
উখিয়া নিউজ ডেস্ক ::
জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় টেকনাফের আলোচিত সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়েছে। বুধবার (০৫ এপ্রিল) অভিযোগ গঠনের শুনানির ধার্য তারিখে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মীর রহুল আমিনের আদালতে হাজির হন সাংসদ বদি। এসময় তার আইনজীবীরা অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আদালতে সময়ের আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করলেও সময় পরবর্তীতে নির্ধারণ করবেন বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। এর আগে গত ২০ মার্চ একই আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন সাংসদ বদি। জরুরি অবস্থার সময় ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর নগরীর ডবলমুরিং থানায় সাংসদ বদির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক-২ আবুল কালাম আজাদ। মামলা নম্বর ৩০ (১২) ০৭। মামলার এজাহারে বদির বিরুদ্ধে ৭৯ লাখ ৩৭ হাজার ৭৯৭ টাকা ১১ পয়সা জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ এবং ৫৬ লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ করা হয়। মামলার একমাত্র আসামি সাংসদ বদির বিরুদ্ধে দুদক আইনের ২৬ (২) ও ২৭ (১) ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) এবং ২০০৭ সালের জরুরি বিধিমালার ১৫ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। ২০০৮ সালের ২৪ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। ২৭ জুলাই অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য সেটি বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে পাঠিয়ে দেন মহানগর দায়রা জজ। বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে এক দফা অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়। তবে অভিযোগ গঠন হয়নি। এর মধ্যে ২০০৮ সালের ২০ আগস্ট বদির রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। ২০০৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে জারি হওয়া রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। আট বছর পর চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম চালানোর আদেশ দিয়ে রুলের নিষ্পত্তি করেন। একইসঙ্গে আসামিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন। গত ৫ মার্চ হাইকোর্টের আদেশের নথি বিচারিক আদালতে এসে পৌঁছে। এরপর সাংসদ বদি আত্মসমর্পণ করেন এর আগে জরুরি অবস্থার সময় ২০০৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হন টেকনাফের তৎকালীন পৌর মেয়র আবদুর রহমান বদি। দেড় বছর জেল থেকে ২০০৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান। জেলে থাকা অবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্দেশে বদি ২০০৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সম্পদের তথ্য জমা দেন। একই সময়ে তিনি আয়কর বিভাগেও সম্পদের তথ্য জমা দেন। দুদকে দাখিল করা বিবরণীতে বদি নিজের নামে স্থাবর ৩২ লাখ ১৯ হাজার ২৪১ টাকা এবং অস্থাবর ৪ লাখ ৩০ হাজার ৮৮৮ টাকা ১৫ পয়সা মূল্যের সম্পদের তথ্য দেন। স্ত্রী শাহীন আক্তারের নামে স্থাবর ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং অস্থাবর ৭৭ হাজার ৭ টাকা ৯৬ পয়সা মূল্যের সম্পদের তথ্য দেন। নিজের দশ বছর বয়সী মেয়ে সামিয়া রহমান সানির নামে স্থাবর ৬ লাখ এবং অস্থাবর ৫ হাজার ৭৪০ টাকা ১১ পয়সা মূল্যের সম্পদের তথ্য দেন। বদি স্ত্রী-মেয়েসহ মোট ৫৫ লাখ ২২ হাজার ৮৭৭ টাকা ১১ পয়সা মূল্যের সম্পদের তথ্য দুদকে জমা দিলেও অনুসন্ধানে দুদক প্রমাণ পায়, বদি ১৪ লাখ টাকা করে ২৮ লাখ টাকা দামের দুটি ট্রাকের তথ্য বিবরণীতে গোপন করেছেন। এছাড়া ১২ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫০ টাকা ও ১৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৫০ টাকা দামের আরও দুটি ট্রাকের তথ্যও তিনি গোপন করেছেন। মামলার আরজিতে বাদি সাংসদ বদির বিরুদ্ধে চারটি ট্রাক বাবদ মোট ৫৬ লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ এনেছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ এলাকায় প্লটসহ ৭৯ লাখ ৩৭ হাজার ৭৯৭ টাকা ১১ পয়সা মূল্যের সম্পদ অসৎ উপায়ে উপার্জনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে মামলার আরজিতে। এছাড়া আয়কর বিবরণীতে বদি সম্পদের যে তথ্য দিয়েছেন দুদকের দাখিল করা বিবেরণীর সঙ্গে তার গরমিল আছে বলে দুদক মামলার আরজিতে উল্লেখ করেছেন।
পাঠকের মতামত