উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০/১১/২০২২ ১০:৪৭ এএম

রাইহানের পেইসবুক টাইমলাইন থেকেঃ-

আমার পড়ালেখার খরচ চালানো আমার বাবার পক্ষে আর সম্ভব না।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ সম্পর্কে লেখতে গিয়ে শেষ লাইন কি হবে তা আমি এখন অব্দি বের করতে পারি নাই। কারন সময়টা এতই নিষ্ঠুর যে, এই দ্বীপের প্রত্যেকটা মানুষের মুখের হাসিতে লুকিয়ে থাকা কষ্ট গুলো এখন অব্দি কেউ হইতো আন্দাজ করতে পারেনি। সবাই হইতো এটাই ভাবে যে এখানকার মানুষের এক সিজনের রুজি রোজগার দিয়ে দুই-তিন বৎসর কেটে যায়। হ্যা আপনি টিকই বুঝতে পেরেছেন, আমার বাবারা এই পাঁচ মাসে যা ইনকাম করে তা দিয়ে বাকি সাত মাস আমাদের দেখবাল করে।

যদিও এই লাইনটা লেখতে আমার খুবই দুঃখ হয়: বর্তমানের পরিস্থিতি যদি আগামী দুইমাস চলমান থাকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হবে।

এখানকার মানুষের একমাত্র আয়ের উৎস মাছ ধরা এবং সিজনাল টুরিস্ট ব্যবসা। প্রতিবছর পর্যটক মৌসুম আসলে জাহাজ চলাচল নিয়ে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয় স্থানীয়দের। মূলত ৫ মাস পর্যটন মৌসুম ধরা হয়, তবে প্রত্যেক বছর পর্যটন শিল্প সমিতি বিভিন্ন ধরনের কারন/কলাকৌশল সাজিয়ে তারা ৫ মাসের ব্যবসাকে ২ মাসে পরিনত করে।

টিক এই সিজনেও টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল হওয়ার কথা ছিলো অক্টোবর ১ তারিখ। কিন্তু তাদের বেপরোয়া সিদ্ধান্তে টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়। শুধু মাত্র কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন রুটে একটা জাহাজ চালু থাকবে। পরবর্তীতে নভেম্বর মাসে একটা জাহাজ চলার অনুমতি দেই। এমন সিদ্ধান্ত বহিরাগত ব্যবসায়ীদের জন্য আনন্দের হলেও স্থানীয়দের জন্য ঘূর্ণিঝড়ের আভাস।

প্রকৃতপক্ষে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন রুটে যাতায়াত করতে অধিকাংশ পর্যটকই নারাজ। কারন এতো দূরে যাতায়াত এবং ৩২০০ টাকার টিকেটে যাওয়া আসলেই একজন সাধারণ ভ্রমণপ্রিয় মানুষের অসম্ভব হয়ে পড়ে। এর চেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিতে অধিকাংশ পর্যটকই ভয় পায়। এতে একজন সাধারণ পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমনের আসা ছেড়ে দেই।

বর্তমানে এই জাহাজে করে যারা সেন্টমার্টিন যাচ্ছে তারা সাধারণ কোনো রিসোর্টে উঠছে না। তারা উঠছে বহিরাগত মালিকদের ৫ তারকা রিসোর্টে, এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের রিসোর্ট গুলো পানিতে ভেসে যাচ্ছে, বলতে গেলে আয়ের পথ বন্ধ। যারা মাছ ধরে খায় তারা কোনো রকম যা আয় করে তা দিয়ে তাদের সংসার চালাচ্ছে। আর যারা এই রিসোর্ট ব্যবসার সাথে জড়িত তারা খুবই দুর্ভিক্ষে আছে। মাঝে মধ্যে ঘুর্ণিঝড়ের কারনে ৩/৪ দিন ট্রলার বন্ধ হয়ে যা। এমনকি ওইসময় দ্বীপে খাদ্য সংকট দেখা যায়। কারন এখানে সমস্ত খাদ্য সামগ্রী টেকনাফ থেকে আনা হয়। এই কঠিন সময়ে আজ আমাদের পাশে কেউ নাই।

আমার বাবা একজন সাধারণ ব্যবসায়ী। তিনি এই রিসোর্ট ব্যবসার সাথে জড়িত। আমাদের আয়ের অন্য কোনো অপশন নেই। টুরিস্ট সিজনে যা ইনকাম হয় তা দিয়ে আমাদের সংসার এবং আমাদের পড়ালেখার খরচ চলে। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমি ঢাকায় পড়ালেখা করি, আমার প্রত্যক মাসে খরচ হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। বর্তমান সময়ে ব্যবসার এই পরিস্থিতিে আমার বাবার পক্ষে এটা খুবই অসম্ভব হয়ে পড়ছে। বর্তমানে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকার কারনে আমাদের আয়ের উৎসও বন্ধ। দ্বীপে আমার মত এমন হাজারো বাবা আছেন যাদের সংসারে আজ দুর্ভিক্ষ চলছে। আমি জানি না এর শেষ কোথায়, তবে আল্লাহ সবসময় আমাদের সাথেই আছেন। এই কঠিন সময়ে আর কেউই আমাদের সাথে নেই। আমাদের পাশে দাড়ান, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চলমান রাখুন, দয়াকরে দ্বীপবাসীকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েন না।

তবে এখানেই শেষ নয়, এখানকার মানুষের অসহায়ত্ব এবং দ্বীপের আত্ম গল্প শুনতে আপনাকে পরবর্তী প্রজন্ম হয়ে ফিরে আসতে হবে।

পাঠকের মতামত

পুলিশ থেকে বাঁচতে জীবনটাই দিলেন সিএনজিচালক

গ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ...

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চলন্ত সিএনজিতে সিলিন্ডার বি’স্ফোরণ, চালক নিহত

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চন্দনাইশ এলাকায় চলন্ত সিএনজি অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুনে দগ্ধ হয়ে ...