সেই সিদ্ধান্ত নেয়া পর্যন্ত তিনি সবাইকে অপেক্ষার অনুরোধ করেন।

তবে কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, প্রতিবেদনে মোট চার দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে যেসব শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে তাদের ফলাফল বাতিল করা। ফাঁস প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়া শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির মাধ্যমে চিহ্নিত করে এই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা পরীক্ষার্থী চিহ্নিত করা হবে। এরপর যেসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফল বাতিল হবে, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

কমিটির এক সদস্য জানান, চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর পাস করা শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকবে। যদি প্রমাণ পাওয়া যায়- এবার এসএসসি পাস করা কোনো শিক্ষার্থী ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছে তবে তার ফলও বাতিল হবে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুপারিশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে প্রশ্নপত্র নেয়ার দায়ে যারা বহিষ্কৃত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সদস্য ও একটি বোর্ডের সিনিয়র কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, কমিটি প্রশ্ন ফাঁসের কারণে কোনো পরীক্ষা বাতিলের পক্ষে নয়। কেননা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উš§ুক্তভাবে প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। কাছাকাছি কিছু (ক্লোজ গ্রুপ) লোকের মধ্যে প্রশ্ন শেয়ার হয়। ফলে পরীক্ষার আগমুহূর্তে অতি নগণ্যসংখ্যক পরীক্ষার্থীর প্রশ্ন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ২০ লাখ সাধারণ পরীক্ষার্থীর হাতে প্রশ্ন পৌঁছায়নি।

যারা আগমুহূর্তে সঠিক বা ভুয়া প্রশ্ন পেয়েছে তারা ওই সময় পরীক্ষা কেন্দ্রের পথে বা কেন্দ্রের সামনে ছিল। এ সময় প্রশ্ন পেয়ে থাকলেও তারা তেমন লাভবান হতে পারেনি। এ কারণে পরীক্ষা বাতিল করা সমীচীন হবে না।

পরীক্ষা বাতিল করে প্রচলিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিতে গেলে আবারও যে প্রশ্ন ফাঁস হবে না- সে নিশ্চয়তা নেই। বরং এতে নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকসহ কোটি মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। তাই পরীক্ষা বাতিল না করাই অধিক যুক্তিযুক্ত বলে কমিটি মনে করছে।

কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, এক ঘণ্টা আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের যে অভিযোগ করা হচ্ছে এর অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা আগে ‘কিছু বিষয়ের’ প্রশ্নপত্র প্রকাশিত হয়েছে, তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্লোজ গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে। ওই প্রশ্নের সঙ্গে মূল প্রশ্নের মিল আছে। তবে এ ধরনের গ্রুপে সর্বোচ্চ ১০০ সদস্য থাকতে পারে। মোট কটি গ্রুপের হাতে প্রশ্ন পৌঁছেছে সে তথ্য কমিটি বের করতে পারেনি।

কমিটি মনে করছে, ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা আগে ফাঁস হলেও যারা প্রশ্ন পেয়েছে তারাও খুব বেশি লাভবান হতে পারেনি। কেননা, ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ বাধ্যতামূলক ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও মোবাইল ফোনে দেশের দু-এক স্থানে অতি নগণ্যসংখ্যক পরীক্ষার্থী প্রশ্ন পেয়েছে। তবে ওই প্রশ্ন সঠিক কিনা, তা যাচাই করা দুরূহ।

এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ভুয়া প্রশ্নও ছড়িয়েছে। সেগুলোর পেছনে ছুটে লেখাপড়া না করা কিছু শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। শুরুর দিন এসএসসিতে বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা ছিল। কিন্তু প্রথমদিন থেকেই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে ৪ ফেব্রুয়ারি বৈঠক করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়। ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে কমিটি গঠনের চিঠি জারি করে বিকালে কমিটি বৈঠকে বসে। কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীরের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা ১৮ এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে মিলিত হয়।

কমিটিকে দুটি কাজ দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে একটি হচ্ছে- প্রশ্নফাঁসের বিভিন্ন অভিযোগ, পত্র-পত্রিকা বা গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ যাচাই করা। অপরটি হচ্ছে- প্রশ্নফাঁসের ধরন, সময়, মাধ্যম ইত্যাদি বিবেচনা করে পরীক্ষা ও পরীক্ষার্থীর ওপর এর প্রভাব নিরূপণ এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা।

কমিটির এক সদস্য জানান, চারটি কর্মপন্থায় তারা কাজ শেষ করেছেন। প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এসএসসির ১৭টি বিষয়ের মধ্যে ১২টির এমসিকিউ প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ আনা হয়েছে। গণিত প্রশ্ন ফাঁস মর্মে অভিযোগও তোলা হয়েছে। তবে কোনো বিষয়ের সৃজনশীল প্রশ্নফাঁসের সংবাদ প্রকাশিত হয়নি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রশ্নফাঁসের সব অভিযোগ এসেছে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা আগে। মাদ্রাসার দাখিল এবং কারিগরি বোর্ডের এসএসসি ভোকেশনাল প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের সংবাদ-প্রতিবেদনও কোথাও পাওয়া যায়নি।

কমিটির অপর সদস্য জানান, প্রতিবেদন তৈরির স্বার্থে তারা শুধু ফেসবুকের বিভিন্ন লিঙ্ক বা প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনই বিবেচনায় নেননি; স্থানীয় প্রশাসন থেকেও প্রতিবেদন নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মাদারীপুরের মোস্তফাপুরে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষার দিন ৯টা ৫৩ মিনিটে জোবায়দুল ইসলাম মিঠু নামে একজনকে আটক করা হয়। পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষার দিন চট্টগ্রামে ৯টা ২৫ মিনিটে বাসভর্তি শিক্ষার্থী আটক সংক্রান্ত প্রতিবেদন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয় কমিটি।

কমিটির এক সদস্য জানান, তদন্তে তারা পেয়েছেন যে, এ বছর এসএসসি পরীক্ষা শুরুর কয়েকদিন আগে থেকেই ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমোসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছিল। এসএসসির প্রশ্ন ফাঁসের শতভাগ নিশ্চয়তা ছিল কোনো কোনো মাধ্যমে। এর মধ্যে কয়েকটি লিঙ্ক অনুসন্ধান করে কমিটি দেখেছে, আগে আপলোড করা প্রশ্নের সঙ্গে মূল প্রশ্নপত্রের মিল নেই। তবে কয়েকটিতে শেয়ার করা প্রশ্নের সঙ্গে মূল প্রশ্নের মিল থাকলেও সেগুলোয় ‘সময় কারসাজি’ করা হয়েছে। এর ফলে পরে প্রশ্ন আপলোড করলেও আগের সময় দেখানো হয়েছে। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কিছু গ্রুপ খোলা হয়েছে। তারাই আসল কিংবা ভুয়া প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে আটককৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে মর্মে অবহিত করা হয়েছে। তবে ওইসব প্রশ্ন ক্লোজ গ্রুপে শেয়ার করা হয়েছে পরীক্ষার ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা আগে।

উল্লেখ্য, সাত সদস্যের কমিটি এই যাচাই-বাছাইয়ের কাজ পরিচালনা করে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মো. শাহজাহান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার, মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এসএম মোর্শেদ বিপুল, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সুশীল কুমার পাল ও বিটিআরসির সহকারী পরিচালক তৌসিফ শাহরিয়ার। কমিটি কাজ শুরুর ১৭ দিনের মাথায় প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে।

পাঠকের মতামত

নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, এখন বিসিএস ক্যাডার

গল্প-আড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়জীবনটা উপভোগের সুযোগ আবদুল মোত্তালিবের হয়নি। দুপুর গড়ালেই তাঁকে ছুটতে হতো কাজে। অসচ্ছলতার কারণে ...