প্রকাশিত: ১৮/০৩/২০১৭ ৯:১৩ এএম

উখিয়া নিউজ ডটকম::
উখিয়ায় ভয়াবহভাবে বেড়েছে ইয়াবার আগ্রাসন। পাড়ায় মহল্লায় গড়ে উঠছে ইয়াবা ব্যবসায়ি। এমনকি এক ঘরে সবাই করছে ইয়াবা ব্যবসা। ছোট, কম বয়সী শিশু,কিশোর, এমনকি বয়স্ক মানুষও জড়াচ্ছে এই মরণ নেশা ইয়াবা পাচারে।বিশেষ করে জড়িয়ে পড়ছে উঠতি বয়সি যুবকেরা।এসমস্ত তথাকথিত স্মার্ট যুবকেরা বিভিন্ন দামি ব্রান্ডের মটর সাইকেল ব্যবহার করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো উখিয়া উপজেলা।এই ব্যবসায় ইদানিং বৃদ্ধি পাচ্ছে সুন্দরী নারীদের অংশগ্রহণও। তাদের রয়েছে বড় বড় গডফাদার। কাঁচা টাকা হাতে থাকায় তারা কাউকে পরোয়া করেনা। এমন কোন অপরাধ নেই যে তারা করছেন না। এমনকি ইয়াবা ব্যবসায়িদের ভয়ে এখন স্থানিয়রাই তটস্থ থাকে। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। মাঝে মধ্যে অনেকে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও কিছুদিন পরেই বেরিয়ে আসে। সচেতন মহলের মতে দ্রুত বেড়ে যাওয়া ইয়াবার ভয়াবহ আগ্রাসন বন্ধ করা না গেলে আমাদের ভবিষ্যত খুবই অন্ধকার হয়ে পড়বে। তাই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিরোধ করা দরকার।
উখিয়ার বিশিষ্ট সমাজসেবকও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মাস্টার আবদুল হক বলেন, ইয়াবার ভয়াবহ আগ্রাসন এখানে এত বেশি বাড়ছে যা অস্বাভাবিক। এখানে প্রতি ঘরে কেউ না কেউ এখন ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত বলে লোকজন বলছে। এখানে মায়ানমার থেকে বিভিন্ন সময়ে আসা রোহিঙ্গাদের কারনেও দিন দিন ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ইয়াবার পাচার।
উখিয়ার পালংখালী,বালুখালী,কোটবাজার,সোনার পাড়া ও মরিচ্যার অনেক স্থানিয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সবাই ইয়াবা ব্যবসায়িদের দাপটের কাছে এখন অসহায়। তাদের দাবী এলাকার কয়েক শত উঠতি ছেলে এখন ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। তারা সবসময় রাস্তাঘাটে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আর তাদের কিছু বলাও যায় না। উল্টো সম্মানহানী করে, এর মধ্যে বেশিরভাগই মটর সাইকেল চালায় অথচ তাদের বাব-দাদাদের এক সময় জীবিকা নির্বাহ করতে নুন আনতে পান্তা ফুরাত। মূলত ইয়াবার টাকা বেশি পাওয়ায় সবাই এখন লেখাপড়া থেকে ঝড়ে পড়েছে। এর কারনে এলাকায় অপরাধ প্রবনতাও বেড়েছে।মরিচ্যার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাফর হাজ্বী বলেন,ইয়াবার কারনে প্রতিনিয়ত ঘটছে চুরি-ডাকাতি। আসলে ইয়াবার ভয়াবহ আগ্রাসনের কারনে সমাজে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে।
উখিয়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতিও বর্তমান জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোলতান মাহমুদ চৌধুরী বলেন, উখিয়াবাসী হিসাবে আমাদের যে গর্ব ছিল সেটা এখন ইয়াবার কারনে নষ্ট হওয়ার পথে।তিনি আরও বলেন, ইয়াবার ভয়াবহ আগ্রাসন ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামেগঞ্জেও। মুলত আগে যারা ইয়াবা ব্যবসা করেছে তারা রাতারাতি বড়লোক হয়ে গেছে। তাদের দেখে এখন নতুন করে উঠতি বয়সের ছেলেরা ইয়াবা ব্যবসার দিকে ঝুঁকছে। প্রথমে কিছুদিন পাচারকারী হিসাবে কাজ করলেও পরে তারা নিজেরাই এই ব্যবসায় বিনিয়োগ করে এবং নিজেরাই তাতে আসক্ত হয়ে পড়ে। উখিয়ায় এই ধরনের অন্তত কয়েক হাজার যুবক পাওয়া যাবে ইয়াবা আসক্ত। আর কিছু আছে গডফাদার। তাদের সাথে রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনীর দহরম-মহরম সম্পর্ক। আবার তারা অনেকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিতও হয়ে যাচ্ছে। তার দাবী এসমস্ত ব্যবসায়ীও সেবীদের মধ্যে কেউ কেউ মাঝে-মাঝে গ্রেফতার হলেও অল্প দিন পরেই আবার ফিরে আসে। এতে তাদের দল আরো ভারী হয়ে উঠে।
উখিয়া বিশিষ্ট আইনজীবী এড.রবীন্দ্র দাশ রবি বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা, ইয়াবার আগ্রাসনের ভয়াবহতা অনেক বেশি। পেশাগত কাজ ছাড়াও সমাজে দেখছি দিন দিন এর ব্যাপকতা বাড়ছে। এতে আমাদের পরিবারের ছেলেদের নিয়েও খুবই চিন্তাই আছি। যাদের সামর্থ্য আছে বেশিরভাগই ছেলেদের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। আর যারা আছে তাদের অভিভাবকরা খুবই উদ্বিগ্ন। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই ভয়াবহতা বন্ধ করা না গেলে ভবিষ্যত খুবই অন্ধকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে উখিয়ার সাংবাদিক ও মানবাধিকারকমী নূর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, শুধু ইয়াবার কারনে দৈনিক কয়েকটি মারামারিসহ বড় ঘটনা ঘটে। আর কয়েকটি হত্যাসহ আরো কিছু ঘটনা দেখলে জানা যাবে ইয়াবার টাকা নিয়ে ভাগভাটোয়ারা নিয়ে ঘটনা হয়েছে। বর্তমানে রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে অনেক উঠতি বয়সের ছেলেকে দেখা যায় আধুনিক ফ্যাশন নিয়ে চলতে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে তারা কেউ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডিও পাস করেনি। অথচ তারা এখন বেশিরভাগই বিপুল টাকা পয়সার মালিক। এই অবস্থা দ্রুত বন্ধ করা না গেলে সামনের দিনগুলো আরো কঠিন হয়ে উঠবে।উখিয়া বিশিষ্ট রাজনীতিবিদও লেখক আদিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমাদের নিজস্ব পরিচয় এখন গৌণ হয়ে পড়েছে। মানুষ এখন আমাদের চিনে ইয়াবা অঞ্চলের মানুষ হিসাবে। এটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক। ইয়াবার ভয়াবহতার কারনে আমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে তারা ছেলে মেয়েদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে অনেক আগে।এখানকার অবস্থা নতুন করে বলার কিছু নেই। এককথায় বলতে পারি সঠিকভাবে শুদ্ধি অভিযান চালালেও ১০-২০ বছর সময় লাগবে ভাল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে। আর তার জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও আইনশৃংখলা বাহীনি সবাইকে এক সাথে কাজ করতে হবে।

পাঠকের মতামত

মৎস্য খাতের অগ্রযাত্রায় নেদারল্যান্ডস-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগ

মৎস্য খাতের টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে নেদারল্যান্ডস সরকার। বিশেষত কৃষি ও জলজ ...

সন্তান কোলে হেলিকপ্টারে করে বিয়ে, পরকীয়ায় স্ত্রী পালানোর ‘জবাব’ দিলেন স্বামী

দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছেদ এলে অনেকেই ভেঙে পড়েন, অনেকে দীর্ঘ সময় বিষণ্নতায় কাটান। তবে মুন্সিগঞ্জের কামাল ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শান্তি ও নিরাপত্তা জোরদার বিষয়ক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শান্তি ও নিরাপত্তা জোরদার করণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিশেষ ...

নাফ নদের ৩৩ কি.মি. ও সেন্টমার্টিন পর্যন্ত ২০ কিমিতে বসেছে ৬ রাডারসীমান্ত ও সমুদ্রে নজরদারিতে রাডার ড্রোন থার্মাল ক্যামেরা

এবার দেশের সীমান্ত ও সমুদ্র সুরক্ষায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নজরদারি রাডার, ড্রোন ও থার্মাল ক্যামেরা যুক্ত ...

তদন্তের নির্দেশ চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজিকেটেকনাফে হত্যা মামলার এজাহার পাল্টে দিল পুলিশ

কক্সবাজারের টেকনাফে একটি হত্যা মামলার এজাহার পুলিশ কর্মকর্তারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন- এমন অভিযোগে আদালতে মামলা ...