জসিম উদ্দিন টিপু,টেকনাফ::
টেকনাফে অবাধ ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদুৎ সেবা নিশ্চিত করার দাবী ছিল দীর্ঘদিনের। গ্রাহকদের দাবীর প্রেক্ষিতে সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ গ্রীড উপকেন্দ্র স্থাপনের জন্য কার্যক্রম শুরু করেছেন অনেক আগে থেকেই। তবে বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক সমস্যার কারণে গ্রীড উপকেন্দ্র নির্মাণের কাজ দেরীতে হচ্ছে তেমনটি দাবী করা হলেও। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকদের সুবিধার্থে গ্রীড উপকেন্দ্রের কাজ যথাসময়ে শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবী।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বেশ কয়েকবছর আগেই উপজেলার দক্ষিণ হ্নীলা মৌজার আওতাধীন আলীখালী এবং রঙ্গিখালীতে বিশাল এলাকাজুড়ে ২০১৭ সনে ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সোলার প্যানেল তথা সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। ওই প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রতিনিয়ত জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হচ্ছে। টেকনাফে গ্রীড উপকেন্দ্র না থাকায় স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিপূর্ণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এখানকার গ্রাহক ও সাধারণ মানুষ। এদিকে গ্রীড উপকেন্দ্র বাস্তবায়িত হলে এখানকার মানুষের বিদ্যুৎ সেবা অবাধ এবং নিরবিচ্ছিন্ন হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়। পাশাপাশি টেকনাফে গড়ে উঠবে ছোট বড় শিল্প কারখানা। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে সীমান্তবর্তী এই উপজেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রগতি বাড়বে বলে শিল্প উদ্যোক্তারা মনে করছেন।
অনুসন্ধানে জানাযায়, ২০২৩ সনে রঙ্গিখালীস্থ সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের নিকটবর্তী স্থানে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে ১৫বিঘা তথা ৫একর জমি অধিগ্রহণ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। উক্ত জমিতে গ্রীড উপকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে পাওয়ার গ্রীড বাংলাদেশ পিএলসি এবং চায়না ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট এন্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের সাথে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারী একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী টেকনাফে ১৩২/৩৩ কেভি ইনডোর জিআইএস উপকেন্দ্র নির্মান করবেন। চুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী ৩৬মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ বিতরণ ও অবকাঠামোসহ উপকেন্দ্র নির্মাণের যাবতীয় কাজ শেষ করতে হবে।
সরেজিমনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী চায়না প্রতিষ্ঠানটি পুরোদমে কাজ শুরু করেছেন। আশা করা যাচ্ছে, চলতি মাসেই ডাইক ওয়ালের কাজ শেষ হবে। পরবর্তীতে মাটি ভরাটসহ অন্যান্য কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সে সময়ে আর এখনকার মতো বিদ্যুৎ বিভ্রাট হবেনা। সারাদিন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাবেন গ্রাহকরা। বিদ্যুৎ নিয়ে গ্রাহকদের আর ভোগান্তি থাকবেনা বলে মনে করছেন বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা।
সৌর বিদ্যুৎ থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হবে। আর জাতীয় গ্রীডের সাথে পার্শ্বে নির্মিত গ্রীড উপকেন্দ্র লিংক থাকবে।
বিদ্যুৎ অফিস সুত্র জানায়, টেকনাফে প্রায় ৭৫হাজার গ্রাহক রয়েছেন। উল্লেখিত গ্রাহকের জন্য প্রায় ২৪-২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। অপরদিকে রঙ্গিখালীতে স্থাপিত সোলার পার্ক তথা সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে প্রতিদিন ২০মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। চাহিদার বিপরীতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডের সাথে লিংকেইজ এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে টেকনাফের গ্রাহকদের অবাধ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
টেকনাফ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জহির আহমদ জানান,স্থান নির্ধারণ ও জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। রঙ্গিখালী-আলীখালীতে স্থান নির্ধারণ করতে গিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। ষড়যন্ত্র এবং যাবতীয় বাঁধা পেরিয়ে সাবেক জিএম (জেনারেল ম্যানেজার) আখতারুজ্জামান মন্ডলের ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উল্লেখিত স্থানে গ্রীড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। যথাপোযুক্ত স্থানে গ্রীড উপকেন্দ্রটি স্থাপিত হওয়ায় এটি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একটি সফলতা বলে মনে করেন। আর এটি বাস্তবায়িত হলে টেকনাফ উখিয়ার সাধারণ মানুষ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবার সুফল ভোগ করবে জানিয়ে কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এই পরিচালক আরো জানান,গ্রীড উপকেন্দ্রটি বাস্তবায়িত হলে টেকনাফের মানুষ লো ভোল্টেজ, লোড শেডিং ও সিস্টেম লস থেকে মুক্ত পাবে।
জানতে চাইলে টেকনাফ পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের (ডিজিএম) ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো: জসিম উদ্দিন বলেন, গ্রীড উপকেন্দ্রটি বাস্তবায়িত হলে ভোল্টেজ ভাল হবে পাশাপাশি কোয়ালিটি সম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে। ৩৩ কেভি ফল্ট অনেকটা কমে আসবে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট কমবে পাশাপাশি নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ সেবা বাড়বে। এছাড়া গ্রীডের সম্পন্ন হলে টেকনাফে বড় বড় শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। এতে করে এখানে ব্যবসা বাণিজ্যের দ্বার খুলে যাবে বলে মনে করেন টেকনাফস্থ পল্লী বিদ্যুতের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।######