দৈনিক যুগান্তরের প্রতিবেদন

উখিয়ায় ‘ইয়াবাকাণ্ডে’ জড়িত পাঁচ পুলিশ

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৭/১২/২০২৫ ৮:১৫ এএম

জসিম উদ্দিন, কক্সবাজার
র‌্যাব-১৫ এর তিন শতাধিক সদস্যের গণবদলির রেশ কাটতে না কাটতেই কক্সবাজারে এবার এক বিতর্কিত মাদকবিরোধী অভিযান কেন্দ্র করে ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ‘ইয়াবাকাণ্ডে’ জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। ৩০ নভেম্বরের অভিযানে এক দোকান মালিককে ইয়াবাসহ ধরা হলেও তাকে ছেড়ে দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে তার কর্মচারীকে। সেইসঙ্গে আত্মসাৎ করা হয়েছে মাদক ও নগদ অর্থ। অভিযানসংশ্লিষ্ট একাধিক তথ্য-প্রমাণ বলছে, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ইয়াবার প্রকৃত মালিককে থানায় নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়, আর তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নির্দোষ এক কর্মচারীকে ইয়াবা মামলায় আসামি করে কারাগারে পাঠানো হয়। এ অভিযানের এজাহারে সাক্ষী দুজনের বক্তব্য, স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং অভিযানে অংশগ্রহণকারী পুলিশের বক্তব্য-সব কিছু মিলিয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর অসামঞ্জস্য।

৩০ নভেম্বর রাতে উখিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই-নিরস্ত্র) সঞ্জিত কুমার মণ্ডল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে উখিয়া থানায় একটি মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়-রাতে উপজেলা পরিষদের সামনে দায়িত্ব পালনকালে বাদী ‘বিশ্বস্ত সূত্রে’ খবর পান যে, দারোগাবাজার কাঁচাবাজারের পেছনে আশীষ বিশ্বাসের বাড়ির সামনে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী ইয়াবা বেচাকেনার উদ্দেশ্যে অবস্থান করছে। খবর পেয়ে থানার ওসি জিয়াউল হকের নির্দেশনায় চার পুলিশ সদস্যসহ এসআই সঞ্জিত রাত ১১টা ৫০ মিনিটে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে অংশ নেওয়া অন্যরা হলেন-এসআই ফজলে রাব্বী ইশান, কনস্টেবল লিমন, কনস্টেবল মাহবুব ও কনস্টেবল শরীফ।

এজাহারে দাবি করা হয়-পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর সময় রাজাপালংয়ের চাকবৈঠা এলাকার জাফরের ছেলে মোহাম্মদ হারুনুর রশীদকে ধরা হয়। পরে তার প্যান্টের পকেট থেকে ৬০০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। পরদিন তাকে আদালতে হাজির করলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু ঘটনাস্থলের বিবরণ বলছে ভিন্ন কথা। এজাহারে যিনি ‘একাই’ গ্রেফতার হয়েছেন বলা হয়েছে, সেই হারুনুর রশীদের মালিক উত্তম বিশ্বাসকেও সেদিন পুলিশ আটক করেছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও এজাহারের দুই সাক্ষী। উত্তম বিশ্বাস দক্ষিণ স্টেশনে ‘বাদল ক্রোকারিজ’ নামের একটি দোকানের মালিক। সেখানে কর্মচারী হিসাবে কাজ করতেন হারুনুর রশীদ।

প্রথম সাক্ষী (অডিও/ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে) জানান, আমাকে ঘটনাস্থলে ডেকে নিয়েছিলেন একজন কনস্টেবল। আমার অনিচ্ছাসত্ত্বেও সাক্ষী বানানো হয়েছে। সেখানে উত্তম, আশীষ, তাদের স্ত্রী আর হারুন ছিল। পুলিশ হারুনের পকেট থেকে তিনটি প্যাকেট বের করে আমাকে খুলতে দেয়, যা ভেতরে ইয়াবা ছিল। তিনি আরও বলেন, ইয়াবা কার-জিজ্ঞেস করলে হারুন তার দোকান মালিক উত্তমকে দেখিয়ে দেন। পুলিশ সেটা ভিডিও করে। এরপর উত্তম ও হারুন দুজনকেই থানায় নিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, উত্তমের কাছে থাকা ৩০ হাজার টাকাও পুলিশ নিয়ে যায়। দ্বিতীয় সাক্ষী বলেন, উত্তমকে আমাদের সামনে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে শুনলাম তাকে টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমার সামনেই পুলিশ উত্তম ও হারুনকে ধরে নিয়ে গেছে। পরে বাজারে গিয়ে শুনি সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে উত্তমকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে। এক পানের দোকানি বলেন, পুলিশ সিভিলে ছিল, আমার দোকান থেকে সিগারেট খেয়েছে। উত্তম ও আরেক ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। শুনেছি উত্তমের দোকান থেকে ইয়াবা নিয়ে গেছে। পার্শ্ববর্তী দোকানি বলেন, আমার সিসিটিভিতে পুলিশকে উত্তমের দোকান থেকে একটি শপিং ব্যাগ নিয়ে যেতে দেখা যাবে। তবে উত্তম বিশ্বাস আটক হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও বলেন, হারুন আমার দোকানে কাজ করত। তাকে দেখার জন্য থানায় গিয়েছিলাম। পরিচয় জানতে চাইলে সাহায্য করেছি। কারাগারে থাকা হারুনুর রশীদের বাবা মোহাম্মদ জাফর আলম বলেন, আমার ছেলে পান-সিগারেটও খায় না। দোকানে কাজ করত, পড়ালেখা করত। উত্তম নিজে বাঁচতে তাকে ফাঁসিয়েছে। আমি ছেলের মুক্তি চাই।

এসআই সঞ্জিত কুমার মণ্ডলের সঙ্গে সেদিন ওই অভিযানে অংশ নেন আরও চারজন। প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত এক অডিওতে অভিযানে অংশ নেওয়া এক পুলিশ সদস্যও উত্তমকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে এসআই সঞ্জিত বলেন, এজাহারের বাইরে কোনো কথা বলতে পারব না। নিষেধ রয়েছে। তবে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জিয়াউল হক বলেন, অভিযানের সময় তারা আমার সঙ্গে লাইভ ভিডিওকলে ছিল। উত্তম নামে কাউকে সেদিন থানায় আনা হয়নি। ৬০০ ইয়াবা পাওয়ায় একজনের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। তবু বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

উখিয়া সার্কেল এএসপি রকিবুল হাসান বলেন, আমি ছুটিতে ছিলাম, আপনার মাধ্যমে প্রথম জানলাম। যদি সত্যিই এমন কিছু ঘটে থাকে, জড়িত যে-ই হোক, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১৭ ফেব্রুয়ারি ইয়াবা চালান জব্দ ও অর্থ বণ্টন অনিয়ম নিয়ে যুগান্তরে প্রতিবেদন প্রকাশের পর কক্সবাজারের তৎকালীন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহকে প্রত্যাহার করা হয়।

পাঠকের মতামত

পেশিশক্তির হুমকিকে ভয় পায় না উখিয়া–টেকনাফের যুব সমাজ—মুহাম্মদ শাহজাহান

উখিয়া–টেকনাফে পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে উঠেছে তরুণরা—এমন দাবি রেখেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ...

মাছকারিয়া বিলে বনবিভাগের অভিযান: ৩ হাজার কৃত্রিম বক ও শতাধিক ফাঁদ নষ্ট

কক্সবাজারের উখিয়ার মাছকারিয়া বিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ শিকার সরঞ্জাম ধ্বংস করেছে বনবিভাগ। ...

এসএসএফ সুবিধা জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যদের নয়, উপদেষ্টার বক্তব্যের উদ্বেগ প্রকাশ শাহজাহান চৌধুরীর

এসএসএফ সুবিধা পাবেন শুধুমাত্র খালেদা জিয়া, পরিবারের অন্য সদস্য নয়, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসানের ...