টেকনাফে পিতার নামে ভুয়া আইডি কার্ড দেখিয়ে ভোটার হওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বৃদ্ধ পিতাকে এবারে ভোটার করাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন অভিযুক্তরা। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ সুত্রে জানাগেছে, উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা পশ্চিমপাড়া এলাকার জনৈক আমান উল্লাহ ও ছেনোয়ারা বেগমের মেয়ে ছমিরা আকতার ও ছেলে মো: রিদুয়ান ভোটার হয়েছেন যথাক্রমে ২০১৭ ও ২০১৯ সনের ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময়ে। ভোটার তালিকা অনুযায়ী, সমিরা আকতারের আইডি নাম্বার ২২১৮৯৪০০০৩৫১ ও জন্ম তারিখ ০১/০৮/১৯৯৯ এবং তার ভাই মো: রিদুয়ানের আইডি নাম্বার ২২১৮৯৪০০০৪৪৬ ও জন্ম তারিখ ১৫/০৭/২০০২।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদকালীন নির্বাচন কমিশনে অন্যান্য দলিলাদির পাশাপাশি মা-বাবার আইডি কার্ড জমা দিয়েছেন সমিরা এবং রিদুয়ান। এতে দেখা যায়, বাবা আমান উল্লাহর আইডি নাম্বার(২২১৯০৬৬৬০২৪৭২) ও মা ছেনোয়ারা বেগমের আইডি নাম্বার (১৯৭৩২২১৯০৩১৬৪৭৮০৮)।
এদিকে সমিরা এবং মো: রিদুয়ানের আইডি কার্ড বাতিলের নিমিত্তে নির্বাচন কমিশনে স্থানীয়রা একটি লিখিত আবেদন করেছেন। ওই আবেদনে সমিরার বাবা আমান উল্লাহকে মিয়ানমারের নাগরিক উল্লেখ করা হয়েছে। তারই দাবীর প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সমিরা এবং রিদুয়ান কর্তৃক জমা দেওয়া আইডি কার্ডের মধ্যে বাবা আমান উল্লাহর প্রদত্ত আইডি টোটালি ইনব্লেড। কমিশনের কোথাও ওই আইডির কোন তথ্যই পাওয়া যায়নি। নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা প্রদর্শিত আইডি ভুয়া বলে জানিয়েছেন। এতেই ভুয়া আইডি কার্ড প্রদর্শন করে কৌশলে ভোটার হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট বলে প্রতীয়মান হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবী।
স্থানীয় মোহাম্মদ আলম জানান, আমান উল্লাহ একজন মিয়ানমারের নাগরিক। সে মুচনী এলাকার বশির আহমদ ও বলকিছ খাতুনের মেয়ে ছেনোয়ারা বেগমকে বিয়ে করেছেন ঠিক। বিয়ের পরে সে শাহপরীর দ্বীপ এবং লেদা পশ্চিমপাড়া এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। তার পূর্ব পুরুষসহ সকলে মিয়ানমারের নাগরিক ও রোহিঙ্গা। পিতা আমান উল্লাহ যেহেতু রোহিঙ্গা। সেহেতু তার মেয়ে ও ছেলের বাংলাদেশী আইডি নেওয়ার সুযোগ নেই। অপকৌশল বা বিশেষ কৌশলের মাধ্যমেই হোক বাবার নামে ভুয়া আইডি দেখিয়ে ভোটার তালিকায় অর্ন্তুভুক্ত হওয়ার আদৌ কোন অধিকার নেই। তার দাবী মিয়ানমারের নাগরিক আমান উল্লাহর ছেলে মেয়ে কিভাবে এবং কেমনে ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হলেন? অভিযোগকারী মোহাম্মদ আলম আরো জানান, সমিরার পিতা আমান উল্লাহর বয়স অন্তত: ৭০বছর। এই বয়সে এসে পিতার নামে জাতীয়তা ও জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহের মিশনে নেমেছেন মেয়ে সমিরা। ইতিমধ্যে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জাতীয়তা ও জন্ম নিবন্ধন সনদ কালেকশন করেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
উপরোক্ত বিষয়ে অভিযুক্ত সমিরার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভোটার হওয়ার সময় বাবার আইডি কার্ড দেননি বলে দাবী করেন। আপনার বাবা রোহিঙ্গা না বাংলাদেশী প্রশ্নের জবাবে কিছুটা ইতস্তত বোধ করলেও তিনি বাসায় গিয়ে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।
জন্ম ও জাতীয়তা সনদ প্রদানের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বলেন,জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী জাতীয়তা সনদ প্রদান করা হয়েছে। জন্ম সনদ কি আপনি দিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,এব্যাপারে আমি পুরোপুরি জানিনা। তবে সংশ্লিষ্ট মেম্বার এবং চৌকিদাররা জানবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
পিতার নামে ভুয়া আইডি দেখিয়ে ভোটার হওয়ার বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো: আসিফ মাহমুদ মিনহাজ জানান,আনিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে এবং যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা বিশেষ কমিটির আহবায়ক শেখ মো: এহেছান উদ্দিন বলেন,বিষয়টি অবহিত হয়ে ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে দ্রুত সময়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। পিতার নামে ভুয়া আইডি দেখিয়ে কৌশলে ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্তদের অবশ্যই অবশ্যই বাদ দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।##