
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ব্যাপক ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন শিবির-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের সাদিক কায়েম। একই প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে বড় দূরত্ব গড়ে জিতেছেন এস এম ফরহাদ হোসেন। এই দুই শিবির নেতার পাশাপাশি সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদেও জয়ী হয়েছেন একই প্যানেল ও সংগঠনের মুহা. মহিউদ্দিন খান।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করেন ডাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
ভিপি পদে ২২ নম্বর ব্যালটে সাদিক কায়েম ভোট পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২। ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে এস এম ফরহাদ হোসেন পেয়েছেন ১০ হাজার ৭৯৪।
শীর্ষ তিন পদে জয়ের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ঐতিহাসে এই প্রথমবার ডাকসুর নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেল ইসলামী ছাত্রশিবির। এর আগে কয়েকবার নির্বাচনে অংশ নিলেও কখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে পরেননি এই সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শক্তির প্রকাশ ঘটিয়ে আত্মপ্রকাশ করে ইসলামী ছাত্রশিবির। ব্যাপক সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর মধ্যেই ডাকুস নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয় সংগঠনটি। নির্বাচন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও আন্তরিক হওয়ায় ভোটমুখী হয় ডাকসু। শেষপর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ব্যাপক নিরাপত্তা বয়ল তৈরি করে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটা ভোটগ্রহণ হয়।
আটটি কেন্দ্রে আট শতাধিক বুথে ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষে রাত দেড়টার দিকে ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও ছাত্রী মিলে মোট ১৮টি হল। একে একে ফলাফল ঘোষণা করা হয়, যা শেষ করতে সকাল হয়ে যায়।
ভিপি পদে শিবিরের সাদিক পেয়েছেন ১৪ হাজার ৮১০টি ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৯৯টি ভোট।
জিএস পদে শিবিরের ফরহাদ পেয়েছেন ১০ হাজার ৭৯৪টি ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন ছাত্রদলের তানভীর বারী হামিম, যিনি পেয়েছেন ৫ হাজার ২৮৩টি ভোট।
তাতে ভিপি, জিএস ও এজিএসের সঙ্গে ডাকসুর ২৮টি পদে চূড়ান্ত ফলাফল জানানো হয়। অধিকাংশ পদে জয় পেয়েছে শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা। বেশিরভাগ হল সংসদেও জয় পেয়েছে শিবির-সমর্থিত প্যানেল।
এবার ৩৭তম ডাকসু নির্বাচন হলো। এতে ছাত্র-ছাত্রী মিলে মোট ভোটার ছিলেন ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন।
মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ শেষে ডাকসু নির্বাচন কমিশন জানায়, এবার ভোট পড়েছে ৭৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
ভোটের ফল ঘোষণা শুরু হওয়ার পর থেকে আলোচিত ভিপি প্রার্থীরা তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতে থাকেন।
ভিপি পদে প্রার্থিতা করা ছাত্রদলের আবিদ ডাকসু নির্বাচন ‘প্রহসন’ ও ‘কারচুপির নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। অবশ্য জিএস পদে লড়াই করা ছাত্রদলের হামিম শিক্ষার্থীদের রায়কে সম্মান জানানোর আহ্বান রাখেন।
ভিপি পদে আলোচিত উমামা ফাতেমাও ভোটের ফল বর্জন করে ফেসবুকে একাধিক স্ট্যাটাস দেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিবিরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন। শিবিরকে ‘বেঈমান’ আখ্যা দিয়ে পোস্ট করেন তিনি।
জিএস পদে আলোচিত মুখ মেঘমল্লার বসু একাধিক পোস্ট করে নির্বাচনের সমালোচনা করেন। তিনি লেখেন, “ভোটের নামে প্ল্যানড ইঞ্জিনিয়ারিং চলতেসে। সবই খবর পাইতেসি। যে ধারা অব্যাহত আছে তাতে ডিটেইল রেজাল্ট দেখলে আপনারা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেরাই বুঝবেন।”
ভিপি পদে বেশ আলোচনায় ছিলেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) নেতা আবদুল কাদের। তিনি ফেসবুকে লেখেন, “ভিসি এবং প্রক্টরকে অভিনন্দন জানিয়ে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আলাপ এখানেই শেষ করলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শুভকামনা, শিক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা। ঢাবি এবং দেশের মানুষের যেকোনো সংকটকালে আমি আছি, যেমনটা বিগত দিনে ছিলাম।”
কারচুপি ও বেঈমানির অভিযোগ সামনে এলেও ডাকসু নির্বাচনে কিছু অব্যবস্থাপনা থাকলেও বড় কোনো অসঙ্গতি ছিল না বলে মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সংগঠনটি সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নির্বাচনকে অগ্রহণযোগ্য বলা যায় না।
পাঠকের মতামত