প্রকাশিত: ৩০/১০/২০২১ ৯:৩৬ এএম

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে বিশ্ববাসী। বাংলাদেশও এর অন্যতম। কিন্তু সেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য স্বতন্ত্র অঞ্চল প্রতিষ্ঠার শিকড় যে প্রোথিত হয়েছে তা অতীত ইতিহাস। বর্তমানে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিদেশী কোন কোন মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় ষড়যন্ত্রের নতুন যে জাল বোনা হয়েছে তা বহু গভীরে। এ বিষয়টি দেশী-বিদেশী অধিকাংশ মহলের এখনও অজানা।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে উখিয়া টেকনাফে ৩৪ আশ্রয় শিবিরে বসবাসরত সাধারণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যের মাঝে ষড়যন্ত্রকারীরা যেসব অপকর্ম শুরু করেছে সেটা ভয়ঙ্কর, যা আগামীতে বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে হুমকির দিকে নিয়েও যেতে পারে। কারণ রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র ক্যাডার সংগঠন আরসা এখন তাদের শুরুর দিককার সিদ্ধান্ত ও তৎপরতা থেকে সরে এসেছে। মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর অনুগত হয়ে কাজ করছে, যাতে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে না যায়। এটা আরসার নীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের একটি বৈপরিত্য। মোদ্দা কথা আগে আরসা ছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। লড়াই করেছে প্রতিনিয়ত। আর এখন সেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে সন্ধি করে রোহিঙ্গারা যাতে তাদের অধিকার ফিরে না পায় সেই অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে, যা বিস্ময়করও বটে। ফলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ এদেশেই থেকে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে জাতিসংঘের সেই বক্তব্য, ‘জোর করে প্রত্যাবাসন করা যাবে না।’ এছাড়াও অন্যান্য বিদেশী সাহায্য সংস্থাও জাতিসংঘের এ নীতির পক্ষে। এর সঙ্গে রয়েছে এনজিওদের অবাধ স্বাধীন তৎপরতা। কারণ রোহিঙ্গাদের জন বিদেশ থেকে যে কাড়ি কাড়ি অর্থ আসছে সেই অর্থের কোন তথ্য যায় না বাংলাদেশ সরকারের কাছে। তারা সরাসরি এনে নিজেদের ইচ্ছেমতো ব্যয় করে। ফলে কোন কোন এনজিও সংস্থা ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা রোহিঙ্গা ক্যাডারদের জঙ্গীপনায় উদ্বুদ্ধ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে পুরো বিষয়টি শক্ত হাতে তদারকি এবং অপতৎপরতা দমনের এখনই সময়। অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে বলে স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন সূত্রে ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে।

আরসাকে দিয়ে উখিয়া টেকনাফের আশ্রয় শিবির অস্থিতিশীল করার চেষ্টা

ভূরাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের টার্গেট

অনুসন্ধানে এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যজুড়ে মূলত রোহিঙ্গাদের বসতি। বহু আগে থেকেই রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র কয়েকটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়ে তাদের জন্য স্বতন্ত্র অঞ্চল সৃষ্টির তৎপরতা চালিয়ে আসছে। এ বিষয়টি একেবারে উন্মুক্ত হওয়ার পর মিয়ানমার সরকার ধাপে ধাপে এদের ওপর হামলে পড়েছে। সর্বশেষ হিংস্র ছোবলটি মেরেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট গভীর রাতে সেনা অভিযান শুরু করার মাধ্যমে। এর আগেও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে। পরবর্তীতে এদের বড় একটি অংশ নিজ দেশে ফিরে গেছে। কিন্তু একটি অংশ শরণার্থী হিসেবে রয়ে যায়। বর্তমানে এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও আট লাখেরও বেশি। সব মিলিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১২ লক্ষাধিক।

