কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে স্বশস্ত্র ইয়াবা সন্ত্রাসীদের হামলায় স্কুল শিক্ষক ও তার আত্মীয় গুরুতর আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করেও হামলাকারীরা গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ক্যাম্পজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩ অক্টোবর রাত ১টার দিকে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক–A এর ৭নং স্কুল মাঠ এলাকায়। আহতরা হলেন— স্থানীয় স্কুল শিক্ষক জমির হোসেন এবং তার আত্মীয় মমতাজুল হক D, ব্লক A, শেড ৭৭/১,২)।
উক্ত সন্ত্রাসী হামলায় যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে, শাহাজালাল ২২ পিতা: আলা উদ্দিন ( প্রকাশ আলীয়া), রশিদ আহমদ পিতা: মৃত্যু বশির আহমেদ ব্লক - A শেড নং ২, আলী হোসেন পিতা: আলী( প্রকাশ মাছবিয়ারী আলী ব্লক A- শেড নঃ ২, রহিম উদ্দিন ২৫ পিতা: মৃত্যু ডাঃ নজির,আলাউদ্দিন ৪০ পিতা: মৃত্যু সেহর আলী কুতুপালং পশ্চিম পাড়া, সেলিনা আক্তার পিতা: ছৈয়দ আহামদ এছাড়াও আরও কয়েকজন অজ্ঞাত স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী এ ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ইয়াবা পাচারের একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য জানা যায় আহত মমতাজুল হকে তার শালক জমির হোসেন ছোট ভাইয়ের বিবাহ অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে উপরে বর্ণিত স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে ছুরি ও অস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। হঠাৎ আক্রমণে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার স্ত্রী ফোনে শ্বশুরবাড়িতে খবর দেন। পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে সন্ত্রাসীরা তাদের ওপরও হামলা চালিয়ে মারধর করে। পরে প্রাণ বাঁচাতে তারা পুলিশের আশ্রয় নেয়। এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মমতাজুল হককেও অতর্কিতে আক্রমণ করে সন্ত্রাসীরা। তারা তাকে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাত ও মারধর করে, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলে মাটিতে ফেলে দেয়। আমাদেরকে যারা উদ্ধার করতে গিয়েছিল তাদেরও ছুরিকাঘাত করেছিল তার। তার চিৎকারে টহলরত এপিবিএন পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে। পরে পুলিশ ধাওয়া দিলে সন্ত্রাসীরা পুলিশের ওপর গুলি ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়।
মমতাজুল হক বলেন, “ওই ঘটনার পর থেকে সন্ত্রাসীরা আমাদের পরিবারের ওপর হামলার চেষ্টা করছে এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমরা পুরো রাত পুলিশের হেফাজতে কাটাতে বাধ্য হয়েছি এবং এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
এদিকে আমির হোসেন জানান “সন্ত্রাসীরা আমাকেও বিভিন্ন সময় হুমকি দিচ্ছে। আমি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আশ্রয় নিয়েছি এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেছি। কুতুপালং রেজিস্টার ক্যাম্পকে ঘিরে ‘ইয়াংস্টার’ নামে প্রায় ৩০ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে। রাত্রি নামলেই তারা পুরো ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
ইয়ংস্টার’ নামে সক্রিয় সন্ত্রাসী গ্রুপ
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে ‘ইয়ংস্টার’ নামে প্রায় ৩০ সদস্যবিশিষ্ট একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। গ্রুপটির সদস্যরা নিয়মিতভাবে অপহরণ, ছিনতাই, অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
হামলার সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তরাও এই গ্রুপটির সদস্য বলে স্থানীয়রা ধারণা করছেন।
এপিবিএন পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “ঘটনার খবর পেয়ে আমাদের টহল দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। সন্ত্রাসীরা গুলি ও ইটপাটকেল ছুড়ে পালিয়ে যায়। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উল্লেখিত সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসা ও অস্ত্রবাজির সঙ্গে জড়িত। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। ঘটনার পর থেকে ক্যাম্প এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।