হুমায়ুন কবির জুশান (উখিয়া কক্সবাজার)
জীবনকে সফল করতে চাই নানামুখী পদক্ষেপ, কাজ। মানুষের জীবনে স্বপ্নের হাত ধরেই সফলতার জাগরণ সৃষ্টি হয় আর সৎ কর্মের মাধ্যমে মানুষ সফলতার দেখা পায় বা সার্থক হয় জীবন। জীবনের এই সফলতার পিছনে ছুটতে গিয়ে কেউ বনে যান হিরু আবার অসৎ কাজ ও ক্ষমতার অপব্যবহারে হিরু থেকে জিরোতে নামিয়ে দেয় তাকে। একজন মানুষের জীবন চালাতে কতই বা টাকার প্রয়োজন। টাকার পেছনে ছুটতে গিয়ে অবৈধ কাজে টাকার পাহাড় গড়ার পর জীবনটা যদি হারাতে হয় তাহলে ঐ টাকার মূল্য কোথায়? সত্যিকারের ইয়াবা কারবারীদের জম ছিল টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। তার হাতে কত মানুষের জীবন গেছে ক্রসফায়ারের কথিত বন্দুকযুদ্ধে। কতজন গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করছেন তার কোন হিসাব নেই। সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে ইয়াবার মাদক নির্মুলের নামে ইয়াবা কারবারীদের ধরে পাখির মতো গুলি করে মারতো সে। ইয়াবার বিরুদ্ধে ভিড়িও বার্তায় গায়েবি হামলা মামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হবে বলে হুশিয়ারি উচ্ছারণ করেন তিনি। মরণ নেশা ইয়াবার কারণে ক্রসফায়ার দিলেও মানুষজন মাদককে ঘৃণা করতো তাই সমর্থন জানাতেন। এরই সুযোগে দিনের পর দিন সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় এবং ইয়াবা দিয়ে চালান দিত কোর্টহাজতে। টাকা আদায়ের পর অনেককেই ক্রসফায়ার দিতেন। আবার অনেককেই গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার ও প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়ার এমনই শত শত অভিযোগ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে টেকনাফ থানা থেকে প্রত্যাহারকৃত ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে। জীবনে কোনদিন কল্পনাও করেননি তাকে আইনের কাটগড়ায় দাঁড়াতে হবে। অবশেষে সাবেক সেনা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় প্রদীপ দাশকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তাই উখিয়া-টেকনাফ তথা কক্সবাজারসহ পুরো দেশে এখন একটিই আলোচনা চলছে গ্রেফতারকৃত প্রদীপকে নিয়ে।গত ৩১ জুলােই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর পুলিশ চেকপোষ্টে অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান পুলিশ সদস্যের গুলিতে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অত্যন্ত মর্মাহত। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা গত ০৪ আগস্ট ২০২০ তারিখ থেকে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন। গত ০৫ আগস্ট ২০২০ তারিখ সেনাবাহিনী প্রধান ও পুলিশের আইজিপি সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং স্ব স্ব বাহিনীর স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন ও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। সেনাবাহিনীর প্রধান ও পুলিশের আইজিপি উভয়ই ঘটনাটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দায়ভার বাহিনী নেবেনা বলে উল্লেখ করেন। উক্ত ঘটনায় দুই বাহিনীর দীর্ঘদিনের পারস্পরিক সুসম্পর্কে চিড় ধরবেনা। সুষ্ঠুতদন্ত এবং সুবিচারের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে ও সুষ্ঠুতদন্ত কার্যে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করা হবেনা এবং সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত পরিচালিত হবে এই মর্মে স্ব স্ব বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। এদিকে প্রদীপ কুমার অসুস্থতাজনিত কারণে চট্রগ্রামের লালখান বাজারের পুলিশ লাইন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে যান। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সিএমপি সদর দফতরে আসেন তিনি। এরপরই তাকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়। দুপুর ২ টার দিকে নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে করে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হয় পুলিশ। তাকে বহনকারী মাইক্রোবাসের পাশে তিনটি গাড়িতে পোষাক পরিহিত ও সাদা পোষাকে পুলিশ সদস্যরা ছিল। আরেকটি ভ্যানে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন বলে জানা গেছে। কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ টেকনাফের বিচারক তামান্না ফারহার আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া। পরে আদালত সেটি টেকনাফ থানাকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন। এছাড়া মামলার তদন্তভার দেয়া হয় র্যাব-১৫ এর অধিনায়ককে। মেজর সিনহার বোনের দায়ের করা মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইন্সপেক্টর লিয়াকতকে প্রধান আসামি ও টেকনাফ থানার প্রত্যাহারকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে দ্বিতীয় আসামি করে আরও ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন-বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএ্সআই লিটন মিয়া, এএসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফা। দেশবাসি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেছেন।