শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫
রোহিঙ্গার আড়ালে ইয়াবা বাণিজ্য
প্রকাশিত - ডিসেম্বর ১১, ২০১৭ ৮:১৭ এএম

সরওয়ার আলম শাহীন, উখিয়া নিউজ ডটকম::
সামপ্রতিক সময়ে সীমান্ত দিয়ে ব্যাপক হারে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকে কাজে লাগিয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে ইয়াবা বাণিজ্য। দু’দেশের শীর্ষ ইয়াবা গডফাদাররা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকেই মূলত কাজে লাগাচ্ছে। ক্যাম্প ভিত্তিক ইয়াবা বাণিজ্যও চলছে বেপরোয়া গতিতে। ক্যাম্পে বসেই ইয়াবা বাণিজ্য চালানোর অভিযোগ উঠেছে মিয়ানমারের ইয়াবা গডফাদারদের বিরুদ্ধে। সন্ধ্যার পর থেকে রাত বিরাতে ক্যাম্পগুলোতে উখিয়া টেকনাফের চিহ্নিত ইয়াবা গডফাদারদের বিচরণ চোখে পড়ার মতো। এতে ক্যাম্প গডফাদাররাও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
সূত্র মতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আড়ালে ৫শ’র বেশি ইয়াবা ব্যবসায়ী বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। এর বাইরে ইয়াবার ক্যারিয়ার রয়েছে আরো এক হাজারের বেশি। গেল তিন মাসে কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়ায় মাদক পাচারের ৯২টি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৯৫ জন রোহিঙ্গাকে। এ অবস্থায় এসব মাদক ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে ইয়াবার কারখানা তৈরি করে ইয়াবার বিস্তার ঘটাতে পারে বলে শঙ্কা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সমপ্রতি আঞ্জুমান পাড়া সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় রোহিঙ্গাদের দেহ তল্লাশী করতে গিয়ে বিজিবি সদস্যরা উদ্ধার করে ১২শ’ পিস ইয়াবা। আর এতে টনক নড়ে প্রশাসনের। শুরু হয় সাধারণ রোহিঙ্গাদের আড়ালে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সন্ধান। অথচ আগে কোনো তল্লাশি ছাড়াই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এ সুযোগে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কক্সবাজার উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, ‘যেহেতু প্রচুর লোকজন আসছে, এটা আমাদের জন্য ঝুঁকির ব্যাপার। কক্সবাজার টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক জানান, ‘আমরা আনুমানিক ২০০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীকে শনাক্ত করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের আড়ালে এক হাজারের বেশি ইয়াবা ক্যারিয়ার বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। যারা মূলত আগে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছে পুনরায় মিয়ানমারে ফিরে যেত। এছাড়া চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছে অন্তত ৫শ’। যারা বর্তমানে অনেকটা গোপনে আশ্রয় শিবিরগুলোতে অবস্থান করছে। কক্সবাজার টেকনাফ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শেখ আশরাফুজ্জামান জানান, ‘এই রোহিঙ্গাদের সুযোগ নিয়ে অনেক মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার কাজ করাতে পারে।’ এদিকে রোহিঙ্গাদের আড়ালে ঢুকে পড়া ইয়াবা ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে ইয়াবার বিস্তারে আরো বেশি ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী-বিজিবি। এতদিন পর্যন্ত মিয়ানামার সীমান্তে গড়ে উঠা কারখানা থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার হতো। কিন্তু এসব ইয়াবা ব্যবসায়ী বাংলাদেশে চলে আসায় বাংলাদেশে ইয়াবা কারখানা গড়ে উঠার শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। ৩৪ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমেদ জানান, ‘বাংলাদেশে এসে তারা বসে থাকবে না, তারা যে কোনোভাবে ব্যবসাকে আরো বেশি ত্বরান্বিত করবে।’ এর আগে বিগত ২০১৬ সালে ৭০টি মামলায় ১৩৯ জন এবং ২০১৫ সালে ৮৬টি মামলায় ২৯০ জন রোহিঙ্গাকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়া দিয়ে পাচারের পর চট্টগ্রামকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে এসব ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
Copyright © 2025 UkhiyaNews.Com. All rights reserved.