প্রকাশিত: ২০/০১/২০২২ ১০:২৪ এএম
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘঠিত গণহত্যা মামলায় আগামী ২১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের প্রধান বিচার বিভাগীয় সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আদালত বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মিয়ানমারের প্রাথমিক আপত্তির ওপর এই শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

তবে বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে হাইব্রিড ফর্মেটে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আদালতের কিছু সদস্য গ্রেট হল অফ জাস্টিসে উপস্থিত থেকে এবং বাকিরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

মামলার দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা সরাসরি অথবা ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করবেন।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা বন্ধ বা দোষীদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গাম্বিয়া ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নের শিকার হয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। মিয়ানমারে সামরিক দমন-পীড়নের ফলে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা প্রবেশ করে। জাতিসংঘ যাকে ‘গণহত্যার অভিপ্রায়’ বলে অভিহিত করেছে।

মামলায় প্রাথমিক শুনানির পর আইসিজে তাদের দাবিগুলো যথেষ্ঠ শক্তিশালী বলে মনে করে এবং রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মিয়ানমারকে নির্দেশ দেয়।

২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলায় ৫০০-পৃষ্ঠারও বেশি একটি স্মারক দাখিল করে। যেখানে দেখানো হয় কীভাবে তৎকালীন মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে।

স্মারকটিতে গাম্বিয়ার মামলার সমর্থনে ৫ হাজার পৃষ্ঠারও বেশি সহায়ক উপাদান সংযোজন করা হয়।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এ নৃশংসতাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে গত বছরের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া। গত বছরের ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর মামলার শুনানি হয়।

১০ ডিসেম্বর গাম্বিয়ার প্রতিনিধিদল আদালতে গণহত্যার বিষয়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করে। শুনানিতে গাম্বিয়ার পক্ষে মামলার প্রতিনিধিত্ব করেন দেশটির বিচারমন্ত্রী আবু বাকার তাম্বাদু। ১১ ডিসেম্বর মিয়ানমারের নেতৃত্ব দেন মিয়ানমারের সরকারপ্রধান অং সান সু চি। সেখানে তিনি তার দেশের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন। ১২ ডিসেম্বর মামলার শুনানি শেষ হয়।

শুনানিতে মামলাকারী গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে ছয়টি বিষয়ে আদেশ চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল- গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমার অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবে; মিলিটারি, প্যারামিলিটারি ও বেসামরিক অস্ত্রধারী ব্যক্তি যেন কোনো ধরনের গণহত্যা না চালাতে পারে, সে ব্যবস্থা নেয়া; গণহত্যা সংক্রান্ত কোনো ধরনের আলামত নষ্ট না করা এবং বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও বেশি জটিল ও খারাপ করে এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয়া।

পঞ্চম বিষয়টি হল- আদেশের পরে আগামী চার মাসের মধ্যে উভয়পক্ষ তাদের নেয়া পদক্ষেপ আদালতকে অবহিত করবে। মিয়ানমার ও গাম্বিয়া উভয়ে ১৯৪৯ সালে গৃহীত গণহত্যা সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ। এ সনদের বাধ্যবাধকতা পূরণে মিয়ানমারকে বাধ্য করার লক্ষ্যে মামলা করে গাম্বিয়া।

অন্যদিকে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে সু চি দাবি করেছিলেন রাখাইনের পরিস্থিতি সম্পর্কে গাম্বিয়া যে চিত্র আদালতে উপস্থাপন করেছে, তা ‘অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’। দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনার পর আইসিজের ১৭ সদস্যের বিচারক প্যানেল বিষয়টি আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, আইসিজের আদেশ মিয়ানমারের পক্ষে উপেক্ষা করা সহজ নয়। আর নেপিদো আদেশ বাস্তবায়ন না করলেও অন্য পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ পাবে গাম্বিয়া। তারা বলছেন, সব দিক দিয়ে এটি একটি ঐতিহাসিক আদেশ। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টসের কমিশনার রিড ব্রোডি বলেন, বিশ্বের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ আদালত আমাদের সময়ে সংঘটিত সব থেকে ভয়ংকর এক গণনৃশংসতার বিরুদ্ধে আদেশ দিয়েছেন।

এ মামলার প্রকৃতি খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ উঠেছে, তা অত্যন্ত দ্রুততর সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা জরুরি। এ নিয়ে আরও বড় পরিসরে আন্তর্জাতিকভাবে তদন্ত হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, সু চিকে হেগে পাঠিয়ে মিয়ানমার আইসিজের গুরুত্ব স্বীকার করে নিয়েছে। আদালতের বৈধতা অস্বীকার করা এখন তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে উঠবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমার আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ বাস্তবায়ন না করলে গাম্বিয়া মামলাটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থানান্তর করতে পারবে। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদ সিদ্ধান্ত নেবে, মিয়ানমারকে তারা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধ্য করবে কি না। মিয়ানমার আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করলে দায়ী হবে।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার অভিযোগের ব্যাপারে তাম্বাদু বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক বাসিন্দারা সংগঠিত হামলা চালিয়েছে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে; মায়ের কোল থেকে শিশুদের ছিনিয়ে নিয়ে জ্বলন্ত আগুনে ছুড়ে মেরেছে, পুরুষদের ধরে ধরে মেরে ফেলেছে, মেয়েদের ধর্ষণ করেছে এবং সব ধরনের যৌন নির্যাতন করেছে।

১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডা গণহত্যার সঙ্গে তুলনা দিয়ে তিনি বলেন, রুয়ান্ডায় টুটসিদের ওপর যে রকম অপরাধ করা হয়েছিল, এটা সেরকমই করা হয়েছে। ওই গণহত্যার সব বৈশিষ্ট্যই রয়েছে। রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে চিরতরে ধ্বংস করার জন্য এটা মিয়ানমারের সরকারের একটা চেষ্টা।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমার কাউকে ফেরত নেয়নি। আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা করার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন হচ্ছে, সে ব্যাপারে বিশ্বব্যাপীকে কিছু করার জন্য তাগিদ দেয়া।

পাঠকের মতামত

ফেসবুকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য ছড়ানোয় সেনাবাহিনীর হাত ছিল

২০১৭ সালে মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার আগে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য ছড়ানোর জন্য যে কয়েক ...

আশ্রয় নেওয়া বিজিপিদের বিনিময়ে বাংলাদেশি বন্দি মুক্তি দেবে মিয়ানমার

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) সদস্যদের ফেরানোর বদলে দেশটির জান্তা সরকারের কারাগারে থাকা ...

মিয়ানমারের পরবর্তী নির্বাচন দেশব্যাপী নাও হতে পারে: জান্তা প্রধান

মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরলে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারের। তবে সে নির্বাচন ...

এমভি আবদুল্লাহতে বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র বসিয়েছে জলদস্যুরা

সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিজস্ব ...