প্রকাশিত: ২৫/০৬/২০২২ ৯:৪৪ এএম
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি
রাজধানীর কমলাপুর থেকে চার হাজার ইয়াবাসহ দূরপাল্লার একটি বাসের চালককে গত ১৭ জুন গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ইয়াবা পরিবহন করার কারণে বি-বাড়িয়া এক্সপ্রেসের বাসটিও জব্দ করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার বাস চালকের নাম রুবেল মিয়া। ডিবির রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) জাবেদ ইকবাল বলেন, কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা বি-বাড়িয়া এঙপ্রেসের বাসে করে ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে আসা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। এই তথ্যের ভিত্তিতে কমলাপুর এলাকায় বাসটি তল্লাশি করে চালকের আসনের পেছনে বিশেষ কৌশলে লুকানো অবস্থায় চার হাজার ইয়াবা জব্দ করা হয়। অভিযানের সময় চালক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন জানিয়ে জাবেদ ইকবাল আরও বলেন, মাদক পরিবহনের অভিযোগে রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা রয়েছে। তিনি কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মাদক এনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করতেন বলে স্বীকার করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা করা হয়েছে।

গত ৮ মে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল নগরীর শিকলবাহা এলাকার কক্সবাজার টু চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপর একটি বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন করে মোহাম্মদ আলম (৩৮) এবং আলী আহম্মদকে (৩২) আটক করে। পরবর্তীতে তাদের তথ্য মতে বাসের পেছনের টেইল লাইটের ভেতরে বিশেষ কৌশলে লুকানো অবস্থায় ২০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার এবং মাদক বহনকারী বাসটি জব্দ করা হয়। দূরপাল্লার পরিবহন সোহাগ স্ক্যানিয়া গাড়ির চালক হওয়ার সুবাদে হরহামেশা আনিছুল হক ওরফে দুলাল এই রুটে গাড়ি চালানোর দায়িত্ব পেতেন। রাতারাতি ধনী হবার নেশায় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হাত মেলান। কঙবাজার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে ঢাকায় পৌঁছে দিয়েই মোটা অঙ্কের টাকা পেতেন দুলাল। গত বছর ২০ অক্টোবর সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর মালিবাগ ডিআইটি রোডের নবাবী খানাপিনা রেস্তোরাঁর সামনে থেকে ২০ হাজার পিস ইয়াবাসহ তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-২। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে দুলাল জানিয়েছে, অভিজাত গাড়ির চালক হিসাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে খুব সহজেই ইয়াবা পাচার করা যায়। এই চালানটি সরবরাহের জন্য তাকে ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হতো। এই লোভেই তিনি চালানটি কঙবাজার থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এর আগেও তিনি বেশ কয়েকটি বড় বড় ইয়াবার চালান ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন। র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আনোয়ার উজ জামান জানান, গ্রেপ্তার দুলাল সোহাগ স্ক্যানিয়া গাড়ির চালক। ২০ হাজার পিস ইয়াবা সে তার সঙ্গে থাকা ব্যাগের মধ্যে করে ঢাকায় নিয়ে এসেছিল। পরিবহন থেকে নেমে মাদকের চালানটি সরবরাহ করার সময় তাকে আটক করা হয়। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা সোহাগ পরিবহন মালিকের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। তারা এই মাদক পাচারের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। সেজন্য আমরা ওই বাসটি জব্দ না করে শুধু চালক দুলালকে গ্রেপ্তার করি।

রুবেল মিয়া, আলম আলী কিংবা দুলাল-ই শুধু নয়; কঙবাজার-ঢাকা-কঙবাজার, বাস চালকদের কাছে একটি লোভনীয় রুট। কারণ ইয়াবা আর কাঁচা টাকা। দেশের সকল নামিদামি ও বিলাসবহুল পরিবহনের চালকরা এই রুটে গাড়ি চালাতে চান। তারা সন্দেহের ঊর্ধ্বে থেকে রাজধানীতে নিয়ে আসেন ইয়াবা। চালান সরবরাহের বিনিময়ে পান মোটা অংকের টাকা। ‘গাড়ি চালক’ পেশাকে সামনে রেখে এভাবেই মাদক সম্রাটদের সঙ্গে গড়ে উঠছে তাদের সখ্যতা। প্রায়শই চট্টগ্রাম ও ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হচ্ছে দূরপাল্লার বিভিন্ন পরিবহনের কঙবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকা রুটের চালক, হেলপার, সুপারভাইজার।

