
মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গুর হটস্পট হয়ে ওঠা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির এবং আশপাশের এলাকায় এ বছর ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। গত এক মাসে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচ রোহিঙ্গাসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি মাসের ২৬ জুন পর্যন্ত জেলায় ২১৬ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপও। তবে গত শুক্রবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
দুই মাস ধরে পর্যটন শহরে মশাবাহিত এই দুই রোগের প্রকোপ বাড়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সংক্রমণ রোধে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির, কক্সবাজার শহর এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মারা যাওয়া পাঁচজন রোহিঙ্গা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আগে কাজের সন্ধানে রাঙামাটি ও বান্দরবানে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে আক্রান্ত হয়ে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ফিরে আসেন। স্থানীয় যে বাংলাদেশি নারী ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তাঁর বাড়িও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাবেষ্টিত কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া গ্রামে। অসচেতনতা ও অসতর্কতার কারণেই ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ২১৫ জন। চলতি মাসে এ পর্যন্ত (২৬ জুন) ২১৬ জনের শরীরে ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ৪৩১ জনের মধ্যে ২৫০ জন বাংলাদেশি এবং ১৮১ জন রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত মৃত্যু হয় ৬ জনের।
অপরদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বাড়লেও চলতি বছরে মৃত্যু হয়নি। উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত হয়েছে ২হাজার ৫০৮ জন। এতে স্থানীয় বাংলাদেশি নাগরিক ৩০৩ জন। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আক্রান্ত হয় মে থেকে চলতি জুন মাসে।
গত বৃহস্পতিবার জেলা সদর হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ৯ জন ম্যালেরিয়া রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে তিনজন রোহিঙ্গা। বাকিরা রোহিঙ্গা শিবিরের আশপাশের বাসিন্দা। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মং টিং ঞো বলেন, ‘ম্যালেরিয়া রোগীর তথ্য সংগ্রহ করে দেখা যায়, অধিকাংশই পাশের পার্বত্য এলাকায় গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে। মারা যাওয়া রোহিঙ্গারাও আক্রান্ত হওয়ার আগে রাঙামাটি ও বান্দরবানে অবস্থান করছিল। আক্রান্ত হওয়ার পর তারা যথাসময়ে চিকিৎসা নেয়নি। অনেকটা শেষ সময়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি হয়।’
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের চিকিৎসা সমন্বয়ক আবু তোহা ভূঁইয়া বলেন, ‘আশ্রয়শিবিরে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সমন্বয়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
অসচেতনতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদুল হক। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি রোগ নির্ণয় করে দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা গ্রহণের জন্য প্রচার-প্রচারণা, ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়াবিষয়ক সচেতনতা ও সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনতে পর্যটন শহর কক্সবাজার, রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির ও আশপাশের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জেলা প্রশাসন স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একাধিক সভা করেছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন, ‘ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি মশার প্রজনন স্থান ধ্বংস করতে কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া নালা-নর্দমা পরিষ্কার এবং ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম নিয়মিত রয়েছে। সুত্র,আজকের পত্রিকা
পাঠকের মতামত