মিয়ানমার আরকান রাজ্যে সেনা বাহিনীর বর্বরতা থেকে রক্ষা পেতে সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থেমে নেই। ২০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দালালের সহায়তায় টেকনাফে কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে শত শত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে জানা গেছে। এরা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশ্বের এলাকায় অবস্থান নেয়। তবে লেদা ক্যাম্পের পাশ্বে নতুন করে অসংখ্য রোহিঙ্গার ঝুপড়ি ঘর নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ সব রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে টেকনাফ তথা সারা দেশে ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশংকা রয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা।
সদ্য অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার মংডু নাপ্পুরা বুড়া সিকদার পাড়া এলাকার নূরুল আমিন জানান, গত সোমবার রাতে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনসহ ২০ জনের একটি নৌকা হ্নীলা আনোয়ার প্রজেক্ট সংলগ্ন এলাকা দিয়ে আসতে গিয়ে দালাল হ্নীলা আলী খালীর ম্যানেজার সৈয়দ আলমের ছেলে আব্দু জলিল ও পূর্ব লেদার সৈয়দ আলমের ছেলে শফি আলমদের খপ্পরে পড়ে। এ সময় দালালদের দাবীকৃত টাকার মধ্যে অর্ধেক টাকা দিয়ে অন্য টাকা যোগার করতে চলে আসলেও ১৯ জনকে টাকার জন্য আটকে রাখে বলে জানায়। তবে রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত টাকার জন্য আটকে রাখেন বলে জানায়।
আগত নূরুল আমিন টাকা যোগারে লেদা ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানে ঘোরা ফেরা করতে দেখা যায়। এর মতে রাত ও ভোরে অনেক রোহিঙ্গাবাহী নৌকা বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে। অন্যদিকে এখনো নাফনদী অতিক্রম করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বলে জানায় আর্ন্তজাতিক সংস্থা সমূহ।
এদিকে ২০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১১ টার দিকে হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা, নয়াপাড়া ও লেদা এলাকার টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কে দলে দলে রোহিঙ্গারা টাকার জন্য ছুটছে। এ সময় ঢাকা মেট্রো-চ ১৫-২৭০২ নাম্বারের একটি হাইয়েস মাইক্রো গাড়ী থেকে সড়কের পাশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের টাকা বিতরণ করতে করতে চলে যাচেছ।
এ গাড়ীতে অপরিচিত কিছু মৌলভী দেখা গেছে। তবে অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে গাড়ীটি হ্নীলার দিকে চটকে পড়ে। লেদা ক্যাম্পে অবস্থানকারী ও আগত রোহিঙ্গারা সকাল থেকে টাকার আশায় পরিবার পরিজন নিয়ে দলে দলে সড়কের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে অবস্থান নিচেছ বলে জানা গেছে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের মাঝে কারা টাকা বিতরণ করছে কেউ বলতে পারছেনা। স্থানীয়রা জানায়, ভোর ও সকালে অসংখ্য গাড়ী থেকে টাকা বিতরণ করছে বলে রোহিঙ্গারা দলে দলে ছুটছেন।
এছাড়া লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশাপাশি হ্নীলা লেদা এলাকার মীর কাশেম, অলী আহাম্মদ ও দিল মোহাম্মদসহ আশপাশের কিছু ব্যক্তি জমিতে স্থানীয় কতিপয় দালালের সহায়তায় টাকার বিনিময়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ছোট ছোট অসংখ্য ঝুপড়ী ঘর তৈরি করে অবস্থানের সুযোগ করে দিচেছন। তবে রাতেই জমির মালিকদের সাথে আঁতাত করে রোহিঙ্গাদের মাঝে টাকা বিতরণ করা হয় বলে জানা গেছে।
গত রবিবার রাতে জমির মালিক মীর কাশেমের ছেলে আব্দু শুক্কুর নামে এক যুবক এ সব রোহিঙ্গাদের মাঝে টাকা বিতরণ করে। এসময় টাকা বিতরণের খবর ছড়িয়ে পড়লে রোহিঙ্গারা এগিয়ে আসলে তাদের মারধর করে আহত করা হয় বলে জানায় স্থানীয়রা।
অন্যদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনুপ্রবেশকারী ৮৬৮ রোহিঙ্গা পরিবারের মাঝে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। তবে চাল বিতরণে কতিপয় রোহিঙ্গা নেতার কারসাজি রয়েছে বলে ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এনজিও সংস্থা শেড এর প্রোগ্রাম কো-অডিনেটর আব্দুল মন্নান জানান, আর্ন্তজাতিক সংস্থা ওয়াল্ড ফুড প্রোগ্রাম এর সহায়তায় স্থানীয় শেড এর মাধ্যমে লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগত ৮৬৮ রোহিঙ্গা পরিবারের মাঝে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া বুধবার এনজিও সংস্থা সলিডারিটির মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গা পরিবার সমূহের মাঝে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে বলে জানা গেছে।
অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা জানান, মায়ানমারের মংডু উত্তর এলাকার গ্রাম গুলোতে সেদেশের সেনা বাহিনী সব কিছু ছারখার করে ফেলেছে। এদের বর্বতায় অসংখ্য গ্রাম ধ্বংস করা হয়েছে। নেই কোন বাড়ীঘর। সেদেশে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। তবে নাফ নদী অতিক্রম করে তিন ভাগের এক ভাগ রোহিঙ্গা এসেছে। সে দেশে রোহিঙ্গারা কেউ শান্তিতে নেই। সেনা বাহিনীর ভয়ে না খেয়ে, এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে পালিয়ে বেড়াচেছ। কিছু মহিলা বাড়ী থাকলেও সেনার ভয়ে অন্যরা পাহাড় ও ঘেরে লুকিয়ে দিন কাটাচেছ। তাছাড়া পাশের এলাকায় অনাহারে দিন কাটাচেছ। বর্তমানে আশপাশের নতুন নতুন এলাকায় বর্বরতা শুরু করে বলে জানায়।
এদিকে টেকনাফ লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প চেয়ারম্যান ডাঃ দুদু মিয়া জানায়, লেদা ক্যাম্পে ও আশপাশ্বে প্রায় ১৩শ অধিক রোহিঙ্গা পরিবার অবস্থান নিয়েছে। এতে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার মত রোহিঙ্গা হবে। তবে প্রতিদিন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে ঢুকছে। আগত রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে জায়গা না পেয়ে পাশ্বের মালিকানা জমিতে ভাড়া হিসাবে ঘর করে অবস্থান নিচেছ। ক্যাম্পে নতুন রোহিঙ্গাদের এনজিও সংস্থার পক্ষ থেকে তালিকা করে ৮৬৮ পরিবারকে চাল দেওয়া হচেছ।
এর আগে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর পক্ষ থেকে লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প নতুন রোহিঙ্গার চার শত পরিবারের মাঝে প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হয়ে ছিল।