উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩/১১/২০২২ ৭:১৯ এএম , আপডেট: ০৩/১১/২০২২ ৭:২২ এএম

দেশের সর্বদক্ষিণের দুই উপজেলা টেকনাফ ও উখিয়া নিয়ে কক্সবাজার-৪ সংসদীয় আসন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে আসনটিতে সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন শাহীন আক্তার চৌধুরী। তবে নির্বাচিত হয়েই বন্ধ করে দেন এলাকায় যাতায়াত। এমনকি রাজনৈতিক ও সামাজিক কোনো কর্মসূচিতেও অংশ নেন না। এমপি শাহীনের অবর্তমানে সংসদীয় এলাকায় সার্বিক কার্যক্রম তদারক করেন তার স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। স্থানীয়রা মনে করেন, টেকনাফ-উখিয়া সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য রয়েছেন শুধুই কাগজে-কলমে, ‘ছায়া এমপি’ হয়ে সবই করছেন আলোচিত ব্যক্তিত্ব বদি।

কক্সবাজার-৪ আসনের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর রাজধানী ঢাকাতেই বসবাস শুরু করেন এমপি শাহীন আক্তার। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক কর্মসূচি, সামাজিক অনুষ্ঠান কিংবা দুর্যোগ-দুর্বিপাকেও যান না এলাকায়। জেলা ও উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকেও থাকেন অনুপস্থিত। এমনকি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময়ও এলাকায় দেখা যায়নি তাকে। ফলে কোনো কাজে সংসদ সদস্যকে প্রয়োজন হলে স্থানীয়রা যান শাহীনের স্বামী বদির কাছে।

জেলা ও উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত মাসিক সভা করার নিয়ম রয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য উপদেষ্টা হিসেবে সেই সভায় উপস্থিত থাকেন। টেকনাফ উপজেলায় অক্টোবরের মাসিক সভা ডাকা হয় ওই মাসের ১৯ তারিখ। উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সর্বশেষ ওই সভায়ও অংশ নেননি স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার চৌধুরী। তবে গুরুত্বপূর্ণ ওই সভায় উপস্থিত হয়ে নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরফানুল হক চৌধুরী অবশ্য জানান, আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকগুলোতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুপস্থিতি তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, নিয়মানুযায়ী স্থানীয় সংসদ সদস্য আমাদের উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির উপদেষ্টা। তবে বৈঠকে তার অনুপস্থিতি কোনো ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলবে, সেটি ভাবার কারণ নেই। কেননা সভার সব সিদ্ধান্তই তাকে অবহিত করা হয়।

ভৌগোলিক কারণে দেশের ভূরাজনীতিতে টেকনাফ-উখিয়া সংসদীয় আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশও হয়েছে ওই অঞ্চল দিয়ে। এতে কয়েক বছর ধরে সীমান্ত এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এছাড়া মিয়ানমার থেকে আসা বড় বড় মাদকের চালানও আটক হতে দেখা যায় টেকনাফ ও উখিয়ায়। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এলাকায় না আসায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে মনে করেন কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে কক্সবাজার-৪ সংসদীয় এলাকায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার লোকজনের যাতায়াত রয়েছে। এমনকি আশ্রিত এ জনগোষ্ঠীর কারণে স্থানীয়রা নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন। কিন্তু সেগুলো তুলে ধরার জন্য কোনো স্থানীয় প্রতিনিধি যেন আমাদের থেকেও নেই। টেকনাফের বাসিন্দা সোহেল আহমদ আরো বলেন, সারা দেশে যেখানে নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চলছে, সেখানে উখিয়া-টেকনাফ পুরোপুরিই বঞ্চিত। কারণ আমাদের এমপি এলাকাতেই আসেন না।

সম্প্রতি ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে প্রবল ঝুঁকিতে ছিল উখিয়া ও টেকনাফ উপকূল। ঝড়ের কারণে বড় ধরনের আঘাত না এলেও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সমুদ্রসংলগ্ন এ জনপদ। জলোচ্ছ্বাসে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ। অথচ সেই ঘূর্ণিঝড়ের আগে ও পরে দুর্যোগকবলিত এলাকায় দেখা মেলেনি স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহীন আক্তারকে। তবে তার পরিবর্তে সাবেক এমপি বদি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেলে বলেন, আমাদের এমপিকে নির্বাচনের পর আমরা আর কখনই দেখিনি। মাঝে মাঝে বদি আসেন। লোকজন তাই এখনো ওনাকেই এমপি মনে করে।

