আজ আমার জন্মদিন। কালের অথৈ গহ্ববরে নিমজ্জিত হওয়া বেশ কয়েক বছর আগের এমনি একটি দিনে আমি পৃথিবীর আলো বাতাস প্রথম স্পর্শ করি। নিশ্চয় সেই দিনের জন্ম ক্ষণে আমি গলা ফাটিয়ে কান্না করেছিলাম আর আমার জন্মদাত্রী- জন্মদাতা দ্বয় আমার কান্নাকে উপেক্ষা করে হাসি মুখে পরমানন্দে ভবিষ্যত লক্ষ্য নির্ধারণে ছিলেন অতি ব্যস্ত। আমার মুখে কান্না ছাড়া আর কোন ভাষা ছিলোনা। ছলছল চোখে হয়ত দেখেছিলাম চারপাশটাকে আর অবাক দৃষ্টিতে সব কিছু পরখ করতে করতে আবার হয়ত কান্না, কান্নাই যে তখন একমাত্র ভাষা। আমার বাবা-মা আমার কান্নাকে হয়ত আমার ক্ষুধার্তের সংকেত হিসেবে ধরে নিয়েছিলো তাই কোন খাবার আমার জন্য যুতসই সেটাই খুঁজতে কিংবা যোগাড় করতে তাঁরা ছিলেন মরিয়া অথচ তাঁরা কেউই প্রশ্ন করেনি আমার কান্নার পেছনে কি রহস্য প্রোতিত ছিলো !
আমি হয়ত সেদিন কেঁদেছিলাম এই ভেবে আমাকে যে পৃথিবীতে স্থানান্তর করা হলো তা আমার জন্য মোটেই বাস যোগ্য নয়, আমিতো আমার পূর্ববর্ত্তী স্থানেই ভালো ছিলাম। কোন অপরাধে আমাকে জোর করে তোমরা এই বীভৎস পৃথিবীতে ডেকে আনলে ? এই বিশাল প্রশ্নের ভার সইতে না পেরে হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম আর সবাই ভাবলো এই বুঝি ক্ষুধা মিটেছে !
জীবনের অনবরত যুদ্ধে কান্ত আমি,জন্মদিন মনে রাখার সময় কোথায়? তবে একটা প্রত্যয় মনে পুষে রেখেছিলাম যে, আমার জন্মদিনটা বাংলায় পালন করব। সেই হিসেবে রবীন্দ্রনাথের যেদিন জন্মদিনটা ঘটা করে পালন করা হয়,আমি তার দুই দিন পরে
পালন (শুধু স্মরণ করি, পালন করার সময় কোথায়?)করি। আমার প্রত্যয় টা আমি রেখেছি, বুক টা ভরে যায়, আমি মনে প্রাণে বাঙালি।
যাই হোক ফিরে আসি আসল কথায়, ২৬ মার্চ (সেদিন ছিল সোমবার) প্রচন্ড এক কাল বৈশাখী ঝড়ের পূর্বাভাস ঈশান কোনে, প্রচন্ড মেঘ জমেছিল। এদিকে আমার মায়ের শুরু হলো প্রসব বেদনা, বাবা তখন বাসার কাজে ব্যস্ত, আর মা (মানে সাথে আমিও) । সবাই খুব উদ্বিগ্ন। এক ভাইকে খবর পাঠালেন বাবার কাছে কাকে যেন পাঠিয়ে, মোবাইলের কথাই তো চিন্তাই কর যায় না। যাই হোক, বাবা আসার আগেই আমি চলে এলাম এই ধরা ধামে সবাই খুব খুশি যে ছেলে জন্মেছে ।
জন্ম তারিখটা ভাই-বোনেরা যত্ন করে লিখে রেখেছিলেন বাড়ির একটি টালির গায়ে, চক দিয়ে, তা না হলে হয়ত স্কুলের স্যারদের বানিয়ে দেওয়া জন্ম তারিখটাকেই আসল বলে চালিয়ে দিতাম ধন্যবাদ যে আমার মা- বাবা বেশ সচেতন মানুষ ছিলেন।
জীবনের ২৬ টি বসন্ত পেরিয়ে গেছে নিজেকে গুছিয়ে নেবার জন্য, এই বেলায় এসে চিন্তা করি, যে আমাকে পৃথিবীতে পাঠালো তার এবাদত করার জন্য, জীবন গড়তেই যদি এতটা সময় নেই, তাহলে তার কাজ কত করব? তার দেওয়া আলো বাতাস পানি আর এই বয়স পর্যন্ত ভোগ করা নিয়ামত গুলোর যদি হিসাব দিতে হয়, কিভাবে দিব? এই বুঝি জীবন জানিনা সামনে আর কতদিন সময় পাব কিন্তু এই ঝামেলা পূর্ণ জটিল জীবনের ঘানি টেনে কান্ত আমি কিভাবে দাড়াব সেই মহা প্রভুর সামনে? তাই আজ আবার নতুন করে শপথ নেই সেই কবির ভাষায়ঃ যেদিন প্রথম এসেছিলে তুমি ভবে কেদেছিলে তুমি শুধু হেসেছিল সবে ,এমন জীবন করিবে গঠন মরণে হাসিবে তুমি কাদিবে ভুবন...
শুভেচ্ছান্তে ::
ওবাইদুল হক চৌধুরী (আবু)
সম্পাদক
UkhiyaNews.Com