জসিম উদ্দিন টিপু,টেকনাফ::
প্রতিদিনকার যানজটে নাকাল হয়ে পড়ছে টেকনাফের হ্নীলা বাসষ্টেশন। নতুন করে সড়ক প্রশস্থের পরও ষ্টেশনটিতে আগের চেয়েও বেশী যানজট লেগে থাকায় পথচারীসহ সংশ্লিষ্টদের অনেকটা ভাবিয়ে তুলছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সড়ক উন্নত ও বেশ প্রশস্থকরণ করা হয়েছে ঠিক। তবে সড়কের দু’পাশের ফুটপাত দখলে দোকনাপাট ও সিএনজি-টমটমের পার্কিংস্থল হিসেবে ব্যবহ্রত হওয়ায় যানজটের সমীকরণ থেকে বের হওয়া অনেকটা কঠিন পড়েছে। ফলে “যে লাউ সে কদু”র মতই হ্নীলা বাসষ্টেশনের যানজট সমস্যার সমাধান আপাতত দেখছেন না এখনকার ব্যবসায়ীরা। একবুক হতাশা নিয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের অনেকে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, যানজট নিরসনে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অতীতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় রাতারাতি সড়কের দু’পাশ আবারো দখল হয়ে যায়।
এদিকে হ্নীলা শাহ মজিদিয়া ইসলামীয়া সিনিয়র মাদরাসার নুরানী বিভাগের প্রধান মাওলানা ওসমান গণি মনে করেন, ষ্টেশনের উভয় পাশে (দক্ষিণ-উত্তরে) সিএনজি এবং টমটমের জন্য ২টি নির্দিষ্ট পার্কিং স্থান নির্ধারণ করা ছাড়া হ্নীলাকে যানজটমুক্ত রাখা খুবই কঠিন। এছাড়া ফুটপাত উচ্ছেদ পরবর্তী উপজেলা প্রশাসন কঠোরতা অবলম্বন করলেই হ্নীলা ষ্টেশনের যানজটমুক্ত থাকবে বলে তিনি মনে করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে,সকাল থেকে বিকাল অবধি; হ্নীলা ষ্টেশনের যানজট যেন নিত্য সঙ্গী। এখানকার যানজটে স্কুল-মাদরাসার ছাত্র/ছাত্রী, পথচারী, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ বিরক্ত হয়ে পড়েছেন। পথচারীরা মনে করেছিলেন, সড়ক উন্নত ও প্রশস্থকরণ করায় আর হয়তোবা যানজট পোহাতে হবেনা। কিন্তু সড়ক উন্নয়ন পরবর্তী সময়ে দেখা যাচ্ছে, হ্নীলা ষ্টেশনের যানজটের চিত্র আগের চেয়েও আরো ভয়াবহ। অনেকে ষ্টেশনের মাঝখানে স্থাপিত রোড় ডিভাইডারকে দূষছেন। তাদের দাবী রোড় ডিভাইডার লম্বালম্বি না হওয়ায় উল্টো দিক থেকে ছোট-মাঝারি ধরণের গাড়ী ঘুরতে গিয়েও যানজট দীর্ঘায়িত হয়। তারা উক্ত ডিভাইডারের দক্ষিণে পার্শ্বে আরো ৫০/১০০শ ফুট বর্ধিত করা দাবী জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, হ্নীলা জামেয়া, হ্নীলা শাহ মজিদিয়া, উম্মে সালমা বালিকা মাদরাসা, হ্নীলা হাইস্কুল, আল ফালাহ একাডেমী, প্রি-ক্যাডেট স্কুল, রঙ্গিখালী মাদরাসা, মাঈন উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ, হ্নীলা বালিকা ও জমিরিয়া মাদরাসাসহ অসংখ্যা প্রতিষ্টানের পড়–য়া ছাত্র/ছাত্রীরা প্রতিনিয়ত হ্নীলা ষ্টেশনের উপর দিয়ে যাতায়াত করেন।
জুলাই আন্দোলনের টেকনাফের অন্যতম সংগঠক ও এনসিপি নেতা সায়েম সিকদার জানান, সিএনজি ও টমটমের জন্য নির্ধারিত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ও সড়কের দু’পাশে গড়ে উঠা দোকান সমূহ সুনির্দিষ্ট জায়গায় সরিয়ে দিলেই হ্নীলাকে যানজটমুক্ত করা সহজতর হবে।
হ্নীলা বাজারের ইজারাদার তরুণ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নেতা আবু বক্কর আল মাসুদ জানান, ফুটপাতের অবৈধ দখলদারমুক্ত ও ষ্টেশনের ভেতরে সিএনজি ও টমটম পার্কিং করতে না দিলেই হ্নীলা বাজার আপনা-আপনিই যানজটমুক্ত হবে। আর তিনি হ্নীলাকে যানজটমুক্ত করতে ইউএনও এবং ইউপি চেয়ারম্যানের সর্বোচ্চ সহযোগীতা কামনা করেন।
হ্নীলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বাহাদুর শাহ তপু জানান, রাস্তার দু’পাশে মাটি ভরাট করে অবৈধভাবে ছোট ছোট অহরহ দোকান করা হয়েছে। তার উপর সড়কে সিএনজি এবং টমটম পার্কিংয়ের কারণে হ্নীলা ষ্টেশনে প্রতিনিয়ন যানজট লেগে থাকে। তিনি যানজটমুক্ত করতে সিএনজি এবং টমটমের পার্কিং বাজার বাহিরে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি ফুটপাত দখলমুক্ত করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
হ্নীলা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জহির আহমদ জানান,মুল (প্রধান) সড়কের উপরে টমটম ও সিএনজি পার্কিয়ের কারণে মূলত হ্নীলা ষ্টেশনকে যানজট মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছেনা। হ্নীলা ষ্টেশনে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় বাজার কমিটির পক্ষ থেকে একাধিকবার তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সার্বক্ষণিক ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েনের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন বলে জানান। ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হলে হ্নীলা যানজটমুক্ত হবে। শিক্ষার্থীসহ সকলের দুর্ভোগ লাগব হবে।
টেকনাফস্থ হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মো: নুরুল আবছার জানান,হ্নীলাকে যে কোন মূল্যে যানজটমুক্ত এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হবে। সড়কের উপর গাড়ী পার্কিং করলেই বিধিমত ব্যবস্থা নিবেন জানিয়ে তিনি ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন। উল্টো দিক থেকে সহজে গাড়ী ঘুরানোর কারণে সমস্যা বেশী হচ্ছে জানিয়ে হাইওয়ে পুলিশের এই ওসি হ্নীলা ষ্টেশনে স্থাপিত রোড় ডিভাইডার দক্ষিণ পার্শে¦র অংশ আরো বর্ধিত করার পরামর্শ দেন।
জানতে চাইলে উপজেলা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব, সহকারী কমিশনার (ভুমি) টেকনাফ ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রাকিব হাসান চৌধুরী বলেন, আসলেই হ্নীলা ষ্টেশনের যানজটের বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। এমনকি তিনি নিজেও একজন ওখানকার যানজটের ভুক্তভোগী জানিয়ে জনদুর্ভোগ লাঘবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হ্নীলাকে যানজটমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।##