দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে কক্সবাজার জেলা ছাত্রদলের কমিটি নেই। একইভাবে জেলার ৮ উপজেলায় কমিটি থাকলেও একদম কার্যক্রম নেই ঈদগাঁও উপজেলায়। বাকি চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার আহ্বায়ক কমিটি দিলেও আরো ৬ উপজেলার কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এমন অবস্থায় জেলাতে ছাত্রদলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তবে অনুসারী ভিত্তিক কিছু কিছু নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছে।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে সংগঠনের প্যাডে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ওই কমিটিতে সভাপতি পদে শাহাদাত হোসেন রিপন ও সাধারণ সম্পাদক ফাহিমুর রহমান ছিলেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
শিগগিরই নতুন কমিটি গঠন করা হবে। তবে ১৩ মাসেও নতুন কমিটি গঠন করা হয়নি।
কমিটি না থাকার কারণে সংগঠনের ভেতর জবাবদিহির জায়গাও নষ্ট হচ্ছে। এ সুযোগে কেউ কেউ অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন, যা সামগ্রিকভাবে দলের জন্য ক্ষতিকর। ইতিমধ্যে তাদের অনিয়ম-লুটপাট ও চাঁদাবাজির খতিয়ান দলের বিভিন্ন স্থরের নেতা ও গোয়েন্দা সংস্থার হাতে রয়েছে। জেলা ছাত্রদলের একাধিক সাবেক নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, কমিটি না থাকায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভেদ বাড়ছে। যে যাঁর মতো দায়সারাভাবে সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করছেন। জেলা শাখার তদারকি না থাকায় অধীন স্কুল, কলেজ, উপজেলা ও সদরের কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়েছে। অনেকে কমিটির আশায় বিয়েও করতে পারছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ছাত্রদলের সাবেক দুই নেতা বলেন, গত বছর কমিটি বিলুপ্তির পর নতুন কমিটি গঠন হবে এ আশায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা দেখা দিয়েছিল। তবে এসব নেতা-কর্মী এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন। আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের কার্যক্রমে গতি বাড়াতে দ্রুত কমিটি গঠন করা উচিত বলে জানান তারা। তা না হলে শিক্ষাবান্ধব রাজনীতি ছাত্রদলে থাকবে না।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি শাহাদাত হোসেন রিপন বলেন, ‘আমাদের আহবায়ক কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল, এটা সত্য। কিন্তু কী কারণে কমিটি হঠাৎ বিলুপ্ত করা হলো, তা আমরা জানি না। তবে দলের স্বার্থে বলব, দ্রুত নতুন কমিটি ঘোষণা করা উচিত। তা না হলে দল সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ নির্বাচনে ক্ষতি হবে। ছাত্রদল সংগঠিত হবেনা।
নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের একজন সাইফুর রহমান নয়ন। তিনি বিগত কমিটিতে সিনিয়র সহসভাপতির পদে ছিলেন। একবার ভারপ্রাপ্ত সভাপতিও ছিলেন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দীর্ঘদিন কমিটি না থাকার কারণে সংঘবদ্ধভাবে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। তা ছাড়া কমিটি না থাকার কারণে দলের ভেতর জবাবদিহির জায়গাও নষ্ট হচ্ছে। এ সুযোগে কেউ কেউ অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন, যা সামগ্রিকভাবে দলের জন্য ক্ষতিকর। পর্যটন জেলার ছাত্রদলের রাজনীতিতে অনেক ক্ষতি হচ্ছে সবার।
৯ উপজেলার মধ্যে ঈদগাঁও উপজেলায় নেই কমিটি, ৬টিতে কমিটি থাকলেও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে বহু বছর আগে। এসব উপজেলা হলো রামু, মহেশখালী, টেকনাফ, উখিয়া, সদর, কুতুবদিয়া। এর বাইরে জেলার বাকি দুই উপজেলার মধ্যে চকরিয়া ও পেকুয়া কমিটি দেওয়া হলেও পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়নি।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রার্থী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাহিমুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রদল মানে আমাদের ভবিষ্যৎ, গণতন্ত্রের প্রথম কণ্ঠস্বর। আমি সেই কণ্ঠস্বরকে আরও শক্তিশালী করতে চাই, প্রিয় সংগঠনকে আধুনিক, সুশৃঙ্খল ও আদর্শিকভাবে গড়ে তুলতে চাই। আমার লক্ষ্য হচ্ছে তৃণমূলের কর্মীদের অধিকার নিশ্চিত করা। ছাত্র রাজনীতিকে শিক্ষাবান্ধব ও গঠনমূলক পথে এগিয়ে নেওয়া। আমার হাতে যদি দায়িত্ব আসে, তবে সব স্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সাহসী নেতৃত্ব প্রদান করবো। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য কক্সবাজারের সন্তান আলহাজ্ব সালাহ উদ্দিন আহমদের হাতকে শক্তিশালী করার সাহসী ভূমিকা রাখতে পারব।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রদলের সাবেক অর্থ সম্পাদক এবার সভাপতি পদপ্রত্যাশী আল আমিন বলেন, ‘দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ছাত্র রাজনীতিতে আমি মোট ১৩ টি মামলার আসামি হয়েছি ৪ বার কারাবরণ করেছি। আমি রাজনীতিকে ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে নয় বরং ছাত্রদের সেবার মাধ্যম মনে করি।
জেলার প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বার্থ রক্ষায়, ক্যাম্পাসে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এবং শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলবো। কারণ ছাত্রসমাজ গণতন্ত্রের মূল চালিকাশক্তি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা আমলে দলের আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সর্বোচ্চ উপস্থিতি ছিলাম এবং দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এক কদমও পিছপা হইনি।’
আরেক সভাপতি পদপ্রার্থী ও বিলুপ্ত হওয়া কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুল আলম বলেন, ‘আমি ওয়ার্ড ছাত্রদল থেকে শুরু করে কক্সবাজার সরকারী কলেজ ছাত্রদলের ক্যাম্পাস শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের যুগ্ম আহবায়ক, কক্সবাজার আইন কলেজের সভাপতি, বিলুপ্ত হওয়া কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে সাংগঠনিক দায়িত্ব ও সকল আন্দোলনে সংগ্রাম করে যাচ্ছি। রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে ৫ বার ১২০ দিন কারাবরণসহ ২০টা মামলার আসামী হয়েছি। আমার ত্যাগের মূল্যায়নে আমি জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদ প্রত্যাশা করি।’ আশা করি দলের হাইকমান্ড আমাকে মুল্যায়ন করবেন।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি-সম্পাদক পদপ্রত্যাশী আবু বক্কর, ইনজামামুল হক, সাঈদ আনোয়ার, রেজাউল করিম রেজা বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছর ধরে ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসছি। তৃণমূল থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত সক্রিয় থেকে দলের সংকটময় সময়ে নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছি এবং সংগঠনের স্বার্থে জেল-জুলুম, নির্যাতনসহ নানা ত্যাগ স্বীকার করেছি। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে থাকার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা আমাদের জেলা ছাত্রদলের সভাপতি-সম্পাদকসহ বিভিন্নপদে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী করে তুলেছে। আমরা জেলা ছাত্রদলকে ঐক্যবদ্ধ ও আরও শক্তিশালী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।’
তারা আরো জানান, অভিজ্ঞ, ত্যাগী, উচ্চ শিক্ষিত এবং যারা মামলা হামলার স্বীকার হয়েছে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে জেল খেটেছে তাদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হোক।