
শামীম ইকবাল চৌধুরী, সোনাইছড়ি(নাইক্ষ্যংছড়ি) থেকে ফিরে::
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ২৬৮নং রেজু মৌজার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের অন্তত চারটি গ্রামের শতাধিক পাহাড়ী-বাঙ্গালী পরিবার উচ্ছেদ আতংকের মধ্যে রয়েছে। স্বাধীনতার পর ওই এলাকায় বসবাসযোগ্য করে কোন মতে মাথাগোজার স্থান তৈরী করে এসব পরিবার।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি মন্ত্রী পরিষদের সচিবের নাম ভাঙ্গিয়ে বহিরাগতরা ওই এলাকায় সংঘবদ্ধভাবে এসে বাড়ি ঘরে ভাংচুর ও বাগান কর্তনের পর মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রাণি শুরু করেছে। বহিরাগত ঐসব ভূমিদস্যুরা বাড়িতে গিয়ে নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এতে ওই এলাকার শতাধিক পাহাড়ী-বাঙ্গালী পরিবার বর্তমানে চরম আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে সরকারের উর্দ্ধমহল সহ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ভূক্তভোগী আবদুল আলম, জাহাঙ্গীর, মো: ইছহাক, বশির আহমদসহ একাধিক বাসিন্দা এ প্রতিদেককে জানান- কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রুমখা এলাকার বাসিন্দা ফরিদ আলম, ছুরুত আলম, জুহুরুল আলম, রাবেয়া বেগম দীর্ঘদিন যাবত ঘুমধুমের কেলাতলী, পাগলি খাল, আমতলী, বৈদ্যপাড়া ও পায়াঝিরি এলাকার আশ পাশে প্রায় ২০০ একর পাহাড়ী জমি দখলের চেষ্টা করছেন। এ ধরাবাহিকতায় গত ১২ মার্চ ৪০/৫০ জনের সংঘবদ্ধ একটি দল এসব গ্রামে এসে ব্যাপক তান্ডব চালিয়ে আবদুল আলীমের বসতবাড়ি ভাংচুরসহ সৃজিত বনায়ক কেটে ধ্বংস করে। এর পর থেকে এলাকার জনগণ ফুঁসে উঠেছে। তারা শনিবার (১৮মার্চ) সকালে এলাকায় বিক্ষোভ করেছে। এসময় জনগণের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেন সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি বাহান মার্মা।
উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন- বন্দোবস্তি মোকদ্দমা বন্ধ থাকলেও ২০১৫ সালের রেকর্ড দেখিয়ে মাননীয় মন্ত্রিপরিষদের সচিবের পরিবারের লোকজন শতাধিক বাসিন্দাকে অন্যায় ভাবে উচ্ছেদ করার জন্য পায়তারা করছেন। ১৯৮১-৮২ সন থেকে জীবনের ঝুকি নিয়ে পাহাড়ী জমি আবাদ করেছে পাহাড়ী-বাঙ্গালী জনসাধারণ। তাই শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত বহিরাগত কাউকে আগামীতে তাদের জমিতে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবেনা। তিনি সরেজমিনে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে এসে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান।
ভুক্তভোগী মো: ইছহাক জানান- ১৯৮১-৮২ সনের চারটি রাবার বাগান লীজের কাগজ নিয়ে প্রায় দুই শত একর জমি দখলের চেষ্টা করছে জনৈক ফরিদ আলম, ছুরুত আলম, জুহুরুল আলম, রাবেয়া বেগম। বর্তমানে বন্দোবস্তি কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ২০১৫সালের একটি লীজের কাগজ পদর্শণ করছেন তাঁরা। এসব ব্যাক্তি মন্ত্রিপরিষদের সচিবের পরিবারের সদস্য হওয়ায় প্রশাসনের ভয়ে চরম আতংকে রয়েছে জনগণ।
এদিকে অভিযুক্ত ফরিদুল আলমের সাথে শনিবার বিকালে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- কারো জমি তাঁরা দখল করতে যায়নি। এসব জমি তাঁর পরিবারের খতিয়ানভুক্ত জমি। বিষয়টি আরো জানতে হলে এ প্রতিবেদককে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সার্ভেয়ারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।
ভূমি বিরোধের বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মংনু মার্মা বলেন- সোনাইছড়ির রেজু মৌজায় ১৯৮০-৮১ সালে রাবার বাগান সৃজনের জন্য বিশ বছরের লীজ দেওয়া হয় বলে শুনেছি। লীজের ভূমিতে দশ বছরের মধ্যে বাগান সৃজনের কথা রয়েছে। কিন্তু বিবাদমান ভূমিতে কোন ধরনের রাবার বাগান তৈরী করা হয়নি। স্থানীয়রা পাহাড়ী-বাঙ্গালীরা বহু বছর ধরে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করছেন। তিনি আরো বলেন- বর্তমানে পার্বত্য এলাকায় ভূমি কমিশনের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এ অবস্থায় সার্ভেয়ার, হেডম্যানের রিপোর্ট ছাড়া ২০১৫ সনের লীজ কিভাবে অনুমোদন হয় তা আমার বোধগম্য নয়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস,এম সরওয়ার কামাল বলেন- বাদী পক্ষের ফরিদুল আলম একটি অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখব। তবে অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষকে এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুরোধ জানান তিনি।
অপরদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএইচএম তৌহিদ কবির বলেন- জনৈক ছুরুত আলমের আবেদনের প্রেক্ষিতে সোনাইছড়ির রেজু এলাকার ১৪জন বাসিন্দাকে তলব করা হয়েছে। তবে বিবাদী পক্ষ কাগজপত্র প্রদর্শণের জন্য ২৪মার্চ পর্যন্ত সময় নিয়েছেন। উভয় পক্ষ উপস্থিত হলে বিস্তারিত জানা যাবে। এ ক্ষেত্রে আইন সবার জন্য সমান। তাই অন্যায় ভাবে কাউকে হয়রাণি করা হবেনা।
পাঠকের মতামত