উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪/১০/২০২২ ৯:০৮ এএম

রোববার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় মাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা কিশোর নিহত হয়েছেন। এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর একই সীমান্তে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন এক বাংলাদেশি নাগরিক।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে,মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এখনও বাংলাদেশ সীমান্তে স্থল মাইন পুঁতে রাখছে যা সেখান থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সংস্থাটি বলেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সীমান্তের মূল পয়েন্টগুলোতে ল্যান্ডমাইন পুঁতেছে।

এমনকি উত্তর রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে হামলার আগে সেখানকার রাস্তায়ও ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখা হয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বিবিসিকে বলেন এসব ল্যান্ডমাইন মিয়ানমারেই তৈরি হয় এবং দুটি কারণে তারা সীমান্তে ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখছে।

“একটা হল তারা রোহিঙ্গাদের আসতে দিতে চাচ্ছে না। আরেকটা হল আরাকানে যেসব বিচ্ছিন্নতাবাদী আছে তারা যাতে বাংলাদেশে ঢুকে আশ্রয় নিতে না পারে সেকারণে তারা পুঁতেছে।”

তিনি আরো বলেন, “মিয়ানমার মনে করে না যে তারা কোন আইন ভঙ্গ করছে, যেহেতু তারা স্থলমাইনবিরোধী কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষরই করেনি।”

স্থানীয় লোকজন বলেছেন মিয়ানমারের সৈন্যরা যে মাইন পুঁতে রাখছে – সেটাও তারা দেখেছেন।

বিশেষ করে বুথিডং, টং পিও লেট ইয়ার সীমান্ত, এমনকি নো ম্যান্সল্যান্ডেও তারা মাইন পুঁতে রাখতে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এর কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে মিয়ানমারের কাছে।

নিষিদ্ধ এ্যান্টি-পার্সোনেল মাইন যুদ্ধক্ষেত্রে শুধুমাত্র মানুষ নিধনের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা ট্যাংকবিধ্বংসী মাইন থেকে আলাদা।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মিয়ানমারের সরকার পাল্টা অভিযোগ করছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভ্যাশন আর্মি আরসা দেশটির অবকাঠামো এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস ব্যবহার করছে।

রোহিঙ্গাদের নির্মূলের জন্য ল্যান্ডমাইন বসানোর ঘটনাকে ‘বর্ণনার অতীত’ ‘হৃদয়হীন কাজ’ বলে অভিহিত করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অবিলম্বে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে অ্যান্টি-পার্সোনেল ল্যান্ডমাইন ব্যবহার বন্ধ করে ১৯৯৭ সালের মাইন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত অটোয়া চুক্তিতে যোগ দেবার আহ্বান জানিয়েছে।

তবে সেই ডাকে এখনো দেশটি সাড়া দেয়নি। এমনকি স্থলমাইন পুঁতে রাখার কথাও তারা স্বীকার করেনি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মি. হোসেন বলেন দু’টি দেশের পাঁচ মাইলের মধ্যে কোন অস্ত্র প্রদর্শন বর্ডার গার্ড ছাড়া করে না। করলে আগাম জানিয়ে দেয়া হয় পাশের দেশকে।

তিনি বলেন, ” মিয়ানমারের কথা যৌক্তিকভাবে টেকে না। আরসা কেন পুঁততে যাবে? কারণ বাংলাদেশের ভেতরে ঢোকার জন্য তাদেরকে পথ খোলা রাখতে হবে।”

বাংলাদেশ কি কোন ব্যবস্থা নিতে পারে?

স্থলমাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তি, যেটা অটোয়া কনভেনশন নামে পরিচিত, সেই চুক্তি অনুযায়ী কোন দেশের স্থলমাইন ব্যবহার, মজুদ, উৎপাদন, ও হস্তান্তর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তবে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি মিয়ানমার, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ইসরায়েলসহ আরো কয়েকটি দেশ।

বাংলাদেশসহ ১৬৪টি দেশ এখনো পর্যন্ত এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন বাংলাদেশকে এখন এই বিষয়টি ‘কূটনৈতিক চ্যানেলে’ সামাল দিতে হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক আবদুর রব খান বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ কূটনৈতিক চাপ তৈরি করতে পারে। এবং তারা সেটা করে যাচ্ছে। আমরা সম্প্রতি দেখেছি মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে, মিয়ানমারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।”

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “এখন যদি বাংলাদেশ কোন অস্ত্র ব্যবহার করে তাহলে সেটাকে আগ্রাসন হিসেবে দেখানো হবে আন্তর্জাতিক মহলে। তাই কূটনৈতিক প্রচেষ্টাই চালিয়ে যেতে হবে।”

মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে গত কিছুদিন ধরে সংঘর্ষ চলছে, যার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের ওপরেও। বিশেষ করে বান্দরবানের ঘুমধুম ও তমব্রু সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

অগাস্ট মাসে বাংলাদেশের ভেতরে গোলা পড়ার কারণে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ।

সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকায় যেকোনো ধরনের গোলা ব্যবহার করার আগে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানের রীতি রয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তে এসব গোলাগুলির ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশের সঙ্গে কোনরকম তথ্য আদান-প্রদান করা হয়নি বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, বান্দরবানের স্থানীয় বাসিন্দা এবং মিয়ানমারের সংবাদপত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যাচ্ছে, অগাস্ট মাসের শুরু থেকে সেদেশের রাখাইন, তানপট্টি ও হাকা রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান বিদ্রোহী বাহিনীগুলোর লড়াই চলছে।

একদিকে যেমন রাখাইনে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর লড়াই চলছে অন্যদিকে গত মে মাস থেকে কায়াহ, কাইন ও চিন রাজ্যেও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

এই যুদ্ধে হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমানও ব্যবহার করছে সেদেশের সামরিক বাহিনী।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

পাঠকের মতামত

ইরানের ভয়ে তটস্থ ইসরায়েল!

ইসরায়েলে বড় ধরনের ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হামলা আসন্ন বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ...