ডেস্ক রিপোর্ট::
ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মিয়ানমার থেকে নতুন করে আবারো বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশংকা দেখা দিয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে কয়েক’শ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে বলে দাবি স্থানীয়দের। তাই নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিহত করতে পাহারায় রয়েছেন সীমান্তের বাসিন্দারা। আর সীমান্ত এলাকার জনগণ নিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিহত করা হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। তবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের শঙ্কায় সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় বিজিবি।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের উখিয়ার আনঞ্জুমান পাড়া। মানুষের কোন আনাগোনা নেই। তাই এই সুযোগে গত কয়েকদিন ধরে এই সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে একদল রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছে। একই অবস্থায় টেকনাফের উলুবনিয়া সীমান্তেও।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের খববে সীমান্ত এলাকার মানুষ সতর্ক হয়ে যায়, মাইকিং করে মসজিদে মসজিদে। স্থানীয়রা পাহারা দেয়া শুরু করে নিজ নিজ এলাকায়। তবে কোন রোহিঙ্গা যদি রাতের আঁধারে ঢুকে পড়ে সেটা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
উখিয়ার থাইংখালী সীমান্তের বাসিন্দা সেজাত মাহামুদ স্বাধীন বলেন, আমরা সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা। তাই আমরা আতংকে আছি। কারণ রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে যদি করোনা ভাইরাস আমাদের হয়ে যায়; তাহলে সীমান্তের এলাকার মানুষদের খুব ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দিবে। এখনও পর্যন্ত কক্সবাজারে কোন করোনা রোগী পাওয়া যায়নি। যদি সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে তাহলে তাদের করোনা রোগী পাওয়া সম্ভাবনা আছে।
পালংখালী বাজার এলাকার বাসিন্দা ফরিদ আহমদ বলেন, করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা ভাইরাস চীন থেকে মিয়ানমার এসেছে। এখন মিয়ানমার থেকে ৩ থেকে ৪’শ লোক যারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে, তাদের মধ্যে করোনা ভাইরাস নেই এমন বলা যাবে না। আর এরা যদি বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে তাহলে আমরা বিরাট বিপর্যয়ের মুখে পড়ব। তাদের মাধ্যমে পুরো কক্সবাজার করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।
আনঞ্জুমান পাড়া সীমান্তের বাসিন্দা আলাউদ্দিন সিকদার বলেন, সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা হিসেবে আতংকের মধ্যে রয়েছি। এরমধ্যে যদি নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে তাহলে আর সমস্যা পড়ে যাব আমরা। তাই এরা আমাদের দেশে ঢুকে পড়ুক এটা চায় না। এখন আমরা সীমান্তের বাসিন্দারা প্রতিরোধ করার জন্য বা ঠেকানো জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।
করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, সীমান্ত এলাকার জনগণকে নিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিহত করা হবে।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এখনো পর্যন্ত সীমান্ত দিয়ে নতুন কোন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে পারেনি। আমরা অদূর ভবিষ্যতেও কোন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আসতে দিব না বলে প্রতিজ্ঞা করেছি। সীমান্তে বিজিবির টহলও জোরদার রয়েছে। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের যে শঙ্কা রয়েছে সেটা জন্য এলাকার জনগণসহ প্রশাসনিকভাবে প্রতিহত করা হবে।
কক্সবাজারস্থ বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে এমন তথ্যটি স্থানীয়দের মাধ্যমে পাওয়া পর সীমান্তে নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে। আর স্থানীয়রা যেসব সীমান্ত পয়েন্ট রোহিঙ্গা জড়ো হয়ে আছে বলেছে, ওইসব সীমান্ত পয়েন্টের শূন্যরেখায় বিজিবি টহল করেছে এবং করছে। এছাড়াও প্রতিটি পয়েন্টে বিজিবির নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
এব্যাপারে কক্সবাজারের রামুস্থ বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মনঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, ‘সীমান্তে অনুপ্রবেশ কখনোই হতে দেয়া হবে না, আর ইলিগ্যাল পুশিং হওয়ারও কথা না। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আমরা সতর্ক আছি, টহল বৃদ্ধি করেছি। এখন পর্যন্ত সব কিছু স্বাভাবিক আছে।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার প্রায় সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।