পরিবহন কোম্পানির মালিকদের চালক-হেলপার-সুপারভাইজার নিয়োগের বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করায় মাদক ব্যবসায়ীরা নিত্যনতুন রুটে মাদক পাচার করছেন। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে তারা বর্তমানে বিলাসবহুল বাস বেছে নিয়েছেন। এছাড়া বাসের মালিকরা চালক ও সহকারীদের নিয়োগের সময় তাদের ব্যক্তিগত তথ্য, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি জমা নেন না। জমা নিলেও সেগুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করেন না। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের নজরদারিতে রাখতে পারছে না। তিনি বলেন, নিয়োগের আগে বাসচালক এবং তাদের সহকারীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা উচিত।

যাত্রীবাহী বাসগুলোতে যাত্রীবেশে কিংবা চালক-সহকারীদের সহায়তায় বিভিন্ন জায়গায় অভিনব কৌশলে লুকিয়ে আনা হচ্ছে এসব মাদক। একেকটি চালান বাসে করে রাজধানীতে পৌঁছে দিতে পারলেই মিলছে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জব্দ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবহনের বাস। এছাড়া গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ এসব তথ্য জানতে পারছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

ঢাকা থেকে কঙবাজার, কঙবাজার থেকে ঢাকায় যাত্রীবাহী পরিবহনের চলাচলে ৬৩টি কোম্পানি রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন চলাচল করে বিপুল সংখ্যক যাত্রীবাহী বাস। এসব বাসে যাত্রীবেশে যেমন মাদক রাজধানীতে আসছে, আবার চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারদের প্রলোভন দেখিয়েও বিভিন্ন অভিনব কৌশল নিয়ে বহন করা হচ্ছে মাদক। পরিবহন সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, এ ধরনের মাদক পরিবহন বন্ধে পরিবহন মালিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং শ্রমিক নেতাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে। তা না হলে পরিবহন সেক্টরে আরও ভয়াবহ অবস্থায় পড়তে হবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, এসব ঘটনায় বেশিরভাগ সময়ে মালিকরা জানেনও না। সাধারণত স্বল্প সময়ে অধিক টাকা আয়ের প্রলোভনে পড়েই অনেক পরিবহন শ্রমিক এ ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়ছে। ধরা পড়ার পরে তাদের ঠাঁই হচ্ছে কারাগারে। কারাভোগের পরও অনেকেই আবার বিভিন্ন পরিবহনে গাড়ি চালাচ্ছেন এবং একই কাজ করছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ইয়াবার চালান নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিলে একেকটি ট্যাবলেটের জন্য সাত থেকে ১০ টাকা করে পান পরিবহনকারী। পরিবহন শ্রমিকরা নিজেরাই চোরাচালানে জড়িত হয়ে পড়ায় তা প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য। কারণ যানবাহন সম্পর্কে শ্রমিকদেরই সবচেয়ে বেশি জানাশোনা থাকে। তাই তাঁরা খুব সহজেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিতে পারেন। সু্ত্র: আজাদী

পাঠকের মতামত

খেলাভিত্তিক শিক্ষায় ব্র্যাকের তথ্য বিনিময় অনুষ্ঠান

শিশুদের খেলাভিত্তিক শেখা, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ও মনোসামাজিক বিকাশ নিশ্চিতে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ...

১২ ফেব্রুয়ারি ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া ওয়াজ মাহফিল নিষিদ্ধ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ধর্মীয় প্রচার কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। ...

জামিন বাতিল, মহেশখালীর তোফায়েল হত্যা মামলায় ৭ জন কারাগারে

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ার মোহাম্মদ শাহ ঘোনা গ্রামের বাসিন্দা জুলাই অভ্যুথানে নিহত শহীদ তানভীর ছিদ্দিকীর ...

ফেসবুক পোস্ট দিয়ে ছাত্রশক্তি নেত্রীর পদত্যাগ‘জুলাইয়ে থানার বাইক চোরের কাছে অনেক সময় হেরে যাই’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্রশক্তি কক্সবাজার জেলা শাখার সদ্য ঘোষিত নতুন কমিটি’র ...