উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২/০২/২০২৩ ৯:০৬ এএম

এম. বেদারুল আলম

কক্সবাজারে ১২টি পয়েন্টে চালকরা ত্রিমুখী চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ এবং কথিত শ্রমিক নেতারা তুলছে গণহারে চাঁদা। দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসছে এটি। অভ্যন্তরীণ টোকেন ব্যবহার করে মাসে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে মাসোহারা দেয় ৪৩০টি সিএনজি এবং অটোরিক্সা। এছাড়া ৭০টি’র বেশি ডাম্পার প্রতিমাসে ডাম্পার প্রতি ৩০০ টাকা করে মাসোহারা দেয় ট্রাফিক পুলিশকে। চাঁদাবাজিতে নতুন শিকার হচ্ছে টমটম চালকরা। নতুন সিএনজি সড়কে নামলে দিতে হয় আড়াই হাজার টাকা। বদলেছে চাঁদা তোলার ধরনও।
জেলা পরিবহণ মালিক সমিতি, জেলা অটোরিক্সা ও টেম্পু পরিবহন মালিক কমিটির নেতৃবৃন্দ ও ২০ জনের অধিক সিএনজি চালকের সাথে আলাপ করে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তাদের ভাষ্য মতে, শহরের সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে টার্মিনাল এলাকায়। এরপর বেশি চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে শহরতলীর লিংক রোড স্টেশনে। শহরের কলাতলী মোড়, বাজার ঘাটা, জাম্বুর মোড়, হলিডে মোড়, স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকা, ডায়বেটিক পয়েন্ট, লিংকরোড, শহরতলীর রাবার ড্যাম রোডের সম্মুখ প্রান্তে নিত্য চাঁদাবাজির শিকার হয় সিএনজি, অটোরিক্সার চালকরা। মাটি ও বালিভর্তি ডাম্পার লিংক রোড হয়ে শহরে প্রবেশ করে হাইওয়ে পুলিশের নির্দিষ্ট টোকেন এবং মাসোহারার মাধ্যমে।

 

অভিযোগ পাওয়া গেছে, জেলায় বিভিন্ন উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক সিএনজি প্রতিটি ২০০-৩০০ টাকা হারে এবং ৯০টি মিনিট্রাক প্রতিটি মাসে ৩শ টাকা হারে মাসোহারা আদায় করে। মাসের নির্দিষ্ট সময়ে চাঁদার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে সিএনজি আটকে রেখে অনেক সময় মালিককে খবর দিয়ে নির্ধারিত চাঁদার টাকা আদায় করে ছেঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন পিএমখালীর অন্ততঃ ৮জন সিএনজি চালক। এদিকে রুটপারমিট না থাকা , ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা, গাড়িতে নাম্বার প্লেইট না থাকাসহ বিভিন্ন যান্ত্রিকত্রুটি থাকা স্বত্ত্বেও টোকেন বাণিজ্যের মাধ্যমে মাসোহারা নিয়মিত হলে কোন সমস্যা হয়না বলে সিএনজি অটোরিক্সা চালকরা জানান।
জেলা অটোরিক্সা সিএনজি শ্রমিক সংগঠনের এক নেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, প্রতি মাসে একটি সিএনজি থেকে হাইওয়ে পুলিশকে ২০০ টাকা এবং ট্রাফিক পুলিশকে ২০০টাকা করে মোট ৪০০টাকা দিতে হয়। নাম্বারবিহীন কিছু গাড়ি চলার কারণে উক্ত টাকা দিতে হয়। হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের নিয়মিত চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট অনেক চালক গাড়ি চালানো বন্ধ করে পেশা পরিবর্তন করেছে।
রামুর জোয়ারিয়ানালার সিএনজি চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রামুতে হাইওয়ে পুলিশের ৩ জন টাকা তোলার জন্য লোক রয়েছে। তারা টোকেন দিয়ে টাকা নেয় চালকদের কাছ থেকে। পথে হাইওয়ে পুলিশ গাড়ি আটকালে তাকে মেবাইলে ধরিয়ে কথা বলিয়ে দিলে গাড়ি ছেড়ে দেয়।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, মরিচ্যা সিএনজি চালক সমিতির সভাপতি মো: হাশেম নামের ব্যক্তির মাধ্যমে টাকা দিয়ে চলে শতাধিক সিএনজি। গাড়ি প্রতি ৩০০ টাকা দিয়ে হাইওয়ে পুলিশের টোকেন ব্যবহার করে চলছে এসব গাড়ি। এমন কয়কটি টোকেন দৈনিক কক্সবাজারে এসেছে। হাইওয়ে পুলিশের এই টোকেনের মাধ্যমে লাইন ক্লিয়ারেন্সের কথা যদিও অস্বীকার করেছেন সভাপতি হাশেম।
চালকদের অভিযোগ, চাঁদাবাজিতে নতুন করে যোগ হয়েছে রাতের টহল পুলিশও। শহরের বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশকে গাড়ি তল্লাশির নামে কাগজপত্র আটকে রেখে টাকা আদায় করেন হরহামেশাই। খুরুস্কুল প্রবেশের ব্রিজ সংলগ্ন স্থান, বাইপাশ হয়ে একটু পশ্চিমের উত্তরণ এলাকার হাইওয়ে, বাংলাবাজার ছমুদা ব্রিজের পশ্চিম পাশে সিএনজি, অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল, ডাম্পার আটক করে কাগজপত্র তল্লাশি করার নামে হয়রানি করছে রাতের টহল পুলিশ। গত কয়েকদিনে অন্তত ২টি স্পটে টাকা আদায়ের স্থিরচিত্র রয়েছে দৈনিক কক্সবাজারে। স্পট ২টি হলো বিজিবি ক্যাম্প এলাকা এবং লিংকরোড়ের পরে রাবারড্যাম রোড সংলগ্ন প্রধান সড়কে। চাঁদাবাজির শিকার সিএনজি চালক ২ জনই একই এলাকার। একজন টাকা দিতে না পারায় কাগজ জমা দিয়ে পরের দিন টাকা দিয়ে মুক্তি পেয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন।
সড়কের বিভিন্ন স্পটে নিয়োজিত লোকের মাধ্যমে টোকেনের মাধ্যমে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রামু হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মো: মিজবাহ উদ্দীন বলেন- আমরা সড়কে কোন চাঁদা আদায় করিনা। আমাদের কোন অফিসার এখন চাঁদা আদায় করেনা। যে টোকেন ব্যবহার করা হচ্ছে সেটাও আমাদের নয়। গাড়ির ফিটনেস, কাগজপত্র যাছাই এমনকি অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলো দেখভাল করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ফলে অনেক চালক এ জন্য আমাদের দোষারোপ করে এবং হয়রানি মনে করে।
শহরতলীর টার্মিনাল এবং চিহ্নিত স্পটসমুহে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করলে গাড়ি থামিয়ে চাঁদা আদায় সহজে ধরা পড়বে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন টার্মিনাল এলাকায় ৪/৫ জন ব্যবসায়ীর। এমনিতে দ্রব্যপণ্যের উর্ধগতির কারনে চালকদের চলছে টানাপোড়েন সেখানে নিয়মিত চাঁদা দিয়ে গাড়ি চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে।
অসহায় দরিদ্রদের ঘামের টাকা নেয়া এসব অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা এবং শ্রমিকনেতাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা জরুরি।
ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি রোধে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন অসহায় চালক শ্রমিকরা। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে সংঘাত/টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকল আরও ৯ বিজিপি সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ...