প্রকাশিত: ১৫/০৫/২০২২ ৯:৫৩ এএম

নাম তার হুরী জন্নাত। পিতার নাম আহমদ কবির। মাতার নাম আয়াতুন নাহার। জন্ম তারিখ: ২২-০৯-১৯৯৭ ইং। কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার পদে নিয়োগ পেয়েছে। পার্টনার হেলথ ডেভলপমেন্ট নামক একটি এনজিও প্রকল্পভিত্তিক জনবল নিয়োগ দিয়েছে। ওই এনজিও’র অধীনে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে নিয়োগ পান হুরী জন্নাত। তবে কাগজে কলমে হুরী জন্নাত স্বাস্থ্য কর্মী। বাস্তবে তিনি গৃহবধূ। চাকুরী করেন তার ছোট বোন শাহেদা জন্নাত। দ্ইু বোনের চেহারা দেখতে একই রকম। শারীরিক গঠন ও সৌন্দর্যও দুই বোনের প্রায় মিল। এক বোন বিবাহিত। আরেক বোন অবিবাহিত। হুরি জন্নাতের স্বামী পেকুয়ায় সরকারী কর্মজীবি।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিদর্শক (এফপিএ) হুরি জন্নাতের স্বামী। নাম তার মো: ইব্রাহীম। এনজিও সংস্থা ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের যৌথ সমন্বয়ে প্রান্তিক জনগোষ্টীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের কাজ চলমান রয়েছে। ওই সুবাধে পরিদর্শক ইব্রাহীম তারর স্ত্রীকে চাকুরী পাইয়া দেন।
তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পার্টনার হেলথ ডেভলপমেন্টের চাকুরীজীবি ইব্রাহীমের স্ত্রী হুরি জন্নাত। মাঠে চাকুরী করেন ইব্রাহীমের শ্যালিকা অবিবাহিত শাহেদা জন্নাত। কমিউনিটি ক্লিনিক (সিসি) উত্তর মেহেরনামা তেলিয়াকাটাসহ পেকুয়া সদরের উত্তর ও পূর্ব অংশে মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করেন শাহেদা জন্নাত। তথ্য প্রমাণে সবকিছুতেই এনজিও সংস্থার স্বাস্থ্য কর্মী হুরি জন্নাত। তার বোনের চাকুরীটি করছেন শাহেদা জন্নাত।

