উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯/০৩/২০২৫ ১১:০৩ এএম , আপডেট: ০৯/০৩/২০২৫ ৩:৪৯ পিএম

কক্সবাজার-মিয়ানমার সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়িসহ বিস্তীর্ণ এলাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকছে গরু এবং ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। আর একইভাবে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে যাচ্ছে নানা ধরনের নিত্যপণ্য।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, প্রভাবশালী সিন্ডিকেট মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে গরু এনে প্রকাশ্যে হাটে তুলে ‘বাজার-সিøপ’-এর মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। চোরাই গরু বৈধ করার প্রধান বাজার হিসেবে পরিচিত সীমান্তবর্তী রামু উপজেলার গর্জনিয়া বাজারটি এবার রেকর্ড ২৫ কোটি টাকায় ইজারা নিয়েছেন রামু উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব তৌহিদুল ইসলাম।

গত বছর বাজারটির ইজারা হয়েছিল আড়াই কোটি টাকায়। এবার ইজারা হয়েছে ১০ গুণ বেশি। এ যুবদল নেতার টাকার উৎস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। ফলে গর্জনিয়া বাজার ইজারা এখন ‘টক অব দ্য কক্সবাজার’।

জানা গেছে, নিজের দলীয় লোকজন দিয়ে আগে বাজারটির নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। এ বাজার থেকে গরু বিক্রির কারবার করায় শত শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের খামারিরা।
পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য, গরু ও ইয়াবার চালান লুটের ঘটনা নিয়ে গর্জনিয়ার ‘শাহীন ডাকাত বাহিনী’র সঙ্গে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।

সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যুও হয়। বিজিবির সঙ্গেও কারবারিদের গোলাগুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরুর বহরে আনা হয় ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথ, আইসের বড় বড় চালান। মিয়ানমারের একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী কম দামে গরুর সঙ্গে ইয়াবা ও আইসের চালান পাঠিয়ে বাংলাদেশ থেকে খাদ্যসামগ্রী, জ্বালানি ও ভোজ্য তেল সংগ্রহ করে।

বিভিন্ন সময় চোরাই পথে নিয়ে আসা এসব গরু জব্দ হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যান পাচারকারী সিন্ডিকেট সদস্যরা। বাংলাদেশি টাকা দিয়ে ওপারে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ইয়াবা নিয়ে আসছে। ওই টাকা দিয়েই মিয়ানমারের লোকজন বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে তেল, ডালসহ নিত্যপণ্য। ফলে বিপুল সংখ্যক রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাচার হয়ে আসা এসব গরুকে ‘বার্মিজ গরু’ বলা হলেও সিংগভাগ গরুই থাইল্যান্ড-ভারতের। ভারতীয় গরু আগে উত্তর বঙ্গ দিয়ে প্রবেশ করলেও এখন মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশে আসছে। এসব গরু চোরাচালানে জড়িত রয়েছে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী-মাফিয়ারা। গরু পাচার করতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও রোহিঙ্গারা। তারা গরু পাচার করতে ব্যবহার করছে অস্ত্রশস্ত্র। কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ও গর্জনিয়া এলাকা এবং সীমান্তবর্তী উপজেলার নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিন প্রবেশ করছে শত শত গরু ও মহিষ। জানা গেছে, গর্জনিয়া বাজার সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার দুই দিন হাট বসে। হাটের দিন সীমান্ত থেকে ২০০ থেকে ৩০০ গরু বাজারে তুলে বৈধ করার অনুমতি (সিøপ) দেওয়া হয়। এর মধ্যে হাটের স্লিপের টাকা নেন গর্জনিয়া বাজারের ইজারাদার। গরুর একটি স্লিপের মূল্য ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। বাজার ইজারাদার ছাড়াও স্থানীয় ইউপি সদস্য, রাজনৈতিক নেতা মিলে তৈরি একটি সিন্ডিকেট সীমান্ত দিয়ে গরু পাচারে জড়িত। আরও জানা গেছে, সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে আনা গরু প্রথমে গ্রামের কচ্ছপিয়া, উখিয়ার ঘোনা গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল, ক্যাজরবিল, জোয়ারিয়ানারা, রশিদনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় মজুত করে পরে দেশের অন্য স্থানে পাচার করা হচ্ছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বালুবাসা, কম্বনিয়া, তুমব্রু, বাম হাতিরছড়া, ফুলতলী, চাকঢালা, লম্বাশিয়া, ভাল্লুকখাইয়া, দৌছড়ি, বাইশফাঁড়ি, আশারতলী, জামছড়ি এবং রামুর হাজিরপাড়া ও মৌলভীরকাটা দিয়েও চোরাই পথে মিয়ানমারের গরু আসছে। সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, পাচার হয়ে আসা গরু ট্রাকযোিগে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রামু উপজেলায় গরু পাচার নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, অবৈধ গরুসহ পণ্যসামগ্রী পাচার রোধে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। অবৈধ গরু পাচার বন্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে চিঠির মাধ্যমে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি সংশ্লিষ্ট দপ্তর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিডি প্রতিদিন

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে পাচারকালে বিপুল খাদ্যসামগ্রী জব্দ, আটক ১০

কক্সবাজারের টেকনাফে সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপ এলাকায় কোস্ট গার্ড অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ খাদ্যসামগ্রীসহ ১০ পাচারকারীকে আটক ...

কক্সবাজারে বিয়ের অনুষ্ঠানে কথা-কাটাকাটি, বিএনপি নেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

কক্সবাজারের টেকনাফে বিয়ের অনুষ্ঠানে বাগবিতণ্ডার পরে ছুরিকাঘাতে ইমদাদ হোসেন (৪৭) নামের এক বিএনপির নেতাকে হত্যার ...