
‘ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ ২০২৫’ শীর্ষক আয়োজনে কক্সবাজার জেলার নানা সমস্যা মোকাবিলায় স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত সমাধানের জন্য সৃজনশীল প্রকল্পের ধারণা তুলে ধরেন এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী। এই আয়োজনে অংশ নেওয়া প্রায় ৫০০টি প্রস্তাবিত প্রকল্পের মধ্য থেকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য মনোনিত করা হয় ৫টি প্রকল্পকে।
শুঁটকির আচার তৈরির মাধ্যমে প্রান্তিক জেলেদের আয়ের সীমাবদ্ধতা ও মৌসুমি বেকারত্ব দূর করার সম্ভাবনা তৈরির সমাধানের পথ সৃষ্টির প্রকল্প উপস্থাপন করে প্রথম স্থান অধিকার করেছে ‘স্বপ্নছোঁয়া ডিলাইটস’। এ ছাড়া ইসলামপুরের লবণচাষিদের মৌসুমি বেকারত্ব ও নারীদের আর্থিক অসচ্ছলতা দূর করার লক্ষ্যে ‘সমুদ্র অগ্রযাত্রী’ দ্বিতীয় এবং জেলে সম্প্রদায়ের আর্থিক সংকট ও সিন্ডিকেটের প্রভাব ভেঙ্গে দেওয়ার সম্ভাব্য সমাধানের পথ বাতলে দিয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল ‘দরিয়া’ প্রকল্প। চূড়ান্ত পর্বের অন্য দুটি প্রকল্প ছিল ‘লিভেটিং কক্সবাজার’ এবং ‘সহযাত্রা’।
‘আমার কক্সবাজার, আমার উদ্যোগ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ‘ইমপ্রুভিং স্কিলস অ্যান্ড ইকোনমিক অপরচুনিটিজ ফর দি ওমেন অ্যান্ড ইউথ ইন কক্সবাজার (আইজেক)’ প্রকল্পের আওতায় সোমবার, ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে স্থানীয় একটি হোটেলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কে এ এম মোরশেদ তার বক্তব্যে বলেন, মেধা সবারই আছে। আমাদের তরুণরাও মেধাবী। তবে উন্নত বিশ্বে সুযোগ বেশি থাকে বলে সেখানে যুবসমাজ এগিয়ে যায়। এই আয়োজন আমাদের তরুণদের জন্য এমনই একটি সুযোগ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তরুণরা সফল হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
স্বাগত বক্তব্যে ব্র্যাকের পরিচালক সাফি রহমান খান বলেন, আমাদের তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার নানা পরিকল্পনা দেখতে পাই, কিন্তু সীমিত আর্থিক সামর্থ্য ও মেন্টরশিপের অভাবে তারা নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়। এই বাধাগুলো অতিক্রমে আমরা সবাই ভূমিকা রাখতে পারি।
সমাপনী বক্তব্যে ব্র্যাকের পরিচালক হোসেন ইশরাত আদিব ভবিষ্যতে এই তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় তাদের পাশে থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাহা আবু আমির বলেন, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উদ্ভাবিত সমাধানই সেই এলাকার সমস্যাগুলোর সর্বোত্তম সমাধান। এ ক্ষেত্রে সবার সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া জররি।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মুরশেদ চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারের তরুণদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। উদ্যোক্তাদের বাজারের সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করা এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগগুলোকে উৎসাহিত করতে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স কাজ করে যাবে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কক্সবাজার প্রকল্প কার্যালয়ের প্রধান রুচিকা বেহেল বলেন, এই উদ্যোগগুলোকে কেবল ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা হিসেবে নয়, বরং সমাজে অর্থবহ পরিবর্তন আনার মাধ্যম হিসেবে দেখতে হবে, যার মূল ভিত্তি হওয়া উচিৎ উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতা।
পুরস্কার বিতরণীর আগে ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কে এ এম মোরশেদের সঞ্চালনায় একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
ব্র্যাকের আইজেক প্রকল্পের লিড খন্দকার ফখরুল আলম এই আয়োজনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের মানবিক সংকট ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির (এইচসিএমপি) সহযোগী পরিচালক ও অফিস ইন চার্জ রেজাউল করিম।
এই আয়োজনের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নিক্সন চন্দ্র পাল, ইউএনডিপির ডেপুটি হেড অব ফিল্ড অফিস মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন খান, জাগো নারী লিমিটেডের চেয়ারম্যান শিউলি শর্মা, আবু মুরশেদ চৌধুরী এবং ব্র্যাকের ব্র্যান্ড অ্যান্ড প্রোগ্রাম কমিউনিকেশন প্রধান সারা আফরিন।
উল্লেখ্য, আইজেক প্রকল্পটি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, ব্র্যাক, আইএলও এবং ইউএনডিপি-র যৌথ উদ্যোগ, যা গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে। বাজার উপযোগী দক্ষতা এবং উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, নারী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে স্বনির্ভর করে তোলা এবং তাদের জীবিকা উন্নয়ন এবং টেকসই অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে এই প্রকল্পটি।
পাঠকের মতামত