প্রকাশিত: ১৫/০৭/২০২০ ৮:৫৯ এএম
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি
কক্সবাজার জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজারের ঘর ছাড়ালেও জুলাই মাসের শুরু থেকে করোনা সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে জেলায় সংক্রমণের হার শতকরা ৬ থেকে ৮ ভাগে নেমে এসেছে। দেশের প্রথম রেড জোন ঘোষিত কক্সবাজার পৌর এলাকার পাশাপাশি জেলায় লকডাউন বাস্তবায়নের কারণে করোনা সংক্রমণের হার কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এখন লকডাউনের মেয়াদকাল শেষ হলেও ‘কন্ট্রাক ট্রেসিংয়ের’ মাধ্যমে সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংক্রমণের নিন্মমুখি হারের এ ধারা অব্যাহত থাকলে কক্সবাজারকে করোনামুক্ত করা সম্ভব হবে। কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে গত ১৩ জুলাই পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৩০২৮ জন। এ পর্যন্ত করোনা রোগ থেকে সুস্থ হয়েছে ১৮১২ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৪৭ জন। বর্তমানে আক্রান্তের চেয়ে সুস্থতার হার বেশি।
জানা গেছে করোনা সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জেলা প্রশাসন গত ৬ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত কক্সবাজার পৌর এলাকাসহ জেলার কয়েকটি উপজেলার সংক্রমণ প্রবন এলাকাকে দেশের প্রথম রেড জোন ঘোষণা করে দ্বিতীয় দফায় লকডাউন করে। পরে লকডাউনের মেয়াদকাল বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ ছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১১ জুলাই পর্যন্ত এসব এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন করার আগে জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ছিল নমুনা পরিক্ষার শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগের কাছাকাছি। এখন তা দিন দিনই কমতে শুরু করেছে। সর্বশেষ গত ১ জুলাই থেকে ১৩ জুুলাই পর্যন্ত সংক্রমণের এ হার গড়ে ৮ শতাংশের নীচে বলে জানান সিভিল সার্জন অফিস।
এদিকে জেলায় করোনা সংক্রমণের নিন্মমুখি হারের এ ধারা অব্যাহত রাখতে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ নিয়েছেন, ‘কন্ট্রাক ট্রেসিংয়ের’ মাধ্যমে এলাকা ভিত্তিক রোগী শনাক্ত, আক্রান্ত রোগীদের পর্যবেক্ষণ এবং তাদের আইসোলেটেড করাসহ সামাজিক তত্ত¡াবধানের। এ লক্ষ্যে কক্সবাজার পৌর এলাকায় গঠন করা হয়েছে ৬০ জনের প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক দলের।
কক্সবাজার শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি মো,নজিবুল ইসলামকে সমন্বয়ক করে এই স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা হয়। তিনি জানান গত জুন মাসে যখন কক্সবাজার জেলায় করোনা সংক্রমণের বাড়তে থাকে তখন জেলা প্রশাসনের আহŸানে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করে করোনা রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কন্ট্রাক ট্রেসিংয়ের কাজ শুরু করা হয়। কক্সবাজার শহরে করোনা রোগীর সংস্পর্শে আাসা প্রায় সাত শতাধিক লোককে চিহ্নিত করা হয়। তাদেরকে আইসোলেটেড থাকার পরামর্শ দেয়া হয় এবং তাদের মধ্যে উপসর্গ থাকা ৫০ জনকে নমুনা পরিক্ষার জন্য পাঠানো হয়। তিনি জানান শুধু তাই নয় যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছে তাদের চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি খাদ্য সহায়তাও দেয়া হয়।
কক্সবাজার জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ মাহবুবুর রহমান জানান সংক্রমণ প্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত প‚র্বক রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন করায় জেলায় করোনা সংক্রমণের হার এখন নিন্মমুখি। এতে ব্যাপক হারে সংক্রমণের আশংকা এখন অনেকটা কমে এসেছে। এখন চেষ্টা চলছে কন্ট্রাক ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের। সংক্রমণের হার শুন্যের কোটায় আনা পর্যন্ত এই কন্ট্রাক ট্রেসিংয়ের কাজ চলমান থাকবে বলে তিনি জানান
এদিকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো কামাল হোসেন বলছেন, কার্যকর লকডাউনের কারণে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাপারে আশাবাদী। এখন করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে ঘাটতি প‚রণের জন্য কাজ চলছে। এতে অনেকটা অগ্রগতিও হয়েছে। কক্্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে
আইসিও সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। আগামী কোরবানির ইদ পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে সরকারি বেসরকারি অফিসে কার্যক্রম চলবে এবং সৈকতে পর্যটকদের আগমন নিষিদ্ধ থাকবে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সুত্র জাানান গত ১৩ জুলাই পর্যন্ত ৫৭ জন রোহিঙ্গাসহ কক্সবাজারে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ২৮ জন, সুস্থ হয়েছে ১ হাজার ৮১২ জন। এছাড়া ৫ জন রোহিঙ্গাসহ জেলায় মৃত্যু ৪৭ জনের। তবে আক্রান্ত ও মৃত্যু হওয়াদের মধ্যে চারভাগের তিনভাগেরই আক্রান্ত আর মৃত্যু হয়েছে রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন করার আগে। বর্তমানে কক্সবাজার জেলায় আক্রান্তের হারের চেয়ে সুস্থতা হার অনেক বেশি বলে জানান সিভিল সার্জন অফিস।
লকডাউন কার্যকর করার পর গত এক সপ্তাহের করোনা আক্রান্তের হার বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ১৩ জুলাই কক্সবাজার জেলায় মোট ২৭০ জনের নমুনা পরিক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ২৩ জনের। ১২ জুলাই ৩৩৭ জনের নমুনা পরিক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ২৭ জনের। ১১ জুলাই ৯৬ জনের নমুনা পরিক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ১০ জনের। ১০ জুলাই ৩০৪ জনের নমুনা পরিক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ২৩ জনের। ৯ জুলাই ৩৫২ জনের নমুনা পরিক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ৪৫ জনের। ৮ জুলাই ২২৮ জনের নমুনা পরিক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ২৪ জনের। ৫ জুলাই ৩২৪ জনের নমুনা পরিক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ৫৪ জনের। ৪ জুলাই ১৬৪ জনের নমুনা পরিক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে মাত্র ৯ জনের। অথচ জুন মাসে এই চিত্র ছিল সম্পুর্ন উল্টো। প্রতিদিন চারশত থেকে পাঁচশত নমুনা পরিক্ষায় কক্সবাজার জেলার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হতো গড়পড়তা নব্বই/একশতের কাছাকাছি।
১৩ জুলাই পর্যন্ত কক্সবাজার সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত হয়েছে। সদর উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৪২৯ জন। এর মধ্যে সিংহভাগই কক্সবাজার শহরের বাসিন্দা। শহরের আক্রান্তের সংখ্যা হচ্ছে ১১৪৮ জন। এ ছাড়া চকরিয়া উপজেলায় ৩৪৬ জন, রামু উপজেলায় ২৫৬ জন, উখিয়া উপজেলায় ৩২০ জন, টেকনাফ উপজেলায় ২৬৬ জন, মহেশখালী উপজেলায় ১৫২ জন, পেকুয়া উপজেলায় ১২৭ জন, কুতুবদিয়া উপজেলায় ৭৫ জন, এবং শরনার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গা আক্রান্ত ৫৭ জন।

পাঠকের মতামত

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...