টেকনাফে “দি ডেন্টাল এইড” নামের এক দন্ত কিৎসালয় কর্তৃক লোকজন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী লোকজন ও স্থানীয়রা জরুরী ভিত্তিতে ডেন্টাল এইড নামের প্রতারণালয়টি দ্রুত সময়ে বন্ধের দাবী জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে,উপজেলার হ্নীলা ষ্টেশনের সিকদারপ্লাজার ২য় তলায় “দি ডেন্টাল এইড” নামে একটি দন্ত চিকিৎসালয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেটি (দি ডেন্টাল এইড) অত্যাধুনিক এবং সৌন্দর্য্য ডেকোরেশনের মাধ্যমে লোকজনের মনোযোগ আকৃষ্ট করছেন। ডাক্তার থাকুন আর নাই থাকুক! সজ্জিত ডেকোরেশনের সাজ দেখে সাধারণ মানুষ এই ডেন্টাল এইডে যাচ্ছেন এবং প্রতারিতও হচ্ছেন। দৃষ্টিনন্দন ডেকোরেশনের আলোতে ঝলমল করলেও সপ্তাহ যেতে না যেতেই দি ডেন্টাল এইডের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ জানাগেছে।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানাগেছে, দি ডেন্টাল এইড নামের দন্ত চিকিৎসালয়ের কোন প্রকার অনুমোদন নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স তো নেই। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কোথাও কোন আবেদন করেছেন, এমন কোন প্রকার কপি/নথিও নেই। এমনকি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স পর্যন্ত নেই। উপজেলার ব্যস্ততম একটি ষ্টেশনের প্রধান সড়কের পাশেই অবিস্থত দ্বি-তল ভবনে কেমনে কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়া দন্ত চিকিৎসালয় চলছে তা সচেতন মহলকে রীতিমত ভাবিয়ে তুলছে। চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসার হাত থেকে স্থানীয়দের বাঁচাতে অতিদ্রুত সময়ে দন্ত চিকিৎসালয় বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
জয়নাল নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান,চিকিৎসা যাই হোক! ডাক্তার থাকুক আর নাই থাকুক। ডেকোরেশন কিন্তু কক্সাবাজারের দন্ত চিকিৎসক মীম ইকবালকেও হার মানিয়েছে। তিনি আরো অভিযোগ করেন,টাকা পয়সাও মীম ইকবালের মতোই ইচ্ছামত আদায় করা হয় এখানে। কাল বিলম্ব না করে অবৈধ এই ডেন্টাল এইড নামের প্রতারণা কেন্দ্রটি বন্ধের দাবী জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী। হাশেম নামের স্থানীয় এক ব্যাক্তি এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, এখানে একজন দাঁড়িওয়ালা টেকনিশিয়ান আছেন। তিনিই একমাত্র রোগী দেখেন। বাকীগুলো শুধু প্রচারণা এবং প্রতারণা। এসি এবং মনজুড়ানো ডেকোরেশন দেখেই বুঝা যায়। তারা চিকিৎসার নামে প্রতারণার ফাঁদ বসিয়েছেন। দি ডেন্টাল এইড নামের দন্ত চিকিৎসালয়ে অন্যদের চেয়ে খুব বেশী টাকাও দাবী করা হয় বলে তিনি জানান।
লোকজনের সাথে কথা বলে জানাগেছে, নামে বেনামে দন্ত চিকিৎসকের নাম প্রচার করা হলেও কেবলমাত্র একজন ডেন্টিষ্ট দিয়ে চলছে দন্ত চিকিৎসালয়টি। ঢাকা চট্টগ্রামের নামী দাবী দন্ত চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করছেন এবং প্রতিনিয়ত প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিন্তু প্রচার করা দন্ত চিকিৎসকরা হ্নীলার দি ডেন্টাল এইড নামের দন্ত চিকিৎসালয় চিনেননা বলে স্থানীয়দের অভিমত। তাদের দাবী প্রচারণায় ভুয়া চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। নাম ব্যবহার করা এমনই এক চিকিৎসক ডা: জোনায়েদ বিল তোফায়েলের সাথে যোগাযোগ করা হয়। মুঠোফোনে তিনি নিজেকে ডাক্তার জোনায়েদ বিল তোফায়েল দাবী করলেও চেম্বারের বিষয়সহ নানাবিধ প্রশ্নের উত্তরে তার গলার স্বরে রহস্যজনক মনে হয়েছে। তিনি হ্নীলার দি ডেন্টাল এইডে সপ্তাহে ৬দিন চেম্বার করেন বলে দাবী করেন। এমনকি গত সপ্তাহেও পুরোটা সময় ছিলেন বলে এই প্রতিবেদকের কাছে দাবী করলেও তাকে গত সপ্তাহে চেম্বারে দেখেনি বলে আশেপাশের লোকজন জানিয়েছেন। আলাপ আলোচনায় বুঝা গেলো ডাক্তার তোফায়েলের পরিচয়দানকারী দন্ত চিকিৎসক একজন প্রকৃত প্রতারক। সন্দেহ হচ্ছে, মুঠোফোনের কথা বলা লোকটি দি ডেন্টাল এইডের প্রশিক্ষিত ও প্রতারক চক্রের সদস্য।
জানতে চাইলে দি ডেন্টাল এইডের ব্যবস্থাপক ডা: শেখ রানা মাহমুদ আনসারী পরিস্কার ভাষায় জানিয়েছেন, এখনো কোন প্রকার অনুমোদন নেওয়া হয়নি। অনুমতির পত্রের জন্য কোথাও কোন প্রকার আবেদন করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,আস্তে আস্তে করবো ভাই। তবে তিনি এও স্বীকার করেছেন যে, এখনো স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া হয়নি। সময়ের অভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতিপত্র বা লাইসেন্স এবং ট্রেড লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। এভাবে দন্ত চিকিৎসালয় কেমনে চালাচ্ছেন, প্রশ্নের উত্তরে আনাসারী বলেন,এই আপাতত চালাচ্ছি আর কি। তিনি উখিয়ার কুতুপালংয়েও তার মালিকানাধীন আরো এমন আরো একটি দন্ত চিকিৎসালয় আছে বলে দাবী করেন।
হ্নীলা বাজারের ইজারাদার ও হ্নীলা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর আল মাসুদ জানান,স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র না থাকলে পাশাপাশি বিডিএস ডাক্তার দ্বারা পরিচালিত না হলে উক্ত দন্ত চিকিৎসালয় সিলগালা করে একেবারে বন্ধের দাবী জানিয়েছেন।
হ্নীলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বাহাদুর শাহ তপু অবৈধভাবে পরিচালিত দি ডেন্টাল এইড নামের দন্ত চিকিৎসালয়টি দ্রুত সময়ে বন্ধের দাবী জানিয়ে বলেন, দৃষ্টিনন্দন ডেকোরেশন করে লোকজনকে আকৃষ্ট করলেও মুলত বিডিএস ডাক্তার ছাড়া অপ্রশিক্ষিত লোক দিয়ে এখানে দাঁতের সেবা দেওয়া হচ্ছে। জনস্বার্থে তিনি অবৈধভাবে পরিচালিত দন্ত চিকিৎসালয় বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ এবং ডেন্টাল এইড পরিচালনায় জড়িতদেরও আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা: মোহাম্মদ এনামুল হক জানান,দন্ত চিকিৎসালয় ওপেন করতে গেলে সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র লাগবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি দপ্তর থেকে অনাপত্তি পত্রের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও উল্লেখ করে তিনি বলেন,অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ভুয়া দন্ত চিকিৎসালয়সহ অবৈধভাবে গড়ে উঠা সবকিছু উচ্ছেদ করে দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদুল হক বলেন,দন্ত চিকিৎসালয় চালাতে গেলে অবশ্যই অবশ্যই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (পরিচালক হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগের) লাইসেন্স থাকতে হবে। এছাড়া দন্ত চিকিৎসালয়ে একজন সার্বক্ষণিক বিডিএস ডাক্তার থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন এর ব্যতয় ঘটলে দন্ত চিকিৎসালয়টি অবৈধ বলে পরিগণিত হবে। তিনি উপরোক্ত বিষয়টি মনিটরিং করছেন জানিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে দি ডেন্টাল এইড নামের অবৈধ দন্ত চিকিৎসালয় বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো: এহেছান উদ্দিন বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে কোন চিকিৎসালয় চালানো যাবেনা। অবৈধভাবে পরিচালিত দি ডেন্টাল এইড নামের দন্ত চিকিৎসালয়ের বিষয়টি কেবল অবগত হয়েছেন জানিয়ে দ্রুত সময়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন বলে জানান।