এদিকে খোদ এনজিওতে এ ধরনের ফক্সি জনবল দিয়ে চাকুরীর এ খবর সর্বত্রে জানাজানি হয়। এতে করে মানুষের মাঝে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। স্ত্রীর নাম আছে কাজ করছে শ্যালিকা। শ্যালিকাকে স্ত্রী পরিচয় দিচ্ছে ফক্সি দিয়ে। ওই কান্ডের মূল হোতা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো: ইব্রাহীম। তিনি এনজিও সংস্থার এক জৈষ্ঠ্য কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ফক্সি চাকুরী করাচ্ছেন শ্যালিকাকে দিয়ে।
এদিকে পার্টনার হেলথ ডেভলপমেন্টের জনবল নিয়োগ নিয়ে ঘুষ বাণিজ্যের তথ্য ফাঁস হয়েছে। সরকারী চাকুরীজীবি মো: ইব্রাহীম ও পিএইচডির প্রতিনিধির মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক গভীর। তারা দুইজনই জনবল নিয়োগের সময় হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের অর্থ। এনজিও সংস্থা পিএইচডি পেকুয়া উপজেলায় ১০ জন স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ দেন। স্বাস্থ্যসেবা পৌছিয়ে দিতে এনজিও সংস্থাগুলো মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পভিত্তিক নারীদের জনবল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
তথ্য সুত্র জানা গেছে, কর্মীদের অর্থের যোগান দেন এনজিও সংস্থা। বৈদেশিক অর্থ সহায়তায় ওই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে জনবল নিয়োগ ও কার্যক্রম তদারকী হচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও এনজিও সংস্থার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে। জনবল নিয়োগের জন্য আছে কমিটি। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের জেলার উপপরিচালক ও উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ওই কমিটিতে জনবল নিয়োগ দিতে সুপারিশ করে। এর ভিত্তিতে কার্যক্রম চলে এনজিও সংস্থার।
সুত্র জানায়, ১০ জন জনবল নিয়োগের সময় নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে। প্রতিজনের কাছ থেকে ২০ থেকে নিয়েছেন সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের দুইজন পরিদর্শক ঘুষ বাণিজ্যের প্রধান হোতা। এদের মধ্যে মো: ইব্রাহীম অন্যতম। পরিদর্শক মুবিনুল হকও ওই কান্ডে জড়িত এমন তথ্য দিয়েছেন অনেকেই।
অভিযোগ সুত্রে জানান, পিএইচডির কয়েকজন নিয়োগপ্রাপ্ত নারীকে ছাটাই করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের হয়রানি ও হুমকি ধমকি দিয়ে এদেরকে চাকুরী থেকে বিতাড়িত করা হয়। আবার স্বপদে দ্রæত সময়ের মধ্যে নেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মী। শূন্যপদে পুনরায় নিয়োগ দিতে নেওয়া হচ্ছে আবারো ঘুষ।
স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ পেয়েছেন এমন একজন নারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, পিএইচডির চাকুরীতে নিয়োগ পাওয়ার জন্য তিনি ঘুষ দিয়েছেন ৪০ হাজার টাকা। ওই কর্মীর নাম আফিয়া সোলতানা মিলি। তিনি এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান, আমি চাকুরী নিয়েছি ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মো: ইব্রাহীমকে আমি চাকুরীর জন্য ঘুষ দিয়েছি। নিয়োগের আগে তারা অনেক কিছু বলেছিল। বলছিলেন এনজিও’র এ চাকুরী দ্রæত সময়ে সরকারী হয়ে যাবে। তাই সরকারী চাকুরী প্রলোভনে পড়ে এত টাকা দিয়েছি। সায়েদা আফরিন জানান, আমিও এখন চাকুরী করছি না। এর বাইরে তিনি আর কিছু বলতে চাননি।
এ ব্যাপারে পার্টনার হেলথ ডেভলপমেন্টের নিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী হুরি জন্নাত জানান, আমি এ ব্যাপারে কিছুই বলবো না। আপনারা আমাকে প্রশ্ন না করে সুপারভাইজার মিঠু সাহেবের সাথে কথা বলুন।
এ ব্যাপারে পার্টনার হেলথ নামক এনজিও সংস্থার প্রতিনিধি রউফুল আলম মিঠু জানান, এখানে টাকা নেওয়ার কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কর্মী নিয়োগ হয়েছে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে। এখানে নিয়োগ কমিটি থাকে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের চাকুরীতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
হুরি জন্নাতের চাকুরী তার বোন শাহেদা জন্নাত করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মিঠু জানান, বিষয়টি আমি জানি না। একজনের চাকুরী আরেকজন করতে পারেনা। হুরি জন্নাত ইব্রাহীমের স্ত্রী। তবে শাহেদা জন্নাত নামক কাউকে তিনি চিনেন না বলে জানিয়েছেন।
ইউএনএফপিয়ের জৈষ্ট্য কর্মকর্তা রবিউল জানান, বড়বোনের চাকুরী ছোট বোনে করছে এ ধরনের প্রমাণ পেয়ে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।
পেকুয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার জসিম উদ্দিন মো: ইউসুফ জানান, এখানে জনবল নিয়োগ দেন এনজিও। বিষয়টি উনারাই ভালভাবে বলতে পারবেন। আমি এ বিষয়ে বেশি কিছু বলছি না।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কক্সবাজারের উপপরিচালক পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য জানান, পেকুয়ায় কিছু সমস্যার কথা শুনেছি। বিষয়টি আমলে নিয়েছি। অসংগতি থেকে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়োগ, পরীক্ষায় অনুপস্থিত থেকেও উত্তীর্ণ!

কক্সবাজারে স্বাস্থ্য সহকারীসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষাকে ঘিরে গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষা ...

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যশোরে ৮.৮ ডিগ্রি, টেকনাফে সর্বোচ্চ ৩১

শীতের তীব্রতা বাড়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে দেশের ...

১৩ রোহিঙ্গার জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি, ইউপি উদ্যোক্তার স্বামী কারাগারে

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ভুয়া সিল–স্বাক্ষর ব্যবহার করে ১৩ জন রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্মনিবন্ধন তৈরির ...

খেলাভিত্তিক শিক্ষায় ব্র্যাকের তথ্য বিনিময় অনুষ্ঠান

শিশুদের খেলাভিত্তিক শেখা, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ও মনোসামাজিক বিকাশ নিশ্চিতে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ...