সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করছে বিএনপি। গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সম্ভাব্য এসব প্রার্থীকে দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য তৎপর থাকতে বলা হচ্ছে। সোমবার বরিশাল বিভাগের কয়েকটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে এ বৈঠক হয়েছে।
অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দলীয় জরিপ ও একাধিক সংস্থার মাঠ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করছেন। সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির সাম্প্রতিক বৈঠকে প্রার্থী মনোনয়ন প্রাথমিকভাবে ঠিক করার দায়িত্ব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ওপর ন্যস্ত করা হয়। তিনি যেসব আসনে একক প্রার্থী আছেন, দলীয় ঝামেলা নেই বললেই চলে, সেসব আসনের নেতাদের এলাকায় নির্বাচনী কাজ শুরুর সবুজ সংকেত দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এরপর প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা স্থায়ী কমিটিতে উপস্থাপন করা হবে। সেখানে আলোচনার পর সংযোজন-বিয়োজন শেষে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। পরে তা সাংগঠনিকভাবে প্রার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হবে। তারপর চূড়ান্তভাবে দলের মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী তালিকা করবে।
বিএনপি সূত্র জানায়, মাঠ পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে ঘরে ঘরে যাচ্ছে। সেখানে বিএনপি পিছিয়ে আছে। স্থানীয় পর্যায়ে দলের প্রার্থী কে– পরিষ্কার না থাকায় নেতাকর্মীরা দ্বিধায় পড়েছেন। এটি কাটিয়ে সবাইকে মাঠে নামাতে প্রাথমিক সবুজ সংকেত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এখন সভা করেও তা বলা হচ্ছে।
গুলশানে বরিশাল অঞ্চলের নেতাদের নিয়ে বসেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এ বিষয়ে জাহিদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বরিশাল বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু সমকালকে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী এবং দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আলোচনার জন্য গুলশান কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল। সেখানে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দুই শতাধিক আসনে প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দেওয়া নিয়ে সমকালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। তাতে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তাদের অধিকাংশের সঙ্গে কথা বলে তথ্য নিশ্চিত করা হয়। গতকাল দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তবে কোনো নেতা এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
রংপুর বিভাগ: লালমনিরহাট-৩ আসনে আসাদুল হাবিব দুলু প্রাথমিক সবুজ সংকেত পেয়েছেন।
রাজশাহী বিভাগ: চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে হারুন অর রশীদ, রাজশাহী-২ আসনে মিজানুর রহমান মিনু, নাটোর-২ আসনে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে বলা হয়েছে।
খুলনা বিভাগ: কুষ্টিয়া-৪ আসনে শেখ সাদীকে নির্বাচনী কাজ করতে বলা হয়েছে। মাগুরা-২ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে দলের শীর্ষ নেতা ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন। তিনি সবাইকে একসঙ্গে নির্বাচনী কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ওই আসনে নিতাই রায় চৌধুরী, কাজী সলিমুল হক কামাল, যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন রয়েছেন।
বরিশাল বিভাগ: পটুয়াখালী-১ আসনে এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, পটুয়াখালী-২ মুনির হোসেন, পটুয়াখালী-৩ হাসান মামুন, বরিশাল-৬ আসনে আবুল হোসেনকে কাজ শুরু করার জন্য বলা হয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগ: শেরপুর-১ হযরত আলী, ময়মনসিংহ-১ আসনে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ময়মনসিংহ-৯ আসনে মামুন বিন আব্দুল মান্নান, নেত্রকোনা-১ ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, নেত্রকোনা-২ ডা. আনোয়ারুল হক, নেত্রকোনা-৩ রফিকুল ইসলাম হেলাল, নেত্রকোনা-৫ আসনে শহিদুল্লাহ ইমরান সবুজ সংকেত পেয়েছেন। কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে সমমনা জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে শরিফুল আলমকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে বলা হয়েছে।
সিলেট বিভাগ: সিলেট-১ আসনে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সিলেট-২ আসনে হুমায়ুন কবির, সিলেট-৩ আসনে ব্যারিস্টার এমএ সালাম, সিলেট-৪ আসনে আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট-৫ ফাহিম আল চৌধুরী, সিলেট-৬ আসনে অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-২ আসনে মিফতাহ উদ্দিন রুমি, সুনামগঞ্জ-৩ আসনে এম কয়ছর আহমদ, সুনামগঞ্জ-৫ আসনে মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান, হবিগঞ্জ-৩ আসনে জিকে গউছ, হবিগঞ্জ-৪ আসনে এসএম ফয়সল, মৌলভীবাজার-৩ আসনে নাসের রহমান, মৌলভীবাজার-৪ আসনে মুজিবুর রহমান মুজিবের নাম জানা গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে কবির হোসেন ভূঁইয়া সবুজ সংকেত পেয়েছেন।
ঢাকা বিভাগ: ফরিদপুর-২ শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৪ আসনে শহীদুল ইসলাম বাবুল, মাদারীপুর-৩ আসনে আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, শরীয়তপুর-৩ আসনে মিয়া নুরুদ্দিন অপু, টাঙ্গাইল-৫ সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে মিজানুর রহমান সিনহা, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে কামরুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আজহারুল ইসলাম মান্নান, ঢাকা-১৪ আসনে শফিকুল ইসলাম মিল্টন, গাজীপুর-৪ শাহ রিয়াজুল হান্নানের বিষয় দলীয় সূত্র অনেকটা নিশ্চিত করেছে।
চট্টগ্রাম বিভাগ: নোয়াখালী-২ আসনে জয়নুল আবদীন ফারুক, নোয়াখালী-৪ আসনে মোহাম্মদ শাজাহান, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে সমমনা বিএলডিপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন সেলিম, লক্ষ্মীপুর-২ আবুল খায়ের ভূঁইয়া, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী এবং কুমিল্লা-২ আসনে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়াকে দল থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। চট্টগ্রাম-৫ আসনে ব্যারিস্টার মীর হেলাল, কক্সবাজার-৪ আসনে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, খাগড়াছড়িতে আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া দলের নির্দেশনা পেয়েছেন।
এক পরিবারের একাধিক সদস্য মনোনয়ন পাবেন না
বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা সমকালকে বলেন, আগামী নির্বাচনে এক পরিবারের একাধিক সদস্যকে মনোনয়ন না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পরও দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কোনো কোনো নেতা নিজের পাশাপাশি পরিবারের অন্য সদস্যের মনোনয়ন নিশ্চিতের চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কুমিল্লা-১ আসনের পাশাপাশি কুমিল্লা-২ আসন মনোনয়ন চাইছেন। এর একটিতে তিনি এবং আরেকটিতে তাঁর ছেলে ড. খন্দকার মারুফ হোসেন নির্বাচন করতে চান।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ঢাকা-৮ আসন এবং তাঁর স্ত্রী ও মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস ঢাকা-৯ আসনে মনোনয়ন চাইছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকা-৩-এর পাশাপাশি আরও একটি চাইবেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম-১১ আসনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম-১০ আসন চাইবেন তাঁর ছেলে ইসরাফিল খসরুর জন্য।
চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রয়াত নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান কাজ করছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান ঢাকা-২ আসনের পাশাপাশি আরও একটি আসন চাইবেন তাঁর ছেলে ইরফান ইবনে অমির জন্য। তারা পরিবারের সদস্যদের দিয়ে সংশ্লিষ্ট আসনে কাজও করাচ্ছেন।
সুত্র,সমকাল