টেকনাফ প্রতিনিধি :
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের স্থল অংশ শাহপরদ্বীপ রক্ষা বাধঁ জোড়া লাগায় এলাকায় আনন্দের জোয়ার চলেছে । এটির ফলে দীর্ঘ ৫ বছর বিছিন্ন থাকা টেকনাফ- শাহপরীদ্বীপ সড়কটিও পুন:সংযোগ হবে। বাধঁ নির্মাণ কাজে একনেক ( জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ) বেশ কয়েক বছর আগে ১০৬ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি প্রকল্প পাস করে। বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে এটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে। চলতি বছর প্রাথমিক ভাবে বেড়ি বাধঁ দিয়ে ক্যানেলটি বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। আগামী অর্থ বছরের মধ্যে ব্লক দিয়ে আড়াই কিলোমিটার দির্ঘ্য বাধটির পুরো কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডেও কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর সরকার এই ভাঙ্গা বেড়ীবাঁধ পুর্ননির্মান করার জন্য ১০৬ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়। শাহপরীরদ্বীপ ৬৮ নং ফোল্ডারের ২.৬৫ কি.মি দির্ঘ্য, প্রায় ১৫ ফুট উচ্চতায় ৬ মিটার প্রশস্থ বাধঁটির স্লোব হবে ৬০/৭০ ফুট। এখানে দেওয়া হবে জিও ব্যাগও ব্লক।
এবং সেই কাজের সঠিক বাস্তবায়ন করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর হাতে। নৌ বাহিনী দেশের অন্যতম ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসএস ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কন্সট্রাকশন লিমিটেঢের সহায়তায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
সেই সুত্র ধরে নৌ-বাহিনীর সদস্যরা কাজের প্রথম সফলতা হিসাবে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক একই সাথে নিয়োগ করে ভাঙ্গা বেড়ীবাঁধের সেই বিশাল অংশটি জোড়া লাগাতে সক্ষম হয়েছে। ২৮ জানুয়ারী সকাল থেকে বেশ কয়েক ঘন্টার মধ্যে শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিম পাড়া এলাকার ভাঙ্গা বাঁধটি জোড়া লাগাতে সক্ষম হয় সংশ্লিষ্ঠরা।
এরপর থেকে টেকনাফের বিভিন্ন ইউনিয়ন, সাবরাং ইউনিয়ন তথা শাহপরীরদ্বীপের হাজার হাজার জনতা ভাঙ্গা বেড়ীবাঁধের জোড়া লাগানোর দৃশ্যটি দেখার জন্য ভিড় জমায়।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী মো: রুহুল আমিন গতকাল (২ ফেব্রুয়ারি ) শুক্রবার সরেজমিন পরিদর্শণ শেষে দৈনিক আজাদীকে বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে একটি বড় ক্যানেল তৈরী হয়ে যায়। এটি বন্ধ করাটা ছিলো বড় চ্যালেঞ্জ। আজ ওই চ্যানেলটি উপর দাড়িঁয়ে আছি। সত্যিই এটি আনন্দের। বাংলাদেশ নৌ বাহিনী, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশনার আলোকে কাজ করেছে। এলাকাবাসীর দির্র্ঘ্য দিনের প্রত্যাশা ছিলো এটি বন্ধ করতে হবে। সেই লক্ষ্যে এলাকার লোকজন নি:স্বার্থভাবে সহযোগিতা করেছেন তাই প্রাথমিক সফলতা এসেছে। এখন দ্রুতগতিতে ব্লক বিছানো, জিও ব্যাগ দেওয়াসহ বাকী কাজ গুলো করতে হবে। তিনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে এমনটি আশাপ্রকাশ করে বলেন, এটির ফলে হাজার হাজার একর লবন জমি আবারো চাষাবাদেও আওতায় চলে আসবে। অর্থনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটবে। টেকনাফ-শাহপরীরদ্বীপ সড়কটি দ্রুত পুন: স্থাপিত হবে।
নৌ বাহিনীর সহযোগি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসএস ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কন্সট্্রাকশন লিমিটেঢ’র চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন আহমদ বলেন, এলাকাবাসীর সহযোগিতা, সংশ্লিষ্ঠদের আন্তরিতার জলন্ত প্রমাণ এটি। যে ভাবে হাজার হাজার মানুষ সহযোতিকা করে তাদের দির্ঘ্য দিনের দূভোর্গ লাগবে এগিয়ে আসতে পারে তা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করার নই। তিনি গোটা কাজটি দ্রুত সময়ে এগিয়ে নিতে স্থানীয়দের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহবান জানান।
সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান ও টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন বলেন, শাহপরীরদ্বীপ, সাবরাং টেকনাফে আজ খুশি আর আনন্দ। দীর্ঘ ৫ বছর পর এলাকার বড় একটি সমস্যা সমাধান হতে চলেছে। বেশ কয়েক বছর ধরে শাহপরদ্বীপের পশ্চিম পাড়া এলাকা বেড়ীবাঁধের বিশাল একটি অংশ বঙ্গোপসাগরের পানির তোড়ে সাগরে বিলিন হয়ে যায় শত শত বাড়ী ঘর,রাস্তাঘাট,ফসলি জমিসহ কয়েক হাজার একর লবনের মাঠ। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে দ্বীপের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ চলাচল করত নৌকা দিয়ে,বসবাস করত পানির সাথে যুদ্ধ করে। আজ সে যুদ্ধ শেষ হতে চলেছে। এ কাজের জন্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ এলাকার জনগণ। আগামীতে এলাকার জনগণ এ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে হ্যাট্রিক প্রধানমন্ত্রী বানাবে এমন দাবী করেন তিনি।
কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ৫/৬ বছর ধরে শাপপরীরদ্বীপের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত, চাষবাস নিয়ে কষ্ট পেয়েছে। এবার তার লাঘব হয়েছে আওয়ামীলীগ সরকারের উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত হয়ে। এ কাজে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকার পাশাপাশি বিাভিন্ন সময় এলাকার দুঃখ দুর্দশার চিত্রতুলে গণমাধ্যমকর্মীরাও। এরফলে সারাবিশ্ববাসীর চোখে পড়ে দ্বীপে বসবাসরত সাধারন মানুষের চলাচলের চিত্র। এলাকাবাসীর দাবীর প্রতি গণমাধ্যমের যে ভূমিকা তাও কৃতজ্ঞ চিত্তে স্বরণ করতে হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি এলাকাবাসীর কৃতজ্ঞতার কথা আজীবন মনে থাকবেও জানান।
দ্বীপবাসীদের দীর্ঘ কয়েক বছরের দুঃখ-দুর্দশার কি ভাবে অবসান হচ্ছে সেই চিত্রটি নিজ চোঁখে দেখার জন্য শাহপরীরদ্বীপ ভাঙ্গা বাঁধ জোড়া লাগানোর অংশটি ইতিমধ্যে পরিদর্শন করেন স্থানীয় এমপি আব্দুর রহমান বদি, কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: রুহুল আমিন, উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম, নিবার্হী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান কর্মকর্তা, এসএস ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কন্সট্্রাকশন লিমিটেঢ’র চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন আহমদ, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, ইউএনও জাহিদ হেসেন সিদ্দিক, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেনসহ দলবত নির্বিশেষে শত শত জনতা,রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।