জানা গিয়েছে, উখিয়া-টেকনাফের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে শ্লথগতিতে। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজেও রয়েছে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। এমপি শাহীনের অবর্তমানে স্বামী আব্দুর রহমান বদিই এসব প্রকল্প তদারকি করেন। সম্প্রতি টেকনাফে কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকের অর্থ আত্মসাতেরও অভিযোগ ওঠে। এরপর গত ২২ অক্টোবর টেকনাফ সদর ইউনিয়নের কচুবনিয়াপাড়া, হাজমপাড়া ও ছোট হাবিবপাড়ায় চলমান অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করেন সাবেক সংসদ সদস্য বদি।

একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে শাহীন আক্তারের যে জনসম্পৃক্ততা প্রয়োজন তার কিছুই নেই বলে দাবি করেছেন কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচএম নজরুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে শাহীন আক্তারকে উখিয়া-টেকনাফের মানুষ দৃশ্যমান কোনো কর্মকাণ্ডেই অংশ নিতে দেখেননি। কক্সবাজারের অন্য সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যরা যেভাবে মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে চলেন বা জনসংযোগ করেন, এমন কিছুই ওনার ক্ষেত্রে চোখে পড়েনি আজ পর্যন্ত। তবে ওনার স্বামী আবদুর রহমান বদি নিয়মিতভাবেই বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড বা কর্মসূচিতে অংশ নেন। নজরুল ইসলাম আরো বলেন, এমপি শাহীন আক্তার চৌধুরী ঢাকায় থেকে সংসদে যান, মাঝে মধ্যে সেখানে কথা বলেন। এমনকি একজন সংরক্ষিত সংসদ সদস্য যে কাজগুলো করেন তার অর্ধেকও করেন না সরাসরি ভোটে নির্বাচিত এ সংসদ সদস্য।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও শাহীন আক্তার উখিয়া-টেকনাফে দলের কোনো কর্মসূচিতেও অংশ নেন না বলে অভিযোগ করেছেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, নির্বাচনের পর থেকে এমপির সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। দলের সংসদ সদস্য হিসেবে নেতাকর্মীদের প্রতি তার অনেক দায়িত্ব রয়েছে। উনাকে বিজয়ী করতে নির্বাচনের আগে দলের যেসব নেতাকর্মী তার জন্য কাজ করেছেন, উনি তাদের একবার দেখতেও আসেন না। এটা খুবই দুঃখজনক।

অভিযোগ প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য শাহীন আক্তারের স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি বণিক বার্তাকে বলেন, এমপির (শাহীন আক্তার) কাজ তো সংসদে, আর নির্বাচনী এলাকার কাজ তো আমার! তাকে পাঠানো হয়েছে সংসদে কাজ করার জন্য। এখন উনি সংসদে কোনো ফাঁকি দিচ্ছেন কিনা সেটা দেখা যেতে পারে। তিনি বলেন, যেসব সদস্য নিয়মিত অধিবেশনে যোগদান করেন, অনুপস্থিত না থাকেন তারা ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি উন্নয়ন প্রকল্প বরাদ্দ পান। এলাকার স্বার্থে আমাদের এমপিও নিয়মিত অধিবেশনে যোগ দেন। নিজের কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উখিয়া-টেকনাফে যতগুলো উন্নয়ন প্রকল্প হয় সেগুলো আমি তদারক করি। তদারক বলতে কোনো কাজের যেন বাধা সৃষ্টি না হয়, ক্ষতি না হয় এগুলো দেখি।

যোগাযোগ করা হলে সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সৌজন্যে, বণিক বার্তা

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে বাথরুমে ফেলে যাওয়া সেই নবজাতকের ঠাঁই হল নার্স মিনারার কোলে

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাথরুম থেকে উদ্ধার হওয়া ২ দিনের ফুটফুটে নবজাতককে দত্তক নিলেন ...

ঈদগাঁওতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ইউপি নির্বাচনে কারসাজি ও দুর্বৃত্তায়ন সহ্য করা হবেনা

আতিকুর রহমান মানিক, কক্সবাজার কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেছেন, দীর্ঘ আট বছর পর ...