রোহিঙ্গা ইস্যুটি মিয়ানমার এদের প্রত্যাবাসনে চুক্তি করেও তা বাস্তবায়ন থেকে যোজন যোজন দূরে সরে গেছে। অনুসন্ধান ও বিভিন্ন সূত্রের তথ্য মতে, অতীতে রাখাইন রাজ্য জুড়ে অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মতো রোহিঙ্গারাও তাদের অধিকার আদায়ে সশস্ত্র লড়াই করেছে। সে লড়াই তৎপরতাকে একেবারে দলিত মথিত করে দেয়া হয়েছে সেনা অভিযানের মাধ্যমে। এক সময় সেনাবাহিনী আরসাকে তাদের জন্য ভয়ঙ্কর হিসেবে মনে করত। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে সেই আরসা এখন মিয়ানমারের সঙ্গে সন্ধি করেছে বলে জানা গেছে। তথ্যে আরও জানা গেছে এ সন্ধি ভয়ঙ্কর। এটি সাধারণ রোহিঙ্গাদের স্বার্থের চরম পরিপন্থী। পাশাপাশি মিয়ানমারের স্বার্থ রক্ষার জন্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঠেকাতে যেভাবেই হোক মিয়ানমার তাদের দেশের এই সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারাও যাতে তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এমন তৎপরতাই চালাচ্ছে আরসা। এমনকি এবং যারা আগ্রহ প্রকাশ করবে তাদের প্রয়োজনে প্রাণে মেরে ফেলার অপকৌশল বেছে নিয়েছে। এতে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাবার ইচ্ছা থেকে দূরে সরে যাবে। অপরদিকে মিয়ানমার সরকার আন্তর্জাতিক মহলে প্রমাণ করতে চাইছে রোহিঙ্গাদের যত দমন নিপীড়ন চালাচ্ছে আরসা সদস্যরা। যদিও আরসার ঘাঁটি মিয়ানমারেই, যা বাংলাদেশের সীমান্তের অনতিদূরে সে দেশের নোম্যানসল্যান্ডে।

বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, অত্যন্ত কৌশলে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে। অসহায় রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে। এদের আশ্রয় দিতে গিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফ অঞ্চলের প্রভূত ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এরপরও সরকারী, বেসরকারী পর্যায়ের উদ্যোগে একজন রোহিঙ্গাকে না খেয়ে মরতে দেয়া হয়নি। সেই রোহিঙ্গাদের এখন মারছে সগোত্রীয় সহিংস সংগঠন আরসার সদস্যরা এবং এসব ঘটছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষতার মাধ্যমে।

প্রশ্ন উঠেছে, এ সমস্যা জিইয়ে রেখে মিয়ানমার কী ফায়দা লুটতে চায়। এর উত্তরে আসছে এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে রাখাইন রাজ্য থেকে হটিয়ে তাদের বাপ দাদার ভিটেমাটি ধ্বংসের মাধ্যমে বিরান ভূমিতে পরিণত করে ভূরাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়। মিয়ানমারের এ মিশন সফল করতে গণহত্যার ঘটনাও ঘটেছে, যা এখন আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারাধীন।

অপরদিকে মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে মাদক ও মানব পাচার চালিয়ে যাচ্ছে। মরণ নেশা ইয়াবা উৎপাদনের সব কারখানা মিয়ানমারে। সেখান থেকে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে তা বাংলাদেশে পাচার করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে মাদকের গড়ফাদারদের সঙ্গে ওপারের গড়ফাদারদের জোরালো সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। মাঝখানে চোরাচালানের অর্থের বড় একটি ভাগ পেয়ে যায় সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা, যাদের মধ্যে সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী রয়েছে বলে ব্যাপক অভিযোগ আছে।

এদিকে মিয়ানমারে যেতে আগ্রহীদের কণ্ঠ ধীরে ধীরে স্তব্ধ হয়ে আসছে। কেননা ফিরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের নেতা মুহিবুল্লাহ এবং পরবর্তীদে মাদ্রাসার ৬ শিক্ষক ও ছাত্রকে হত্যার ঘটনা প্রমাণ করেছে এ নিয়ে কেউ যেন আর সাহস না দেখায়। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রতিটি শিবিরে সশস্ত্র ক্যাডারদের আনাগোনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পুলিশ ও এপিবিএন মিলিয়ে ৩ হাজার সদস্য আশ্রিত এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে কিনা তা বড় ধরনের প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে।

