উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২/১১/২০২২ ১২:৩৩ পিএম

মাত্র দুই বছর আগে বালুখালীতে এসে জুয়েলারি দোকান দিয়েছেন ননী গোপাল। আগে তার জুয়েলারি ব্যবসা ছিল চট্টগ্রামে। পরিবার এখনও সেখানেই। চট্টগ্রামের ব্যবসা গুটিয়ে তিনি চলে এসেছেন ক্যাম্পে। কারণ, রোহিঙ্গারা এই এলাকায় আসার পরে তিনি জানতে পেরেছেন, তাদের কাছে অনেক সোনা ও সোনার গয়না আছে। এখানে এসে ননী গোপাল প্রথমে বন্ধকের ব্যবসা শুরু করেন। তার দোকানে মিয়ানমারের স্বর্ণের কিছু অলংকার সাজানো আছে। এসব গয়না তাদের নিজেদের বানানো। কিন্তু সোনা কোথা থেকে পেলেন প্রশ্নে ননী গোপাল আর কোনও কথা বলতে রাজি হননি।

পাশেই রাখাইনদের একটি দোকানে কাজ করছেন ৬ জন কারিগর। এত ক্রেতা কারা, জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘রোহিঙ্গারা কেনেন, সারাই করান।’ এই দোকানি আর কোনও কথা না বলে প্রতিবেদককে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। তবে আরেক দোকানি বলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতরেও কিছু দোকান আগে ছিল। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-এপিবিএন আশ্রয় শিবিরের দায়িত্ব নেওয়ার পর (২০২০ সালের ১ জুন) দোকানগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়। এখন আশ্রয় শিবিরের বাইরে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের কাছে বেশ কিছু জুয়েলারি দোকান রয়েছে। বাংলাদেশিরা এসব পরিচালনা করেন। এখন দোকানিদের আগের সেই রমরমা পরিস্থিতি নেই বিধায় তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।’

কারা কেনে, কে বিক্রি করে

উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্প এলাকায় প্রায় শ’খানেক জুয়েলারি দোকান আছে। এসব দোকানে মিয়ানমারের ভাষায় লেখা, তাদের মতো করেই সাজানো। বাংলা নেই বললেই হয়। একাধিক দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতা আসেন— মিয়ানমারের স্বর্ণালঙ্কার কিনতে। কেননা, সেখানকার সোনার মান ভালো, দামে বাংলাদেশের তুলনায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা কম এবং এদের ডিজাইনেও বেশ ভিন্নতা আছে।

উখিয়ার বালুখালি এলাকার ক্যাম্প-৯ এলাকায় ঢোকার মুখে সারি সারি স্বর্ণের দোকান দেখে খটকা লাগবে। যে শরণার্থীদের দৈনন্দিন ভাত- কাপড়ের জোগান দিয়ে কোনোমতে রাখা হয়, তাদের ক্যাম্পের বাইরে এত স্বর্ণের দোকানের ক্রেতা কারা? বেশিরভাগ দোকানের ডিসপ্লেতে নেই কোনও অলংকার। বিশেষত বাঙালি দোকানে মালিক ও কারিগরকে বসে থাকতে দেখা গেছে কর্মহীন। দোকানিদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে কেউ তেমন কথা বলতে রাজি হন না। পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, রোহিঙ্গারা সোনার গয়না খুব ব্যবহার করে। তাদের গয়না ঠিকঠাক করার জন্যই এত দোকান। যদিও অভিযোগ আছে,— এসব দোকান থেকে রোহিঙ্গারা মাদক বিক্রির টাকা দিয়ে সোনা কেনে। দোকানিদের দাবি, রোহিঙ্গাদের ঘরে খাবার না থাক, অনেক সোনা রয়েছে।

এখানেই কথা হয় দোকানি রহমান (ছদ্মনাম) এর সঙ্গে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যখন চলে আসে, তখন পোটলা ভরে সোনা নিয়ে এসেছে। প্রত্যেকের ঘরে সোনা আছে। তাদের অনেক অলংকার আমরা ভাঙা অবস্থায় পেয়েছি। পালিয়ে আসার সময় ভেঙে গেছে। অনেকে আমাদের কাছে বন্ধক রেখে টাকা নিয়ে সেই টাকা আর ফেরত দিতে পারেনি, এমনও হয়েছে। তবে সেই সংখ্যা কম। অনেকে মনে করেন, রোহিঙ্গাদের কাছে টাকা নাই। বিষয়টা পুরোপুরি সত্য না। বাড়ির তরুণরা একবার না একবার ইয়াবার একটা চালান আনার রিস্ক নেবেই। সেই টাকা তারা যেহেতু ব্যাংকে রাখতে পারে না, তখন সোনা কিনে রাখে। তবে তারা আমাদের দেশি সোনা কেনে না।

চোরাই পথে সোনা আসে

চোরাই পথে যে সোনা এসব এলাকায় আসে, সেটার প্রমাণ আছে। কোনও দোকানি তাদের উৎস জানাতে না চাইলেও মূল ব্যবসাটা করেন রাখাইনরা। আর যারা বাঙালি, তারা কারোর সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলতে চান না। প্রশ্ন করা হলে সেটা শুনেই আর কোনও কথা বলেননি একজনও। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি র‍্যাবের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১৫ এর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল খায়রুল ইসলাম সরকার গণমাধ্যমকে জানান, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশ (মায়ানমার) থেকে পালংখালী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি সোনার চালান ঢুকেছে। খবর পেয়ে র‍্যাবের একটি দল পালংখালীতে বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন করে চালান বহনকারী ব্যক্তিকে আটক করে।

বালুখালী ক্যাম্পের বাইরে সারি সারি স্বর্ণের দোকান নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কাছে এই ধরনের অভিযোগ নেই। যদি এমন কিছু নজরে আসে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।’

ওইসব এলাকায় এপিবিএন দায়িত্বে আছে উল্লেখ করে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহম্মদ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এগুলো খুব ছোট ছোট দোকান, যেখানে হয়তো রোহিঙ্গারা স্বর্ণ বন্ধক দেয়, ঠিকঠাক করে। বাজারে যেরকম জুয়েলারি দোকান থাকে, সেরকম না এগুলো। তারপরেও আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো। সুত্র: বাংলাট্রিবিউন

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা শিবিরে ইফতার যে রকম

আব্দুল কুদ্দুস,প্রথমআলো রোববার বিকেল চারটা। কক্সবাজারের উখিয়ার প্রধান সড়ক থেকে বালুখালী আশ্রয়শিবিরে ঢোকার রাস্তায় দেখা ...

লাইসেন্সের কোন কাজ নেই, টাকা দিলে লাইসেন্স লাগে না!- উখিয়ার ব্যবসায়ী সাদ্দাম

বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই কথিত লেভেল লাগিয়ে অবৈধভাবে ব্যাটারির পানি বিক্রি করেন উখিয়ার সাদ্দাম মটরসের স্বত্তাধিকারী ...