আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪/০৭/২০২৫ ৭:১৮ পিএম

ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক ও আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার ফ্রানচেসকা আলবানিজ।

ইসরায়েলের অর্থনীতিকে ‌‌‘গণহত্যার অর্থনীতি’ আখ্যা দিয়ে দেশটিকে দেওয়া আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ করা ও তাদের ওপর পুরোপুরি অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়েও আহ্বান জানান তিনি। 

শুক্রবার (৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে আল জাজিরা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে তার সর্বশেষ প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় এমন আহ্বান জানান আলবানিজ। এদিন ফ্রানচেসকা আলবানিজ প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি দমন-পীড়ন ও সহিংসতায় সহায়তাকারী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের পরিস্থিতি ভয়াবহ। সেখানে আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুর গণহত্যার জন্য ইসরায়েল দায়ী।

আলবানিজের উপস্থাপিত প্রতিবেদনের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, ‘ফ্রম ইকোনমি অব অকুপেশন টু ইকোনমি অব জেনোসাইড (দখলদারির অর্থনীতি থেকে গণহত্যার অর্থনীতি)’। কীভাবে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ইসরায়েলের দখলদারি ও উপনিবেশ গঠনের পরিকল্পনাকে টিকিয়ে রাখছে, তা এ প্রতিবেদনে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারি ও উপনিবেশ গঠনের পরিকল্পনাকে টিকিয়ে রাখতে বড় কোম্পানিগুলো একধরনের করপোরেট যন্ত্র হিসেবে কাজ করছে। এই যন্ত্রই ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সেখানে বসতি স্থাপনের পরিকল্পনায় ইন্ধন জোগাচ্ছে।

ইসরায়েলকে দমন-পীড়নে সহায়তাকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এর মধ্যে আছে অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, বড় প্রযুক্তি কোম্পানি, ভারী যন্ত্রপাতি নির্মাতা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি অবৈধ বসতি সম্প্রসারণে সহায়তা করছে, কেউ নজরদারির প্রযুক্তি দিচ্ছে, আবার কেউ ফিলিস্তিনিদের হত্যায় সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

প্রতিবেদনে আলবানিজ বলেন, রাজনৈতিক নেতারা যখন গাজায় রক্তপাত থামাতে ইসরায়েলকে চাপ দেওয়ার দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন, তখন অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারি, বর্ণবাদ ও এখনকার গণহত্যা থেকে মুনাফা করে যাচ্ছে।

মানবাধিকার পরিষদে বক্তৃতা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আলবানিজ। তিনি বলেন, এমন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা গাজাসহ ফিলিস্তিনের অন্য অধিকৃত অঞ্চলে সহিংসতা, হত্যা, মানুষকে পঙ্গু করে দিয়েছে। মূলত এমন ধ্বংসযজ্ঞ থেকে তারা লাভবান হয়েছে।

ফ্রানচেসকা জানান, গাজা যুদ্ধ শুরুর পর প্রায় ২১ মাসে তেল আবিবের শেয়ার বাজারে অন্তত ২০০ শতাংশ দর বেড়েছে, বাজারে যোগ হয়েছে ২২ হাজার কোটি ডলারের বেশি। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা শোচনীয় অবস্থার মধ্যে আছেন।

এ সময় আলবানিজ বলেন, ‘এক জাতি সমৃদ্ধ হচ্ছে, আরেক জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হচ্ছে। স্পষ্টতই কারও কারও জন্য গণহত্যাও লাভজনক।’

জাতিসংঘের মতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গত ২২ মাসে ইসরায়েল প্রায় ৫৭ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। লাখ লাখ মানুষ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিভিন্ন শহর ও গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে হাসপাতাল ও স্কুলগুলোও। অবরুদ্ধ ও বোমাবর্ষণে বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের ৮৫ শতাংশ ছিটমহল এখন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

পাঠকের মতামত

বৈশ্বিক অনুদান কমায় রোহিঙ্গা শিশুদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে শিশু শিক্ষার পরিস্থিতি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান ...

যে কারনে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত ট্রাম্প

এবার ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। পাবলিকান আইনপ্রণেতা ...

ট্রাম্পের অনুরোধে ইরানকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়েছে কাতার

ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে তেহরানকে রাজি করাতে মধ্যস্থতা করেছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ...