প্রকাশিত: ০৪/১১/২০২১ ৯:৪৩ এএম

রোহিঙ্গা শিবিরে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে অবিশ্বাস্য রকমের ঘটনা। শিবিরগুলোতে হাসি-কান্না আর তামাশার যেন শেষ নেই। এবার কথিত আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কমান্ডার হিসাবে পরিচিত এক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী রোহিঙ্গার মৃত্যু নিয়ে চলছে আনন্দ-উল্লাস। একজন মানুষের মৃত্যু নিয়ে প্রতিটি শিবিরের সাধারণ রোহিঙ্গারাই নিরবে প্রকাশ করছে তাদের আনন্দের ধ্বনি। রোহিঙ্গারা একজন মানুষের মৃত্যু নিয়ে কেবলই ‘স্বস্তি’ প্রকাশ করলেও পুলিশ এখনো কিন্তু নিহত রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করতে পারেনি। অনেকেরই সন্দেহ রোহিঙ্গারাই হাসিম কমান্ডারের লাশ গায়েব করে দিয়েছে। এমনকি কমান্ডার হাসিমের নিহতের বিষয়টি পুলিশ শতভাগ নিশ্চিতও করেনি। তবুও রোহিঙ্গাদের আনন্দ-ফূর্তির কমতি নেই।

যে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর মৃত্যু নিয়ে রোহিঙ্গারা উল্লাস প্রকাশ করছে তার নাম মোহাম্মদ হাসিম (৩৮) ওরফে কমান্ডার হাসিম। তবে ‘পাকিস্তানি হাসিম’ নামেই শিবিরগুলোতে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তার সাংগঠনিক নাম আসাদ ভাই। আবার ‘খুইল্যা’ নামেও তিনি পরিচিত। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা হাসিমের মৃত্যুর খবরটি আকস্মিক চাওর হয়ে পড়ে। তার জীবিত ও সদ্য নিহত ছবি দিয়ে বলা হয়েছে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাং শিবিরে বিক্ষুব্ধ রোহিঙ্গাদের গণপিটুনিতে তিনি নিহত হন। অবশ্য গোয়েন্দা কর্মীরাও হাসিম কমান্ডারের নিহত হওয়ার ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন।
তবে পুলিশ গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহতের লাশ উদ্ধার করতে পারেনি। পুলিশ বলছে, উনচিপ্রাং শিবিরে একজন রোহিঙ্গা গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার খবর তাদের কাছে রয়েছে তবে এখনো পর্যন্ত লাশ পায়নি। এ বিষয়ে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন- ‘হাসিম নামের কোনো রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার নেই। তবে এ নামের এক রোহিঙ্গা নিহতের খবরে শিবিরে অভিযান চলছে। সেই সঙ্গে সেখানে পুলিশের তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের হোয়াইক্যং ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (আইসি) উপ-পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান বলেছেন-‘রাত থেকেই শুনেছি হাসিম নিহত হয়েছে। তার লাশ উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’ কমান্ডার হাসিমের নিহতের খবরটি রোহিঙ্গাদের সবাই জানালেও তার লাশের বিষয়টি এক প্রকার গোপনই থেকে যাচ্ছে।

গতকাল কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে হাসিমের লাশের অপেক্ষায়ও ছিলেন বেশ কিছু রোহিঙ্গা। তবে আবুল কালাম নামের পাকিস্তান ফেরৎ আরো এক ব্যক্তির উপস্থিতি নিয়ে নানা কথা উঠেছে। আবুল কালাম হচ্ছেন- আরসা কমান্ডার হাসিমের শ্যালক। তিনি কক্সবাজারের খুরুশকুল ইউনিয়নের ঘোনারপাড়ায় বসবাস করেন বলে জানা গেছে। তবে তিনি রোহিঙ্গা এবং পাকিস্তান ফেরৎ একজন-এমন তথ্যটি গোপন রেখে চলেছেন।

বাস্তবে একজন মানুষের মৃত্যু নিয়ে কখন গণমানুষ খুশি হন? কি পরিমাণ অত্যাচার-নির্যাতন করা হলে অত্যাচারী মানুষটির মৃত্যু সংবাদে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে খুশির বন্যা বয়ে যায় তা হাসিম কমান্ডারের বেলায় দেখা গেছে। রোহিঙ্গারা বলেছে, হাসিম কমান্ডারের নাম শুনলে ঘরের মেয়েরা কেউ ঘর ছেড়ে পালায় আবার কেউ ঘরে লুকানোর জায়গা খুঁজে। এমনই একজন কমান্ডার তিনি যখন যে সুন্দরী কন্যাকে চোখে পড়েছে তাকে যেভাবেই পারুক নিয়ে ভোগ করেছে। যে নির্মমতার কোনো শেষ নেই।
জানা গেছে, ছোটবেলায় মিয়ানমারের মংডু থেকে মাদরাসা শিক্ষা লাভের জন্য বাংলাদেশে ঢুকে পরে কোনো এক মাধ্যমে পাকিস্তান চলে গিয়েছিলেন কমান্ডার হাসিম। রোহিঙ্গারা হাসিম সম্পর্কে তথ্য দিলেও কেউই তাদের নাম পরিচয় করতেও রাজি নয়। রোহিঙ্গাদের ভাষ্য, হাসিম পাকিস্তান থাকাকালীন সময়ে তালেবানসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের দিকে পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে মিয়ানমার চলে যান। সেখানে আতাউল্লাহ জুনুনি নামের পাকিস্তান বংশোদ্ভুত রোহিঙ্গার নেতৃত্বাধীন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। পাকিস্তানে রপ্ত জঙ্গি প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে আরসাতে স্বল্প সময়ে চিফ অব কমান্ডের আস্থায় আসেন। পরবর্তীতে তাকে আরসার সেকেন্ড ইন কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রাখাইনে সহিংসতা পরবর্তী আরসার অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে হাসিম বাংলাদেশ পালিয়ে আসেন। প্রথম দিকে তিনি টেকনাফ পাহাড়ে রোহিঙ্গা আব্দুল হাকিম ডাকাতের দলে যোগ দেন এবং পাহাড় ও উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরের বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দেন। হাকিম ডাকাতের সঙ্গে থাকাকালীন সময়ে তিনি তার নেতৃত্বে সেখানে একটি নিজস্ব গ্রুপ সৃষ্টি করেন। এসময় তার সঙ্গে আরসার সম্পর্কে দূরত্ব বাড়ে। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে হাকিম ডাকাত বাহিনীর কর্মকাণ্ড অনেকটা গুটিয়ে আসলে হাসিম উখিয়া- টেকনাফ ছেড়ে চলে যান বান্দরবান তমব্রু শূন্যরেখা এলাকায়। সেখান থেকেই যোগাযোগ রাখতেন উখিয়া টেকনাফ রোহিঙ্গা শিবিরে তার সৃষ্ট নিজস্ব হাসিম বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে।

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, হাসিম শূন্যরেখা থেকে এসে উখিয়ার ১৭ নম্বর মধুরছড়া শিবিরে তার আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করেন। শিবিরের সাধারণ রোহিঙ্গাদের দৃষ্টিতে ছিল তিনি একজন মূর্তিমান আতঙ্ক। আশ্রয় ঘাঁটি বাড়াতে হাসিমের বিভিন্ন ক্যাম্পে একাধিক বিয়ের খবরও অজানা নয়। সুত্র: কালেরকন্ঠ

পাঠকের মতামত

আজ পহেলা বৈশাখ

আজ রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ-বাংলা নববর্ষ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩১ ...

বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালিত এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

বান্দরবানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালিত রুমা,রোয়াংছড়ি ও থানচি এলাকায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। ...

বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

পটিয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই আরোহী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী এলাকার মোঃ ...