নিজস্ব প্রতিবেদক::
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ‘মাস্টার’, ‘মাঝি’ এবং ‘সহকারী মাঝি’রা ইয়াবার ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা আয় করছে, সে সাথে ক্যাম্পে আধিপত্য বজায় রাখতে গড়ে তুলছে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ। অস্ত্র এবং ইয়াবার ক্যারিয়ারে রাজি না হলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের উপর চলে অমানুষিক নির্যাতন।
সেনা নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার আগে সেখানে রোহিঙ্গাদের অনেকেই ছিলেন ‘ইয়াবা ডন’। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসার পর কিছুদিন চুপচাপ থাকলেও বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে তাদের সেই সিন্ডিকেট ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেছে।
এ নিয়ে ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা জানান, উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে এ চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্তত সহস্রাধিক রোহিঙ্গা রয়েছেন। তাদের সঙ্গে মিয়ানমারের রাখাইন সম্প্রদায়ের যোগাযোগ রয়েছে। সূত্রটি বলছে, মিয়ানমার থেকে রাতের আঁধারে ইয়াবা ও মাদকের চালান সীমান্তের কাঁটাতারের পার্শ্বে বয়ে নিয়ে আসে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। পরে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা সীমান্ত থেকে মাদকের চালান বয়ে নিয়ে আসে। এভাবে প্রতিনিয়ত কোটি টাকার ইয়াবা ঢুকছে উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। পরে ইয়াবার চালান সুযোগ বুঝে চিহ্নিত সিন্ডিকেট সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে দিচ্ছে। তবে সিন্ডিকেটের গডফাদাররা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
জানা গেছে, উখিয়ার কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইয়াবা ও সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে ক্যাম্পে আশ্রিত ব্লক সি ১ এর ইলিয়াসের ছেলে মাস্টার সফু আলম। তার নেতৃত্বে চলছে ইয়াবা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। প্রতিদিন গভীর রাতে কুতুপালং লম্বাশিয়া ফুটবল খেলার মাঠে বসে ইয়াবা কেনা বেচার হাট। এক সময় রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা করলেও এখন দিনরাত তাদের কাছে সমানে পরিণত হয়েছে। দিন-দুপুরে ক্যাম্পগুলোতে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে আলেকিন নেতা পরিচয় দিয়ে মাস্টার সফু আলম স্থানীয়দের উপরও হামলা চালাচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোরতা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
কথা হয় সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের উখিয়ার আহ্বায়ক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, মনে করেছিলাম মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা চলে আসার পর ইয়াবা পাচার কিছুটা কমবে, কিন্তু এখন যেন তার মাত্রা বেড়ে গেছে। এ নিয়ে উখিয়ার সচেতন মহল উদ্বিগ্ন। আমরা বলছি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না হলে ইয়াবা, মাদক, অস্ত্রসহ নানা অনৈতিক কাজ বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আহম্মদ সনজুর মোরশেদ বলেন, ইয়াবা ও মাদকের ব্যাপারে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তথ্যপ্রমাণসহ ইয়াবা সম্পৃক্ততার অভিযোগ পেলে ছোট হোক আর বড় হোক কোনো ইয়াবা ব্যবসায়ীকে ছাড় দেয়া হবে না বলে এ প্রতিবেদককে জানান।