কক্সবাজারেরে উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কেউ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ঘনবসতিপূর্ণ এ স্থানে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর তাই ক্যাম্পে জরুরি সেবা ছাড়া অন্য সব সেবা এরই মধ্যে সীমিত করে এনেছে জাতিসংঘ সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। তবে নভেল করোনাভাইরাসের এ সংকটময় পরিস্থিতিতেও নতুন করে রোহিঙ্গা আগমন অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করছে জাতিসংঘ। সেজন্য এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার মধ্যেও নতুন রোহিঙ্গা আগমন ও ট্রানজিট সেন্টার ব্যবস্থাপনার অগ্রিম প্রস্তুতি রেখেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘসংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, নভেল করোনাভাইরাস সংকটকালে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিচালনা নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করেছে জাতিসংঘ। পরিকল্পনার আওতায় প্রয়োজনীয় ও সংকটপূর্ণ—এ দুই ভাগে সেবা ও কার্যক্রম পরিচালিত হবে। স্বাস্থ্য খাতের কোর গ্রুপের পরামর্শের ভিত্তিতে এ দুই ভাগে সেবা ও কার্যক্রমগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্যাম্পে সীমিত লোকাল ট্রান্সমিশন ও ব্যাপকভাবে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সবার মতামতের ওপর ভিত্তি করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে শুরু হয়েছে প্রয়োজনীয় সেবা হিসেবে চিহ্নিত কার্যক্রমগুলো। কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে ক্যাম্পে ১০ জন নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সেবা অব্যাহত থাকবে। আর সেক্ষেত্রে ১০ জন নিশ্চিত রোগী চিহ্নিত হলে চালু করা হবে সংকটপূর্ণ সেবা ব্যবস্থা। তবে সংক্রমণের এ সংখ্যা আলোচনার মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে পারে বলে পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রয়োজনীয় ও সংকটপূর্ণ সেবা—এ দুই পরিস্থিতিতেই নতুন রোহিঙ্গা আগমন করলে তাদের জন্য নিবন্ধন অব্যাহত রাখবে জাতিসংঘ। তবে এ সময়ে তাদের জন্য মেডিকেল স্ক্রিনিং, আইসোলেশন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা ও সুরক্ষা বার্তা নেয়ার প্রস্তুতি রেখেছে জাতিসংঘ। এছাড়া প্রয়োজনীয় সেবার আওতায় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা, সচেতনতামূলক তথ্য বিতরণ, স্বাস্থ্যবিধি ও স্বাস্থ্য সচেতনতা, পরিবার খুঁজে দেয়ার মতো কাজগুলো অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া খাদ্য বণ্টন, এলপিজি বণ্টন, পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী বিতরণ, মেরামতসামগ্রী বিতরণ, পানি ও পয়োনিষ্কাশন, আরো পানির পয়েন্ট তৈরি, সাইট ব্যবস্থাপনা এবং লজিস্টিক সেবাগুলো অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনীয় সেবা কার্যক্রম চলাকালে শিক্ষা কার্যক্রম, শরণার্থীদের সড়ক নির্মাণ, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, মাল্টিপারপাস সেন্টার ও সমাবেশ বন্ধ থাকবে। তবে কভিড-১৯ সংক্রান্ত সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ ও একক কাউন্সেলিং সুরক্ষা বিধি মেনে করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতিসংঘে কর্মরত এক কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গারা ইমিগ্রেশন দিয়ে বৈধ উপায়ে আসে না। এখন পর্যন্ত তারা অবৈধভাবেই প্রবেশ করেছে। ফলে এ পরিস্থিতির মধ্যেও কেউ যদি আসে, তার জন্য নতুন রোহিঙ্গা আগমনে নিবন্ধন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখছে জাতিসংঘ।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) কাছে আনুষ্ঠানিক ই-মেইলে বক্তব্য চাওয়া হলেও তা প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
সংকটময় সেবা সময়ে কর্মী একেবারে কমিয়ে দেয়া হবে। প্রয়োজনীয় সেবাগুলো মাঠে থাকা স্বেচ্ছাসেবক বা সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে। এ সেবাগুলো দেয়ার সময় যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা দেয়া উচিত। এ সময় রোগীদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা; কভিড-১৯ সংক্রমণ ব্যবস্থাপনা, জরুরি চিকিৎসা, অ্যাম্বুলেন্স ও দ্রুত সাড়া প্রদানকারী দল; পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা; একক কাউন্সেলিং ও প্রয়োজনমতো লজিস্টিক সেবা অব্যাহত থাকবে। আর ভিন্ন উপায়ে খাদ্য বণ্টন, এলপিজি বণ্টন, পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী বিতরণ, জীবাণুমুক্তকরণ স্বাস্থ্যবিধি, স্বাস্থ্যবিধি প্রচারণা ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সচেতনতা, সাইট ম্যানেজমেন্ট এবং চলমান নিবন্ধন ও পরিবারের খোঁজ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
জাতিসংঘ ধারণা করছে, যদি ক্যাম্পে নভেল করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়, তবে ঘনবসতির কারণে তা খুবই দ্রুতগতিতে পুরো ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে চলাচলে সরকারের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে বলেও ধারণা করছে সংস্থাটি। এ বিধিনিষেধ অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত চলতে পারে। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ক্যাম্পে থাকা কর্মীদেরও ঝুঁকি উচ্চমাত্রায় বেড়ে যাবে।
জাতিসংঘের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে নতুন করে আসা উদ্বাস্তুরা সরকারি নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ৮ এপ্রিল পর্যন্ত ৩০ জন নতুন উদ্বাস্তুকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। নতুন আসা উদ্বাস্তুদের সবাইকে ট্রানজিট সেন্টারে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে।