উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের হালিয়াখালী গ্রাম। মিয়ানমার থেকে নাফ নদী পার হয়ে শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে তীরের এই গ্রামে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাঢল থেমে যাওয়ার পর এটিই একমাত্র পয়েন্ট যেখান দিয়ে এখনো রোহিঙ্গারা আসছেন।
এখন যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছেন, তাদের মধ্যে অনেককেই পাওয়া যাচ্ছে যারা সেখানে নির্যাতনের শিকার হননি। আত্মীয়স্বজন বাংলাদেশে চলে আসায় এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতেই তারা মূলত বাংলাদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।
সোমবার সীমান্ত পাড়ি দেওয়া মংডু জেলার সিকদার পাড়া থেকে আসা নূর অঙ্কিতা (৫৫) বাংলানিউজকে বলেন, এখান থেকে খবর গেছে-হুকুমত (বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বা তাদের ভাষায় রাজাও) ঘর দিচ্ছে, খাবার দিচ্ছে, তোমরা চলে আস। তখন আমরা চলে এসেছি।
নূর অঙ্কিতা জানান, তাদের পরিবারের কেউ হতাহত হননি। ঘরবাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়নি। তাদের পাড়ায় শুরুতে মিলিটারি আক্রমণ করলেও পরে তারা আর আসেনি।দালাল চক্রের সহায়তায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এখনো আসছে রোহিঙ্গারা
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় এবং সেইদেশীয় কিছু দালাল আছে, তারা মিয়ানমারে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের খবর পাঠাচ্ছে যে বাংলাদেশ সরকার ফ্রি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করছে। এসব দালালরা অনেক রোহিঙ্গাকে একপ্রকার ডেকেই বাংলাদেশে আনছে। আবার এসব দালালদের বড় একটা অংশ রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে টাকাপয়সা আদায় এবং তাদের বিভিন্নদিকে ছড়িয়ে দিতেও সক্রিয়।
টেকনাফ ও উখিয়ায় গত এক মাসে প্রায় ৩৫০ জন দালালকে ধরে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
মিয়ানমারের মংডু জেলার খয়েরীপাড়া থেকে আসা রেহানা আক্তার (২০) সোমবার সকালে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। রেহানার দাবি, তার স্বামীকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এক মাস আগে কেটে ফেলেছে। তবে এরপর মিলিটারি আর কোন সমস্যা করেনি। মগরাও আর আসেনি।
‘আমার আব্বা-আম্মা, ভাই আগেই চলে এসেছে। তারা আমার জন্য ঘর বানিয়েছে। সেজন্য ছেলেকে নিয়ে চলে এসেছি।’ বলেন রেহানা
মংডু জেলার দোয়াবিল থেকে আসা নাসিদা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের গ্রামে কোন হামলা হয়নি। পাশের গ্রামে তিনদিন আগেও মগ আর মিলিটারি এসে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে বলে শুনেছি। কয়েকজনকে মেরে ফেলেছে।দালাল চক্রের সহায়তায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এখনো আসছে রোহিঙ্গারা
চোখের সামনে দুই ছেলেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গুলি করে মেরে ফেলেছে দাবি করে নূর থাবা (৪৫) বাংলানিউজকে বলেন, রাজা (প্রধানমন্ত্রী) যদি বের করে দেয় তাহলে চলে যাব। না হলে আর কোনদিন বর্মা যাব না।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন যেসব রোহিঙ্গা আসছেন তাদের অধিকাংশই দালালদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আসছেন। এসব দালালের মধ্যে পুরনো রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় বাঙালি আছেন। দালালরা উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়ে জায়গা দখলে নিয়ে নতুন যারা আসছেন তাদের কাছে বিক্রি করছেন।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে দালালদের চার ধরনের কর্মকাণ্ড চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। এগুলো হচ্ছে, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের ডেকে নিয়ে আসা, নৌকার ভাড়া বাবদ বাড়তি টাকা আদায় করা অথবা তাদের কাছ থেকে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেওয়া, পাহাড়ে ঘর তোলার জন্য জমি বিক্রি করা এবং রোহিঙ্গাদের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে তাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা।দালাল চক্রের সহায়তায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এখনো আসছে রোহিঙ্গারা
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মাঈনুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ক্যাম্পে না নিয়ে এদিক-সেদিক নিয়ে যাওয়া, তাদের কাছ থেকে টাকাপয়সা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ বেশি পেয়েছি। আমরা প্রায় শ’খানেক এই ধরনের অপরাধীকে ধরে দণ্ড দিয়েছি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, ২৫৫ জনকে এই পর্যন্ত আমরা শাস্তি দিয়েছি। মিয়ানমারের মুদ্রা উদ্ধার করেছি প্রায় তিন লাখ কিয়াট।
এদিকে সোমবার র্যাব রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার সাবরাং এলাকা থেকে তিন দালালকে আটক করেছে। তাদের কাছ থেকে জিম্মি ২০ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে র্যাব। সুত্র: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর