প্রকাশিত: ১০/১২/২০১৯ ১০:১৪ পিএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক::
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) দেশের হয়ে আইনি লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন এক সময় বিশ্বের গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে পরিচিত শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের জন্য বিশ্বের দরবারে আইকন হিসেবে পরিচিত মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সু চি রোহিঙ্গা গণহত্যায় নীরব থেকে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন প্রতিনিয়ত।

২০১৭ সালের আগস্টে যখন রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনী কঠোর রক্তাক্ত অভিযান শুরু করে; তখন সেই অভিযানকে সন্ত্রাসবাদবিরোধী হিসেবে আখ্যা দিয়ে বৈধতা দিয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ঘটনায় বিশ্ব মঞ্চে সমালোচনার মুখে পড়লেও সেনাবাহিনীর নৃশংস ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা, জ্বালাও পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেননি তিনি।

Video

00:00 / 00:00

Copy video url
Play / Pause
Mute / Unmute
Report a problem
Language
Mox Player
গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ লড়াই চালিয়ে আসা সু চি ২০১৬ সালে নির্বাচনে ভূমিধস জয়ে শাসন ক্ষমতায় এসেছেন ঠিকই; কিন্তু দেশটির গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছে সেনাবাহিনী।

সমালোচকরা বলছেন, সেনাবাহিনীর কুক্ষিগত ক্ষমতায় সু চি টিকে রয়েছেন পুতুল সরকারের আলঙ্কারিক পদ স্টেট কাউন্সিলর হিসেবে। বিদেশি নাগরিকত্ব থাকায় দেশটির সরকারের প্রধান হতে পারেননি সু চি।সেনা নিয়ন্ত্রণের মাঝে থেকেই দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করায় সামরিক বাহিনী রাখাইনে নৃশংস অপরাধ করলেও সেবিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।

নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার দায়েরকৃত মামলায় সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ের বিপক্ষে সাফাই গাইতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন সু চি। ২৮ বছর আগে গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের জন্য শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি এখন আদালতের কাঠগড়ায়। সেনাবাহিনী দেশের ভেতরে রোহিঙ্গাবিরোধী তীব্র মনোভাব বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর মাঝে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হলেও সু চি ছিলেন নিস্ক্রিয়।

তার এই নীরবতার দায় এখন নিতে চাচ্ছেন মিয়ানমারের প্রবাসী নাগরিকরাও। মঙ্গলবার হেগের পিস প্যালেসে যখন রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার শুরু হয়েছে; তখন আদালতের বাইরে সমাবেশ করেছেন বার্মিজরা। তারাও মেনে নিতে পারছেন না গণহত্যার এই দায়।

দ্য হেগে মামলার শুনানির সময় আদালতের বাইরে উপস্থিত ছিলেন সু চির সমর্থক মোয়ে মোয়ে নিন। এক সময় সু চিকে আদর্শ ভাবলেও এখন তাকে মিথ্যাবাদী ভাবছেন তিনি। মোয়ে বলেন, মিয়ানমারে যা ঘটছে সেব্যাপারে প্রবাসী নাগরিকদের মিথ্যা তথ্য জানানো হয়েছে।

মোয়ে মোয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ, সামরিক স্বৈরশাসকরা পুরো বার্মায় মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছেন। এটা বার্মা নয়। এটা বার্মিজ জনগণ কিংবা আমাদের ধর্ম নয়। আমরা বর্ণবাদী নই।’

এদিকে, মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে সু চির সমর্থনে সমাবেশ করেছেন দেশটির হাজার হাজার মানুষ। সমাবেশে অংশ নেয়া ৫৮ বছর বয়সী মিন্ট মিন্ট থুইন বলেন, সু চি আমাদের মায়ের মতো দেশের জন্য এগিয়ে গিয়েছেন। এমন অবস্থায় আমাদের সমর্থন জানানোর জন্য আমরা তার পাশে দাঁড়িয়েছি। এ জন্য সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে।

অন্যদিকে, মঙ্গলবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে শত শত রোহিঙ্গা পাহাড়ের পাদদেশে একত্রিত হয়ে ন্যায় বিচারের দাবিতে স্লোগান দিয়েছেন। এ সময় অনেককে গাম্বিয়া, গাম্বিয়া বলে গলা ফাঠাতে দেখা যায়। এমনকি অনেকে শরণার্থী শিবিরের মসজিদে মসজিদে বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নিয়েছেন। অনেকে রোজা রেখেছেন।

৩০ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নুরুল আমিন বলেন, আমাদের লোকজনকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের শিশুদের আগুনে ছুড়ে মারা হয়েছে। আমাদের নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছে। আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা সবাই ন্যায় বিচার চাই।

সূত্র : রয়টার্স, এএফপি।

পাঠকের মতামত