উখিয়া নিউজ ডটকম
প্রকাশিত: ২১/০৮/২০২৫ ৭:৫৩ এএম , আপডেট: ২১/০৮/২০২৫ ১০:০৩ এএম

ইব্রাহিম খলিল মামুন, কক্সবাজার

কক্সবাজার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পরিচয়ে ২০১৭ সালের ৭ জুন কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে গিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন ইয়াছমিন আক্তার নামে এক নারী। বাবা হিসেবে মৃত মোহাম্মদ হোসেন ও মা নুর নাহার বেগম পরিচয় দেন তিনি। সঙ্গে জমা দেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের স্বাক্ষরিত জাতীয় পরিচয়পত্র ও নাগরিকত্বের প্রত্যয়ন। পাশাপাশি ইয়াছমিন আক্তারের নামে ইস্যুকৃত জন্ম সনদ, জাতীয়তাসনদ, প্রত্যয়ন পত্রের ফটোকপি সত্যায়িত করেছেন কক্সবাজার পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ রফিকুল ইসলাম। অথচ ইয়াছমিন আক্তার নামের যে নারীকে বাংলাদেশি বলে এসব কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে তিনি মূলত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা নারী। তার প্রকৃত নাম নুরুন্নাহার বেগম। তিনি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। তার বাড়ি মিয়ানমারের রাখাইন এলাকার মংডুরে।

বুধবার কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে দুদকের পক্ষ থেকে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক তুষার আহমেদ এ প্রতিবেদনটি জমা দেন।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমানের পরিচিত বলে ইয়াছমিন আক্তারের জন্ম সনদ, জাতীয় সনদ ও প্রত্যয়ন পত্রের ফটোকপি সত্যায়িত করেন। কক্সবাজার পৌরসভার-২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন বাদশা নামের এক ব্যক্তি এ রোহিঙ্গা নারীকে নিজের বোন পরিচয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তা সনদ নিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, ইয়াছিন আক্তার নামে এ রোহিঙ্গা নারীর পক্ষে পুলিশ প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) তৎকালীন এএসআই সাজেদুর রহমান।

দুদক সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গা নারী ইয়াছমিন আক্তারকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেতে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করায় ২০২১ সালের ২৫ মার্চ ৭ জনকে আসামি করে মামলা করে দুদক। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন, কক্সবাজার পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ রফিকুল ইসলাম, ২নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মিজানুর রহমান, ১০নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ মোহাম্মদ কায়সার নোবেল, কক্সবাজার পৌরসভার নতুন বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা মো. হেলাল উদ্দিন বাদশা, কক্সবাজার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) এএসআই সাজেদুর রহমান ও সাবেক পরিদর্শক প্রভাষ চন্দ্র ধর।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে বুধবার মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় দুদক।

অভিযোগপত্রে সাত আসামির মধ্যে কক্সবাজার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) সাবেক পরিদর্শক প্রভাষ চন্দ্র ধর ও কক্সবাজার পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ মোহাম্মদ কায়সার নোবেলকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে কর্মরত) তুষার আহমেদ বলেন, মামলাটি দীর্ঘ এবং নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। অন্য দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।

দুদকের কক্সবাজার আদালতের আইনজীবী আব্দুর রহিম বলেন, অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ধার্য তারিখ এখনও দেওয়া হয়নি। আশা করি দ্রুত দেওয়া হবে।

অভিযোগ রয়েছে, এভাবে কক্সবাজার ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন কক্সবাজার পৌরসভার কয়েক জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার কিছু অসাধু কর্মকর্তা। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাঁরা রোহিঙ্গাদের দিয়ে দিচ্ছেন ভুয়া নাম-ঠিকানার জন্ম-নিবন্ধন। এসব পাসপোর্ট ও সনদ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত স্থানীয় কাউন্সিলর, পুলিশ, আইনজীবীসহ সবাই। আর এসব কাগজ দিয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট বানিয়ে অনায়াসে মধ্যপ্রাচ্য, এমনকি ইউরোপে চলে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে। এর ফলে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী হওয়ায় তাদের কারণে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি।

দুদক জানায়, রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট পাইয়ে দেওয়ার ঘটনায় ২০২১ সালের ২৫ মার্চ চট্টগ্রামের দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে ১১টি মামলা হয়েছে। দুদক কর্মকর্তারা বাদী হয়ে মামলাগুলো করেন। এতে কক্সবাজার সদর পৌরসভার সাবেক ও বর্তমান সাত কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের দুই চেয়ারম্যান, ডিএসবির তিন পরিদর্শক, দুই সহকারী উপপরিদর্শক, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একজন আইনজীবীসহ বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা সদস্যকে আসামি করা হয়। সুত্র :সমকাল

পাঠকের মতামত

উখিয়া থানা থেকে যেভাবে মুক্তি মেলে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের

কক্সবাজারের উখিয়ায় এনজিও চাকরিচ্যুত হোস্ট শিক্ষকদের পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে দিনভর উত্তেজনা, সংঘর্ষ ও নাটকীয়তার ...

উখিয়ায় চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলন , গ্রেপ্তার-২৮, পরে মুক্তি

জুলাই বিপ্লবী জিনিয়াকে ছাত্রলীগ ট্যাগে আটক করে ছিলো উখিয়ার পুলিশ কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত ...

উখিয়া থানা পুলিশের সাথে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের কি ঘটেছিল

কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে বুধবার সকাল থেকে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ...

উখিয়ায় চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জ, আটক ২০, আহত ৩

কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের পুনর্বহালের দাবিতে করা আন্দোলনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেছে। ...