রোহিঙ্গারা ভিনদেশী। অর্থাৎ মিয়ানমারের নাগরিক। তবে বাঙালীদের চেহারা সঙ্গে তাদের মিল রয়েছে। আর কথার মিল রয়েছে টেকনাফ অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে। এ দুটি কারণে এদের আলাদা করে চিহ্নিত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য কঠিন একটি বিষয়। ইতোমধ্যে উখিয়া টেকনাফ অঞ্চলের শান্তিপ্রিয় মানুষের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে এদের সহসা প্রত্যাবাসন করা না গেলে যেন অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। তবে সরকার পক্ষে ভাসানচরে এদের ক্ষুদ্র একটি অংশকে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে এক লাখের সামান্য বেশি নেয়ার জন্য স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আশ্রয় শিবিরের সঙ্গে ভাসানচরের অবস্থান আকাশ পাতাল ফাঁরাক রয়েছে। শুধু তাই নয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গারা যে মানবেতর জীবনযাপন করেছে তা থেকে তারা এখানে বহুলাংশে স্বাধীন। এছাড়া বহু আগে থেকে পালিয়ে আসা কিছু রোহিঙ্গা এদেশে স্থায়ী বাসিন্দা বনে গেছে। সঙ্গত কারণে নতুন করে যারা এসেছে তাদের এখানে বসবাসের খুব একটা কঠিন হয় না। এছাড়া এদেশে অবস্থান তাদের জন্য স্বর্গসুখের মতো। কেননা, আসার থেকে সরকারী এবং বেসরকারী পর্যায়ে যে সহায়তা তাদের দেয়া হয়েছে তা রীতিমতো অচিন্তনীয়। এরপর যুক্ত হয়েছে দেশী-বিদেশী এনজিও সংস্থা।

এখন প্রশ্ন উঠেছে এসব রোহিঙ্গাদের নিয়ে কি হবে। এরা একদিকে যেমন ভয়ঙ্কর এবং হিংস্রও বটে। নরহত্যাসহ ভয়ঙ্কর যত অপকর্ম এদের কাছে নস্যি। এসব বিষয় নিয়ে দেশে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা রয়েছে। এসবের ওপর বর্তমানে আরসার পক্ষে সশস্ত্র হানাহানির ঘটনা এ ইস্যুটিতে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলছে। সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা থেকে এদের যত দ্রুত সম্ভব তাদের দেশে প্রত্যাবাসন, ন্যূনতমপক্ষে অন্যত্র সরানো ছাড়া এ মুহূর্তে বিকল্প কোন পথ নেই।

ফ্লাশব্যাক ॥ আরাকানে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার পর ২০১২ সালে বিদ্রোহী গ্রুপ আরএসওর কিছু রোহিঙ্গা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সৌদি আরবে বসে গঠন করেন আল-ইয়াকিন। আল-ইয়াকিন আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে-বিশ্বাস। তাদের এই আল-ইয়াকিনের পূর্ণ নাম ‘আর হারাকা আল-ইয়াকিন’ অর্থ বিশ্বাসী আন্দোলন। পরে তারা নাম পরিবর্তন করে এটির নাম রাখে আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি, সংক্ষেপে আরসা। যার পূর্ণ অর্থ হচ্ছে ‘আরাকান রোহিঙ্গা মুক্তি ফৌজ’। ২০১২ সালে আরাকানে সহিংসতার পরই আল-ইয়াকিন সৃষ্টি নিয়ে কাজ শুরু করে সৌদি প্রবাসী কিছু রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে রোহিঙ্গা নেতা আব্দুল্লাহ মারুফ, আবুল কালাম হায়দরী ও হাফেজ ছলিমুল্লাহ অন্যতম। তখন বর্তমানে আরসা কমান্ডার আতাউল্লাহ সৌদিতে একটি মসজিতে ইমামতি করতেন। সৌদিতে নাকরিকত্ব নিয়ে বসবাসকারী মিয়ানমারের ৩০ জন ধনাঢ্য রোহিঙ্গা নেতা এবং ১০ জন পাকিস্তানী জঙ্গী হাফেজ আতা উল্লাহকে (আবু আম্মর জুনুনি) মিয়ানমারে পাঠাতে একমত পোষণ করে। তার জন্য মাসিক একটি ফান্ডও পাঠানো হতো সৌদি আরব থেকে। সৌদি আরবেই আতাউল্লাহ ও তার সহযোগী ২০ রোহিঙ্গাকে ৪০ দিন ট্রেনিং দেয়া হয়। পরে ২০১৩ সালের শেষের দিকে পাঠিয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশ থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে তারা ঢুকে পড়ে রাখাইন রাজ্যে। ২০১৪ সালে আরাকানে (রাখাইন রাজ্যে) এসে লোকবল সংগ্রহ কাজ শুরু করে আতাউল্লাহ ও তার সহযোগীরা। প্রতিটি পাড়ায় সাড়া মেলে রোহিঙ্গা যুবকদের। তখন প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় অস্ত্রের। সৌদিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল-মিয়ানমারের ঘাঁটিতে হামলা চালাতে পাকিস্তান থেকে কৌশলে ভারি অস্ত্র পাঠানো হবে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের কোস্টগার্ড-নৌবাহিনীর সদস্যরা সাগরপথে ব্যাপক তৎপর থাকায় সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের এই সিদ্ধান্ত ভেস্তে যায়। সৌদি আরবে অবস্থানকারী নেতা ও বাংলাদেশে ঘাপটি মেরে থাকা এনআইডিধারী কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতার পরামর্শে বাংলাদেশের সরকারী সংস্থার অস্ত্র লুট করার সিদ্ধান্ত হয়। আরএসও ক্যাডারদের দিয়ে আক্রমণ করা হয় টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা শিবিরের আনসার ব্যারাকে। ভারি অস্ত্র নিয়ে আরএসও জঙ্গীরা হামলে পড়ে আনসার ব্যারাকে। অস্ত্র ভান্ডারের চাবি না দেয়ায় হত্যা করা হয় আনসার কমান্ডার আলী হোসেনকে। লুট করা হয় আনসারের ১৬টি অস্ত্র ও সাড়ে তিন হাজার গুলি। লুণ্ঠিত অস্ত্র মিয়ানমারে আল-ইয়াকিনের কাছে পাঠাতে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু এলাকার পাহাড়ে মাটির ভেতর। পরে অবশ্য উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প এলাকা থেকে নুরুল আলম নামে এক আরএসও ক্যাডারকে গ্রেফতারের পর র‌্যাব সদস্যরা ওই পাহাড় থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার করেছিল।

বর্তমানে আরসার সক্রিয় নেতা ও সদস্য ৫ হাজারের বেশি। কিন্তু তাদের সহযোগী সদস্য সংখ্যা লক্ষাধিক। সক্রিয় ক্যাডাররা মিয়ানমারের গহীন অরণ্যে ৪টি ঘাঁটি করে ও মিয়ানমার অভ্যন্তরে অবস্থিত কোনার পাড়া ক্যাম্পে অবস্থান করছে। সহযোগী সদ্যরা বাংলাদেশের আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে রয়েছে। তারা সবসময় আরসা নেতার অনুগত হয়ে খুনখারাবি করছে আশ্রয় ক্যাম্পে। মিয়ানমারেও রোহিঙ্গা অধ্যুষিত প্রতিটি গ্রামে তাদের ক্যাডার ছিল। ২০১৭ সালের পর তাদের কার্যক্রম কোনারপাড়া ও আশ্রয় ক্যাম্প কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে।

২০১২ সালের জুলাই মাসে উইকিলিকসের ফাঁস করা এক তথ্য অনযায়ী, মিয়ানমারের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের তার বার্তায় বলা হয়, আরএসওর সঙ্গে আল-কায়েদাসহ আরও কয়েকটি জঙ্গী গোষ্ঠীর যোগাযোগ রয়েছে। নিজেদের পরিকল্পনা পূরণের জন্য কৌশলপত্র নির্ধারণ, মানচিত্র পতাকা তৈরিসহ সংবিধানও রয়েছে তাদের। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবি, হিযবুত তাহরীর, হিযবুত তাওহীদ এবং পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই- তৈয়্যবা, হরকাতুল জিহাদ, জয়ইশ-ই মোহাম্মদ, মিয়ানমারের বিদ্রোহী জঙ্গী রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), আরাকান মুভমেন্ট, আরাকান পিপলস ফ্রিডম পার্টি, আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এআরএনও), আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন নামের বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের কর্মীরা বর্তমানে আরসার সঙ্গে রয়েছে। সুত্র: জনকণ্ঠ

পাঠকের মতামত

চকরিয়ায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের হট্টগোল

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের মধ্যে হট্টগোল হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল ...