প্রকাশিত: ০৫/১০/২০১৯ ৭:৪৮ এএম

রাশেল চৌধুরী,কক্সবাজার ::
উখিয়ায় চাঞ্চল্যকর ৪ মার্ডার নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। ঘরে বাইরে চা দোকান ও হাটবাজারে এখনো আলোচনার বিষয় একই পরিবারের ৪ হত্যাকাণ্ড? আলোচনায় ঘুরে ফিরে স্থান পাচ্ছে নানা প্রশ্ন। কেন এই হত্যাকাণ্ড? হত্যাকারী কি একজন? নাকি একের অধিক? হত্যাকারী পরিবারের কেউ? নাকী বাইরের কেউ? ঘরের হলে তিনি কে? বা বাইরের হলে তিনিই বা কে? মূল আসামি শনাক্ত হয়েছে কিনা? ইত্যাদি ইত্যাদি নানা প্রশ্নের উত্তর এখনো মিলছে না। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা কিছু ক্লু পেয়েছেন। যেসব ক্লু নিয়ে কাজ করলে হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের করা সম্ভব হবে। উখিয়া থানার পুলিশও প্রতিদিন নতুন নতুন মোটিভ নিয়ে কাজ করছেন। যখন যে ক্লু পাচ্ছেন, সে ক্লু নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।

ঘটনাকেন্দ্রিক পুরো এলাকা তারা নজরদারিতে রেখেছেন। এদিকে শুরু থেকে ঘটনাটিকে অধিক গুরুত্বের সঙ্গে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনার পরপরই জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। চট্টগ্রাম থেকে আসেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন এন্ড ক্রাইম) আবুল ফয়েজ। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময়ের পাশাপাশি মামলার ব্যাপারে জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। চট্টগ্রাম থেকে তিনি সরাসরি এ মামলার তদারকি করছেন। পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, তদন্তে তারা বহুদূর এগিয়েছে। ঘটনাস্থলে যে পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে, তা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। আপাতত পায়ের ছাপ একজনের বলে ধারণা করছেন পুলিশ। পাশাপাশি এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডও হতে পারে। তবে তদন্তের স্বার্থে তারা আপাতত তা প্রকাশ করছে না। সিআইডির ক্রাইম সিন টিমের রিপোর্ট, পিআইবির ফরেনসিক এক্সপার্ট টিমের রিপোর্ট, ময়না তদন্তের রিপোর্ট, সুরতহাল রিপোর্টসহ অন্যান্য প্রমাণাদি নিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। সর্বশেষ মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফারুক হোসেনকে পরিবর্তন করে মামলার নতুন আইও করা হয়েছে ওসি তদন্ত মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম মজুমদারকে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি তদন্ত মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে আন্তরিকভাবে কাজ করছে পুলিশ। শুধু জেলা পুলিশ নয়, বাংলাদেশ পুলিশের দৃষ্টিও এখন এই মামলার দিকে। তিনি সত্য উদঘাটনে সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, সকলের সাহায্য পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হবে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, বিভিন্ন সূত্র ধরে তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে পুলিশ। পরিবার, প্রতিবেশী, আর্থিকসহ সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিবারের সদস্য এবং সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। শিগগিরই অপরাধীকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবেন বলে আশাবাদী এ পুলিশ কর্মকর্তা। এদিকে স্বজনহারানো প্রবাসী রোকেন বড়ুয়া এখনো বাকরুদ্ধ। তিনি গর্ভধারিণী মা সখি বড়ুয়া, স্ত্রী মিলা বড়ুয়া ও একমাত্র রবিন বড়ুয়ার কথা বলে বলে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন। রোকেন বড়ুয়া বলেন, কিছু আত্মীয়স্বজনের ব্যাপারে তার সন্দেহ রয়েছে। বিষয়টি তিনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছেন। স্থানীয় সুজন বড়ুয়া জানান, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তারা ভীতসন্ত্রস্ত। উদ্বেগ ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন আশপাশের সবাই। ঘটনার পর আমাদের মন ভেঙে গেছে। আমরা চাই দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হউক। উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল মনসুর জানিয়েছেন, কক্সবাজার জেলা পুলিশ মামলাটি নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে কাজ করছেন। তিনি জানান, ইতিমধ্যে হত্যাকাণ্ডের অনেক ক্লু ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে, তবে তদন্তের স্বার্থে এসব ক্লু প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছেনা। শিঘ্রি হত্যাকাণ্ডের মূল ক্লু বের করা যাবে। উল্লেখ্য, গত ২৫শে সে্‌প্েটম্বর দিবাগত রাতে কক্সবাজারের উখিয়া রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্বরত্না গ্রামের একই পরিবারের নারী ও শিশুসহ ৪ জনকে জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। পরদিন সকালে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানাজানি হলেও সন্ধ্যা ৬টায় কুয়েত প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার বাড়ির ভিতর থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

সুত্র-মানবজমিন

পাঠকের মতামত