ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৪/০২/২০২৩ ৮:২০ এএম

কক্সবাজারের ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপে পর্যটকদের রাত্রী যাপনে বিধিনিষেধ আরোপের পর নতুনভাবে গড়ে ওঠা সকল স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সোনাদিয়ায় ভ্রমণে আসা পর্যটকদের জন্য গড়ে তোলা স্থায়ী অস্থায়ী বাণিজ্যিক কটেজ অপসারণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।

গত ২৬ জানুয়ারি বেজার উপসচিব মোহাম্মদ নাজমুল হাসানের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশ প্রদান করে বেজা কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে সোনাদিয়ায় বিভিন্ন অপরাধ এবং অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধে পর্যটকদের রাত যাপনে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি অবৈধ কটেজ অপসারণ করতে বলা হয়েছে।

ইস্যু করা চিঠিতে সোনাদিয়াকে বেজা কর্তৃপক্ষ পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে আখ্যা দিলেও সেখানেই পরিবেশ বান্ধব পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় বেজা। যদিও সম্ভাব্য স্থাপিত পার্ককে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক বলে দাবি করেছে বেজা কর্তৃপক্ষ। তবে পরিবেশবিদরা বলছেন, কোনো অবস্থাতেই সোনাদিয়ায় কোনো স্থাপনা নির্মাণসহ দ্বীপে অধিক লোকের সমাগম করা যাবে না। কারণ লোকে লোকারণ্য ও পার্ক নির্মিত হলে সোনাদিয়ার হুমকিতে থাকা জীববৈচিত্র্যের পরিবেশ শূন্যের কোটায় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা। সেই প্রচুর সম্ভাবনায় এই দ্বীপ ধ্বংসও হয়ে যেতে পারে মনে করছেন তারা।

বেজার চিঠিতে সোনাদিয়াকে ১৯৯৯ সালে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সোনাদিয়ার প্রাকৃতিক বন ও গাছপালা কাটা, বন্যপ্রাণী হত্যা, উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংস, বায়ু বা শব্দ দূষণ হয় এমন শিল্প প্রতিষ্ঠান করা এবং বর্জ্য নির্গমণ ও কোনো উপায়ে পাথরসহ খনিজসম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে বহু আগে থেকেই।

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বেজার সপ্তম সভায় সোনাদিয়ার ভূ-প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নান্দনিক এবং পরিবেশ-বান্ধব স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে ইকো-ট্যুরিজম করার কথাও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।

cox

বেজার উপসচিব মোহাম্মদ নাজমুল হাসানের স্বাক্ষরিত চিঠিতে সোনাদিয়ার অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক কটেজ অপসারণসহ পর্যটকদের রাত যাপন নিষিদ্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা)।

এদিকে, পরিবেশবিদরা ইকো টুরিজম পার্কের জন্য অন্য কোনো এলাকা নির্বাচন করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছেন। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার তার জায়গা থেকে এক চুল পরিমাণও সরে আসেনি।

২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে তৎকালীন এমপি আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুল্লাহ ফরিদ ও বিএনপি জামায়াত নেতারা সোনাদিয়ার প্রায় দুই হাজার একর প্যারাবন বা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ধ্বংস করে চিংড়ি ঘের নির্মাণ করে। প্যারাবন কেটে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে আলামত নষ্ট করা হয়েছিল। তখন পরিবেশবাদী সংগঠনসমূহের সোচ্চার প্রতিবাদের মুখে আলমগীর ফরিদসহ বিএনপি জামায়াত নেতাকর্মীদের আসামি করে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই মামলায় আলমগীর ফরিদ তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। আর বর্তমান সরকারের আমলে ও কতিপয় ভূমিদস্যু প্যারাবন ও ঝাউগাছ কেটে নির্মাণ করছেন কটেজ ও হোটেলসহ নানা স্থাপনা। ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। সম্প্রতি সোনাদিয়া প্যারাবনে মেছোবাঘের দেখা মিলেছে।

cox

চট্টগ্রাম উপকূলীয় বনবিভাগের বিভাগীয় বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবদুর রহমান বলেন, সোনাদিয়ায় নতুন পুরাতন মিলে দুই হাজার একরের বেশি ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ও ঝাউবাগান রয়েছে। সেখানে নানা প্রজাতির জীবজন্তু বসবাস করছে। পর্যটকদের অবাধ বিচরণের ফলে প্রাণ প্রকৃতি ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই যাই করা হোক, প্রকৃতি পরিবেশের ক্ষতিসাধিত হলে সোনাদিয়া সেন্টমার্টিনের চেয়ে ও ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটতে পারে মনে করেন বন বিভাগের এই কর্মকর্তা

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, সোনাদিয়া মহেশখালী ও কক্সবাজার শহরের গাইডওয়াল। যেভাবে সোনাদিয়াকে নিয়ে অপরিকল্পিত উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তা বাস্তবায়ন হলে এই দ্বীপ যে কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে পড়ে তলিয়ে যেতে পারে সাগরগর্ভে।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে সংঘাত/টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকল আরও ৯ বিজিপি সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ...