প্রকাশিত: ০৬/০৫/২০২২ ১১:৪৯ এএম

কক্সবাজারে চার শতাধিক রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী ও নারীদের জমায়েত করার নেপথ্যে বহু তথ্য মিলছে। কক্সবাজার সৈকতে চার শতাধিক রোহিঙ্গা জমায়েতকে নাশকতার নতুন ছক বলে ধারণা করেছেন বিশ্লেষকরা। আবদ্ধ কোন মিলনায়তন বা বাসায় জমায়েত হলে প্রশাসনের নজরে পড়তে পারে ধারণায় খোলা আকাশের নিচে পর্যটকের ছদ্মাবরণে এই রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসা হয়েছে সমুদ্র সৈকতে। আরাকান বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের একাধিক সংগঠনের পক্ষে প্রত্যেককে নগদ এক হাজার টাকা করে অনুদান দেয়ার কথা ছিল। খবর পেয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশ এই রোহিঙ্গাদের আটক করে পরবর্তীতে কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিয়েছে। এদিকে কক্সবাজার সৈকতে রোহিঙ্গাদের আটকের খবর পেয়ে একই দিন তৎক্ষণাত ইনানী সৈকত থেকে সটকে পড়ে রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দলটি।

সূত্র জানায়, ইতিপূর্বে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ত্যাগ করলেও সংখ্যায় ছিল কম। তাও এভাবে প্রকাশ্যে নয়। আটক রোহিঙ্গা ছাত্ররা ক্যাম্প ত্যাগ করতে কক্সবাজারে আসেনি। তাদের এক হাজার টাকা হারে প্রদানের লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশে স্থায়ী হতে ইউএনএইচসিআরের কার্যালয়ের সম্মুখে মানববন্ধন করতে নিয়ে আসা হয়েছে। আটক রোহিঙ্গাদের মধ্যে বেশিরভাগই ক্যাম্পে স্থাপিত একাধিক মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং কিছু এতিম শিশুর মা-বোন। তারা সহজে ক্যাম্প থেকে বের হতে এপিবিএন পুলিশের (আর্মড পুলিশ) চেকপোস্টকে আগেই ম্যানেজ করেছে পুরনো রোহিঙ্গা জঙ্গীরা। চীনের মধ্যস্থতায় যখন মিয়ানমার শীঘ্রই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রাজি হয়েছে, ঠিক এই মুহূর্তে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে দেশে একটি অরাজকতা সৃষ্টিকল্পে কয়েকটি এনজিও, পুরনো রোহিঙ্গা গ্রুপ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। রোহিঙ্গা শিবিরের দায়িত্বে যখন সেনা বাহিনীর সদস্যরা ছিল, তখন দলবদ্ধভাবে রোহিঙ্গারা বের হতে পারেনি। কয়েকজন বের হলেও উখিয়া কলেজ গেট স্থানে স্থাপিত চেকপোস্টে সেনা সদস্যরা নামিয়ে নিয়েছে ওই রোহিঙ্গাদের। কিন্তু মাস দেড়েক আগে উখিয়া ডিগ্রী কলেজ সংলগ্ন সেনাবাহিনীর তল্লাশি চৌকিটি তুলে দেয়ার পর রোহিঙ্গারা দায়িত্বরত আর্মড পুলিশের কতিপয় অসৎ সদস্যকে ম্যানেজ করে বেরিয়ে যাচ্ছে ক্যাম্প থেকে। এরপর থেকে ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত এপিবিএন পুলিশ ফোর্সের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠে। আর্মড পুলিশের কতিপয় সদস্য ক্যাম্পে তথ্য সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়না। অথচ নগদ টাকায় রোহিঙ্গাদের প্রকাশ্যে দোকানপাট, ব্যবসা বাণিজ্য ও বাইরে যাওয়া আসা করার সুযোগ দিচ্ছে। প্রতিটি ক্যাম্পের প্রবেশমুখে এপিবিএন পুলিশের তল্লাশি চৌকি অতিক্রম করে কিভাবে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র বেরিয়ে আসল? তা এখন জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য, কারও মা নেই, আবার কারও বাবা নেই। কিছু কিছু এতিমের পক্ষে টাকা আনতে মা অথবা পিতা ওই কিশোরদের সঙ্গে এসেছে কক্সবাজারে। যেসব রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী ও নারী-পুরুষকে বুধবার আটক ও পরে ক্যাম্পে ফেরত দেয়া হয়েছে, তারা কখনও সৈকত দেখেনি। দেখার আগ্রহও তাদের নেই। তবে কেন এত রোহিঙ্গ সৈকতে? এই প্রশ্নের জবাব কয়েকজন আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপের নেতার কাছে মিলবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

টাকার প্রলোভনে সৈকতে রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীরা ॥

বুধবার বিকেলে কক্সবাজার সৈকতে আটক হওয়া টেকনাফ নয়াপড়ার এক মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলের পিতা হাফেজ আবু বকর বলেন, চলতি বছরের ২৫ আগস্ট নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের ৫ বছর পূর্ণ হবে। নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এরকম ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে রিফ্রেশমেন্টের সুযোগ পায়নি কখনও। গুটিকয়েক রোহিঙ্গা নেতা প্রলোভন দেখিয়ে আমার দুই ছেলেকে সকালে নিয়ে যায়। জনপ্রতি ১০০০ টাকা প্রদান করা হবে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্ররা দল বেঁধে মেরিন ড্রাইভ রোড হয়ে নয়াপাড়া মারকায ওমর ও বাহারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে ৮০ জন ছাত্র কক্সবাজার যায়।

দাওরা ও জঙ্গী প্রশিক্ষণ ॥

আরকান ইসলামী ফ্রিডম পার্টির নেতা পুরনো বর্মী হাফেজ নুর হুসাইন ও তার জামাতা হুজি নেতা কাসেম ও আবুল বাশারের নেতৃত্বে ৩৪টি ক্যাম্পের মাদ্রাসা ও স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে বিশেষত টেকনাফের নয়াপাড়া, রইক্ষং, উখিয়ার বালুখালী, কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পগুলোতে পুরো রমজান মাসব্যাপী মসজিদ ও মাদ্রাসাভিত্তিক রোহিঙ্গাদের ২ হাজার স্কুল ও মাদ্রাসাপড়ুয়া ছাত্রদের নিয়ে দাওরা নামক একটি প্রশিক্ষণ চলে। নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর ওপর ওই প্রোগ্রাম চলত সকাল ১০টা হতে ইফতার পর্যন্ত। বয়স অনুপাতে প্রশিক্ষণ এর ভিন্নতা ছিল। যাদের বয়স ১৫ এর নিছে তাদেরকে আরবী ও বাংলা ভাষা শিক্ষা দেয়া হতো। ১৬ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত যুবকদের সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। আর বিবাহিতদের রোহিঙ্গা ইয়ুথ ক্লাব ইত্তেহাদুত তুল্লাবুল মুসলেমিন আমির ঈসা সাঈদীর নেতৃত্বে ‘জিসমী তরবিয়ত’ নামক একটি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

যেসব পরিকল্পনায় রোহিঙ্গা ছাত্রদের কক্সবাজারে আনা হয় ॥

প্রথমত প্রত্যাবাসনে ফাঁকি দিতে টালবাহানা শুরু করতে মানববন্ধন করা এবং মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আগে বাংলাদেশে শরণার্থীর পূর্ণ অধিকার দেয়া। কক্সবাজার ও রামু উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত অন্তত ১২জন রোহিঙ্গা নেতার পরিচালনাধীন মাদ্রাসাগুলোতে রোহিঙ্গা ছাত্রদের বিনামূল্যে পড়ানো হয়। ওই ছাত্রদের লেখাপড়ার পাশাপাশি আনন্দ বিনোদন ও এতিমদের টাকা প্রদানের জন্য পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা একত্রে নিয়ে আসে।
সুত্র: জনকন্ঠ

পাঠকের মতামত

আজ পহেলা বৈশাখ

আজ রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ-বাংলা নববর্ষ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩১ ...

বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালিত এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

বান্দরবানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালিত রুমা,রোয়াংছড়ি ও থানচি এলাকায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। ...

বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

পটিয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই আরোহী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী এলাকার মোঃ ...