উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে এগিয়ে না আসলে উদ্ভুত দায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। শুক্রবার নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনে ‘রোহিঙ্গা মানবাধিকার সঙ্কট : বাংলাদেশের ভূমিকা’ বিষয়ক এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এতে জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোর করে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের মানবিক সহায়তা প্রদান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা ও এর টেকসই সমাধানের ওপর বক্তব্য দেন।
মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার কারণে বাংলাদেশ যে সব নিরাপত্তা, আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, কোনো বিশেষ মহল যাতে রোহিঙ্গাদের দুর্বলতার সুযোগ নিতে না পারে সেদিকে বাংলাদেশ সরকার সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। এ সঙ্কটর সমাধানে গত বছর জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া পাঁচ দফা সুপারিশের কথা শহীদুল হক আবারো তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের সাথে দ্বিপাক্ষিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। এ সংক্রান্ত সই হওয়া চুক্তিগুলোর বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
শহীদুল হক বলেন, বতর্মানে দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে অবস্থান করছে এবং এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বাংলাদেশ চায় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিজ ভূমিতে নিরাপত্তা এবং পূর্ণ মর্যাদার সাথে ফিরে যাক। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা এবং এই সমস্যার টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের ওপর অব্যাহত চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান শহীদুল হক।
প্রত্যাবাসন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব এবং সম্ভাব্য বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে উপস্থিত রাষ্ট্রদূতদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতেই হবে। কারণ এ সমস্যা তাদেরই সৃষ্টি এবং মিয়ানমারই রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমি।
অনুষ্ঠানে রাশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডস, পেরু, সৌদি আরব, কানাডা, ব্রিটেন, ওমান, সিঙ্গাপুর, ভ্যাটিক্যান, মালদ্বীপ ও মালয়েশিয়াসহ ৫০টির বেশি দেশের রাষ্ট্রদূত এবং প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আরো উপস্থিত ছিলেন জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত ওআইসি’র রাষ্ট্রদূত ড. আগশিন মেহ্দিয়েভ।
এর আগে দুপুরে নিউ ইয়র্কে ইন্টারন্যাশনাল পিস ইনস্টিটিউটের আয়োজনে একই বিষয়ে এক আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব। প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. অ্যাডাম লুপেলের সঞ্চলনায় এ অনুষ্ঠানে জাতিসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ, জাতিসঙ্ঘ ও এর সহযোগী সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, এনজিও, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন। অনুষ্ঠানের আলোচনা পরবর্তী প্রশ্নোত্তর পর্বের মিয়ানমার সঙ্কট সমাধানের বিভিন্ন দিক এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করণীয় বিষয়গুলো উঠে আসে।
উভয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বিদেশী রাষ্ট্রদূত, জাতিসঙ্ঘ ও এর সংস্থাসমূহ এবং আন্তর্জাতিক অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিরা সীমিত সম্পদ ও ছোট আয়তনের দেশ হয়েও রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেয়ার যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করার জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
বিকালে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে “ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন: এ টুল ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট” বিষয়ক এক প্যানেল আলোচনায় সঞ্চলনার দায়িত্ব পালন করেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। এতে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি মিরোস্লাভ ল্যাজাক, নবিক সহায়তা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক ও রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জেফ্রে ডি ফেল্টম্যান বক্তব্য রাখেন।